সর্ব-ইউরোপিয়ান আ.লীগে দ্বন্দ্ব

কমরেড খোন্দকার, ইতালি
 | প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:২৩

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশা নিয়ে ২০০১ সালে সর্ব-ইউরোপিয়ান আ.লীগ গঠন করছিলেন তার সে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন সংগঠনের নেতারা। দলের সভাপতি অনিল দাশ গুপ্ত ও সাধারণ সম্পাদক এম এ গনির ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে সংগঠনটির কার্যক্রম নেই বললেই চলে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সফরের সময় তাদের বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়। বাকি সময়টা তাদের খুঁজেও পান না বলে অভিযোগ বিভিন্ন দেশের নেতাকর্মীদের।

সংগঠনটি এখন এক নেতার দলে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত কয়েকবারের ইউরোপ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চে শুধু সভাপতি অনিল দাশ গুপ্তকে দেখা গেছে। বাকিদের মঞ্চে জাগয়া হয়নি, এমনকি সর্ব-ইউরোপিয়ান আ’লীগের নেতা হিসাবে তাদেরকে পরিচয় করেও দেয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর সুইডেন সফরে তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনিল দাশ গুপ্তেরও মঞ্চে জায়গা হয়নি। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক এম এ গণি, সহ-সভাপতি বাকীউল্লাহ বাকি, লোকমান হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম হক, নজরুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক হাসনাত মিয়া, প্রচার সম্পাদক খোকন শরীফ, মহিলা সম্পাদিকা হোসনে আরা নামমাত্র পদে রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর জার্মান সফরকে কেন্দ্র করে ইউরোপের প্রতিটি দেশের নেতাকর্মীরা মিউনিকে যাচ্ছেন। ইউরোপে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে উপযুক্ত নির্দেশনার অপেক্ষায় বারবার হোঁচট খাওয়া ত্যাগী নেতারা এবার আশার বাণী শুনতে চান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা আশা করছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগে বিভক্তি, কোন্দল, গ্রুপিং এবং একাধিক কমিটির কারণে সংগঠনটি কোথাও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগের একাধিক কমিটির জন্যও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সর্ব-ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছেন। কোন্দল-গ্রুপিং মেটাতে তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ইউরোপে আওয়ামী লীগের শক্তি বৃদ্ধি নয়, বরং দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কোনো সম্মেলন না হওয়ায় দলীয় কোন্দল-গ্রুপিং বাড়ছে।

ডেনমার্ক: ডেনমার্ক আ.লীগে রয়েছে তিনটি গ্রুপ। মোস্তফা মজুমদার বাচ্চুকে সভাপতি ও মাহবুবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে এক গ্রুপ; অন্যদিকে সম্মেলনের মাধ্যমে মো. লিংকন মোল্যা সভাপতি ও সাব্বির আহম্মেদ সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ডেনমার্কে আওয়ামী লীগের আরো একটি কমিটি আছে- সর্ব-ইউরোপিয়ান আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ গনি সমর্থিত ইকবাল-বিদ্যুৎ বড়ুয়ার কমিটি।

ফ্রান্স: ফ্রান্স ইউরোপে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কয়েক লাখ প্রবাসী অধ্যুষিত দেশটিতে সর্ব শেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেনজির আহমেদ সেলিমকে সভাপতি এবং মহসিন উদ্দিন খান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করেন। ফ্রান্স আ’লীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর ক’দিন যেতে না যেতেই দলের মধ্যে আবার গ্রুপিং শুরু হয়। বর্তমানে ফ্রান্স আ’লীগে কার্যক্রম বেশ কিছুদিন যাবত থমকে রয়েছে।

ইতালি: ইতালিতে ২০১২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে অনেক নাটকীয়তায় ইদ্রিস ফরাজী সভাপতি এবং হাসান ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বিশাল কমিটি ঘোষণা করা হলেও প্রধান প্রধান কয়েকটি পদ ছাড়া অন্য পদে কে বা কারা রয়েছেন আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারেননি। ইতালিতে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকলেও ভেতরে ভেতরে কয়েকটি গ্রুপ আছে। তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে ঢাকাটাইমসের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলেন, সভাপতি বর্তমানে স্থায়ীভাবে দেশে বসবাস করছেন। শুধু প্রধানমন্ত্রী ইউরোপে এলেনই তাকে দেখা যায়।

বেলজিয়াম: বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী রতন। এদিকে অন্য একটি কমিটিতে সভাপতি বজলুর রাশিদ বুলু ও সাধারণ সম্পাদক পলিন মনির থাকলেও সে কমিটির কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

