ঢাবিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলে বিরল সৌহার্দ্য

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:২৬ | প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:০৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রায় ১০ বছর পর মধুর ক্যান্টিনে এসে মধুর সময় কাটাল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। প্রায় দুই ঘণ্টার অবস্থানে তারা সরকার সমর্থক ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলেন, একে অন্যকে আপ্যায়ন করেন। সেখানে আড্ডা শেষে ক্যাম্পাস চত্বরেও একসঙ্গে সময় কাটান।

১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এরশাদ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক সরকারের আমলে এই দৃশ্য বিরল। আর এই বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পাস এবং রাজনৈতিক অঙ্গণে দেখা দিয়েছে স্বস্তির হাওয়া।

প্রায় তিন দশক আটকে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনে আগামী ১০ মার্চ ভোট হতে যাচ্ছে। তফসিলের সমালোচনা করা ছাত্রদলের বেশ কিছু দাবি রয়েছে যা ছাত্রলীগের পছন্দের নয়। তবে এই নির্বাচনের কারণেই সম্প্রতি তারা ক্যাম্পাসে নিশ্চিন্তে মিছিল করতে পেরেছে। একাধিকবার এসে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকেও অংশ নিয়েছে।

এরশাদ সরকারের পতনের পর দেখা গেছে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রদলের আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রলীগের একাধিপত্য থাকে ক্যাম্পাসে। হলে থাকতে পারে না বিরোধী ছাত্র সংগঠন, ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য রাজনীতিতেও পায় নানা বাধা।

গত ১০ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতাকাঠামোর বাইরে থাকায় ছাত্রদলও ক্যাম্পাসে বেকায়দায়। নানা সময় তাদের ওপর হামলা হয়েছে। আর এ কারণে ক্যাম্পাসে যাওয়াও অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছিল ছাত্র সংগঠনটি। তবে ডাকসু নির্বাচনের দামামা বাজার পর সম্প্রতি তারা নির্বিঘ্নে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে।

বুধবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তাকদার এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকির নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতকর্মীরা মধুর ক্যান্টিনে আসেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান।

এসময় সেখানে ছাত্রলীগ ও বাম জোটের নেতারাও ক্যান্টিনে ছিলেন। তবে বাইরে দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতেও দেখা গেছে।

ছাত্রদলের দুই নেতা মধুর ক্যান্টিনে ঢুকেই আগে থেকে সেখানে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সাদ্দাম তাদের বসার চেয়ার দেখিয়ে দেন। ক্যান্টিনে অন্য টেবিলে বসা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি তুহিন কান্তি দাসের সঙ্গেও করমর্দন করেন ছাত্রদলের দুই নেতা। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান।

তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে রাজীব আহসান বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন হবে, এটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি, ইতিবাচক চিন্তা করছি এবং ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই।’

‘সাথে সাথে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূরণ করবে, সে বিষয়ে আমরা আন্তরিক ও আত্মবিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি, তারা অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের দাবিগুলো আন্তরিকভাবে মেনে নেবে।’

রাজীব বলেন, ‘আমরা ১০ বছর পর বিশ^বিদ্যালয়ে এসেছি। তাই ক্যাম্পাস এবং হলে আমাদের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন ও অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। ন্যূনতম তিনমাস সহাবস্থানের পরে ডাকসুর নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হলেই ভোটগ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে।’

‘আমরা ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে নিয়ে আসার দাবিতে আমরা এখনো অটল আছি। সামগ্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার পর পুনরায় তফসিল ঘোষণা করতে হবে।’

এসময় ডাকসু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নির্মাণে নির্বাচন তিন মাস পিছিয়ে দেওয়া, হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করাসহ সাত দফা দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে সহাবস্থানের স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নিতে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান ছাত্রদল সভাপতি।

ছাত্রদল পুনঃতফশিলে দাবি জানালেও, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলে আসছে, তফসিল পেছানো বা গঠনতন্ত্র সংশোধনের কোনো সুযোগ এখন আর নেই। ২৮ বছর পর ডাকসু ও হল সংসদগুলোর নির্বাচনের আয়োজনও ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। আগামী ১১ মার্চ ভোটের তারিখও ঠিক করা হয়েছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার শেষ সময় ২ মার্চ; যাচাইবাছাই শেষে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ৩ মার্চ। আর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৫ মার্চ প্রকাশ করা হবে।

প্রার্থী ঠিক করার বিষয়ে এক প্রশ্নে রাজীব আহসান বলেন, ‘ভোটার তালিকায় আমাদের যারা অন্তর্ভুক্ত আছে এবং রাজনৈতিকভাবে আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি। আমরা পুনঃতফসিল দাবি করছি এখনো। তারপর আমাদের প্রার্থী তালিকা বা অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করব।’

শর্ত দিয়ে স্বাগত জানাল ছাত্রলীগ

দীর্ঘ দিন পর ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে স্বাগত জানালেও তাদের নেতৃত্ব সাধারণ ছাত্রদের হাতে তুলে দেওয়ার শর্ত দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।

ছাত্রদলের নেতাদের পাশে রেখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল আজকে মধুর ক্যান্টিনে এসেছে, তাদেরকে আমি স্বাগত জানাই। একটা কথাই বলব, আপনারা নামে ছাত্রদল, কিন্তু কাজেকর্মে ছাত্রদের সঙ্গে আপনাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দীর্ঘ দিন ধরে আপনাদের সম্মেলন হয় না। আপনারা সম্মেলন করে সাধারণ ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেন। তা না হলে আপনারা গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না এবং সাধারণ ছাত্ররা আপনাদের বয়কট করবে।’

‘ছাত্রদল এতোদিন মধুতে না এসে আমাদের দোষারোপ করেছে। কিন্তু তারা আজকে এসে বুঝতে পারল, আমরা কারও বাধা না, আমরা আমাদের নিজেদের রাজনীতি করি, যার যার রাজনীতি সে সে করবে। ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, ডাকসু নির্বাচন করতে হবে।’

এদিকে ছাত্রদলের পুনঃতফসিলের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি সবার সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত হয়েছে৷ এখন তফসিল পেছানো বা গঠনতন্ত্র সংশোধনের আর কোনো সুযোগ নাই।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থক সংগঠন ছাত্রলীগের দাপটে ছাত্রদল কোনঠাসা হয়ে পড়ে। পরের বছরের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ে। ওই বছর ২১ জুন মধুর ক্যান্টিনে যাওয়ার চেষ্টা করে ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। এরপর একবার মিছিল করার চেষ্টা করলেও পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। সবশেষ ২০১৭ সালের অগাস্টে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ডাকা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিতে মধুর ক্যান্টিনে আসার পথে ছাত্রলীগের ধাওয়ায় ফিরে যেতে হয়েছিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের।

ছাত্রদলের সাত দাবি

সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা, ন্যূনতম আগামী তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক রাজনীতি নিশ্চিত করা, তিন মাস নির্বাচন পেছানো, হলে ভোটগ্রহণের পরিবর্তে এ্যাকাডেমিক ভবনে ভোটগ্রহণ, ভোটার হওয়ার উপযুক্ত ঢাবির সব পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীর ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা, নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় সংগঠনের সাবেক নেতাদের অংশগ্রহণে সুযোগ দেয়া, গ্রেফতার ও হয়রানি না করা, সাধারণ নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি পুনর্গঠন করা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :