কারাগার হোক সংশোধনের জায়গা

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:৫৭

আরিফুর রহমান

কারাগারে সাধারণ কয়েদিরা সকালে রুটি ও আখের গুড় দিয়ে নাশতা করেন। এই ধারা চলে আসছে ১৫৫ বছর ধরে। ঔপনিবেশিক শাসকরা ১৮৬৪ সালে ‘বাঙাল’ অপরাধীদের শায়েস্তার জন্য যে বেঙ্গল কারাবিধি প্রণয়ন করেছিল, সেটি অনুসরণ করা হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশে ৪৭ বছর ধরে।

দেশের কারাগারগুলোতে কয়েদিদের সকালের নাশতায় কিছু পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে কারা প্রশাসন। সপ্তাহের দুই দিন খিচুড়ি, চার দিন রুটি-সবজি ও এক দিন রুটি-হালুয়া পরিবেশনের সুপারিশ করা হয়েছে।

আমরা এই সুপারিশকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। বেঙ্গল কারাবিধি যখন প্রণয়ন করে ব্রিটিশ শাসকরা, তখন তাদের লক্ষ্য ছিল ঔপনিবেশিক শাসন নির্বিঘœ করা। কারাগারে কয়েদি-হাজতিদের কঠোরতর শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিশ্চিত করা। দ- পাওয়া ব্যক্তিদের সংশোধনের কথা ভাবেনি তারা।

কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা কারাগারকে কেবল শাস্তির জন্য নয়, অপরাধীকে সংশোধনের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলছে। কয়েদিরা যাতে সাজা ভোগ শেষে নতুন মানুষ ও একজন কর্মী হিসেবে বেরিয়ে আসতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে কারাগারে। ‘অপরাধী নয় অপরাধকে ঘৃণা করা’র আপ্তবাক্য গুরুত্ব পাচ্ছে এখন।

বাংলাদেশ এখন আর কারও উপনিবেশ নয়, কারও পদানতও নয়। স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক কারাগারে কেন খাদ্যের মতো একটা মানবিক বিষয়ে অবহেলার শিকার হবেন।

একজন মানুষের মনন ও চিন্তা সহজ রাখার জন্য খাদ্য এক বড় ভূমিকা পালন করে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। শারীরিক নির্যাতন একজন মানুষকে আরও বেশি দ্রোহী করে ভেতরে ভেতরে। কারাগারে আটক থাকাই একজন মানুষের জন্য বড় শাস্তি, তার ওপর তাকে নি¤œমানের ও ন্যূনতম পরিমাণ খাবার দিয়ে কষ্ট দেয়া কোনো সুবিচার হতে পারে না।

দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দিদের জন্য যে বরাদ্দ থাকে, তা দেশের বাজারদরের তুলনায় হাস্যকর। তার ওপর সেখান থেকে তছরুপের খবর আসে গণমাধ্যমে। এ ছাড়া আরও নানা অনিয়মের কথা আমরা শুনি যা একজন মানুষের শারীরিক-মানসিক সুস্থতার পক্ষে যায় না।

আমরা মনে করি, বন্দিদের খাবার উন্নত করার যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা শিগগির বাস্তবায়ন হবে। একই সঙ্গে দূর করতে হবে বরাদ্দ তছরুপ ও অন্যান্য অনিয়ম। এ ছাড়া কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে কারারক্ষী ও অন্য কর্মকর্তাদের মানবিক আচরণ আমরা প্রত্যাশা করি।

সবচেয়ে জরুরি, স্বাধীন দেশের উপযোগী এবং অপরাধীদের সংশোধনের লক্ষ্য সামনে রেখে কারা আইন তৈরি করতে হবে সরকারকে।