হল্যান্ড: সর্ব-ইউরোপিয়ান আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ গনি শাহাদত হোসেন তপনকে সভাপতি ও মুরাদ খাঁনকে সাধারণ সম্পাদক করে হল্যান্ড আওয়ামী লীগের একটি কমিটি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে অন্য একটি কমিটিতে সভাপতি মুহিত ফারুক (অব্যাহতি প্রাপ্ত) ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামান।

পর্তুগাল: পর্তুগাল সরকার কর্তৃক রেজিস্টিকৃত পর্তুগাল আ.লীগের সভাপতি আবুল বাশার বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। অন্য একটি কমিটিতে পর্তুগাল আ’লীগের জহিরুল ইসলাম জসিম সভাপতি এবং শওকত ওসমান সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন।

জার্মান: সর্ব ইউরোপিয়ান আ.লীগের সভাপতি অনিল দাশ গুপ্ত জার্মানে বসবাস করেন। আর সেই জার্মানেই রয়েছে আ.লীগের দুই গ্রুপ। এক গ্রুপে সভাপতি এ কে এম বশিরুল আলম চৌধুরী সাবু, সাধারণ সম্পাদক শেখ বাদল আহমেদ। অন্যদিকে, জাহিদুল ইসলাম পুলক আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক মাহফুজ ফারুক।

সুইডেন: সুইডেন আ’লীগের সভাপতি এ এইচ এম জাহাঙ্গীর কবির ও সাধারণ সম্পাদক ড. ফরহাদ আলী খান।

সুইজারল্যান্ড: সুইজারল্যান্ড আ’লীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান।

স্পেন: স্পেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাকিল পান্না ও সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম নয়ন থাকার পরেও সর্ব-ইউরোপিয়ান আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ গনির নেতৃত্বে স্পেন আওয়ামী লীগের দুলাল সাফা ও রিজভী আলমকে দিয়ে সম্মেলন করতে গেলে নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে সম্মেলন বানচাল হয়ে যায়। পরে দুলাল সাফা সভাপতি ও রিজভী আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়।

এদিকে স্পেন আ’লীগের অন্য আরো একটি কমিটি রয়েছে বলে জানা যায়।

আয়ারল্যান্ড: আয়ারল্যান্ডেও আ.লীগের রয়েছে তিনটি গ্রুপ। এক গ্রুপে সভাপতি রফিক খান ও সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল্লাহ সিকদার।

অন্য গ্রুপে কিবরিয়া হায়দার ও বিল্লাল হোসেন। এছাড়া ইকবাল আহম্মেদ লিটন ও জসিম উদ্দীনের নেতৃত্বে রয়েছে আর একটি গ্রুপ।

নরওয়ে: নরওয়ে আ.লীগের এক গ্রুপে রয়েছে সৈয়দ ইফতেখার টিটু (সভাপতি), বিদ্যুৎ কার্ল (সাধারণ সম্পাদক) ও মিরাজ হোসেন (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক)।

অন্য গ্রুপে নুরুল আমিন (সভাপতি) ও মফিজুর রহমান (সাধারণ সম্পাদক)। সম্প্রতি এক মন্ত্রী নরওয়ে সফরে গেলে তাকে কে আগে ফুল দিয়ে বরণ করবে তা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়, যা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।

গ্রিস: গ্রিসে আ.লীগের মান্নান মাতুব্বর সভাপতি ও বাবুল হাওলাদার সাধারণ সম্পাদক থাকার পরেও সর্ব-ইউরোপিয়ান আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ গনি সম্মেলনের মাধ্যমে রাকিব মৃধাকে সভাপতি এবং মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষণা করে।

অস্ট্রিয়া: অস্ট্রিয়া আ.লীগের এক গ্রুপের সভাপতি নাসিম ও সম্পাদক সাইফুল কবির। অন্য গ্রুপে সভাপতি শাহ মোহাম্মদ ফরহাদ ও সম্পাদক আহমেদ ফিরোজ।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগের কয়েক লাখ সমর্থক থাকলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মোটামুটি সব দেশেই কমবেশি সমস্যা রয়েছে। ইউরোপে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা বন্ধ করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে প্রচারণা বন্ধ করাসহ সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না সর্ব-ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও সর্ব-ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ এসব বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে তেমন কোনো কাজে আসেনি।

সর্ব-ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম হক বলেন, বিভিন্ন দেশে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দলের মধ্যে একাধিক গ্রুপ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে দলের প্রয়োজনেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ ব্যাপারে জার্মানে সর্ব ইউরোপিয়ান আ.লীগের সভাপতি অনিল দাশ গুপ্ত এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সর্ব ইউরোপিয়ান আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ গনিকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

প্রবাসের খবর এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :