পোড়াদহের জামাই-বউ মেলায় লাখো মানুষের ঢল

এনাম আহমেদ, বগুড়া
 | প্রকাশিত : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৩

বগুড়ার গাবতলীতে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা শুরু হয়েছে। দুই দিনের এ মেলার প্রথমদিন গতকাল ‘জামাইমেলা’য় নেমেছে লাখো মানুষের ঢল। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার পাশের এলাকায় বসবে বউমেলা।

প্রায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে গাবতলী উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবার এ মেলা বসে। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের যেসব মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে, তারা জামাই নিয়ে বাপের বাড়িতে আসেন বলে ‘জামাইমেলা’ হিসাবেও পরিচিত এটি। আবার মেলায় বড় বড় হরেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যাওয়ায় কেউ কেউ একে ‘মাছের মেলা’ বলে ডাকেন। আর পরে সংযোজিত দ্বিতীয় দিনের মেলাকে ‘বউমেলা’ বলা হয়। তবে পোড়াদহে বসে বলে দুই দিনের মেলাটি মূলত ‘পোড়াদহ মেলা’ নামেই সবার কাছে পরিচিত।

মেলার মূল আকর্ষণ বিশাল আকারের বাগাড় মাছ। এবার সর্বোচ্চ ৮০ কেজি (দুই মণ) ওজনের বাঘাইড় মাছ উঠেছে, যার দাম হাঁকা হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার টাকা। আরেকটি আকর্ষণ সর্বোচ্চ দশ কেজি ওজনের মিষ্টি। মাছ-মিষ্টির দোকানগুলোতে এলাকার জামাই-বউসহ আশপাশের হাজারো মানুষের ভিড়। মেলার কাঠ, স্টিল ও লোহার বিভিন্ন আসবাবপত্র, কসমেটিকস, খেলনা, চুড়ি, কানের দুল, মালাসহ নানা ধরনের প্রসাধনীর দোকানেও মেয়েদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

এলাকার প্রবীণরা জানান, দূর-দূরান্ত থেকেও মেলা দেখতে লোকজন আসেন। ৪০০ বছর আগে সন্ন্যাসীরা এখানে অবস্থান নিয়ে সন্ন্যাসী পূজা শুরু করায় কালক্রমে ওই পূজা ঘিরে মেলাটির পত্তন ঘটে। ধীরে ধীরে এই মেলা সব ধর্মের মানুষকে উৎসবে একত্রিত করে সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। এখনো সন্ন্যাসী পূজাটি চালু থাকলেও সব ধর্মের হাজার হাজার মানুষ মেলায় এসে উপস্থিত হয়।

মেলার ঐতিহ্য বিশাল বিশাল মাছের মধ্যে বরাবরের মতো এবারও মূল আকর্ষণ সর্বোচ্চ ৮০ কেজি ওজনের বাগাড়। এরপরেই ৭০ কেজি ওজনের জীবিত বাগাড় মাছ উঠেছে।

৭০ কেজির মাছটির মালিক গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ী মধ্যপাড়াগ্রামের ব্যবসায়ী মো. বিফল বলেন, ‘মেলার আগের রাতে মাছটি যমুনায় ধরতে পেরেছি। তাই জ্যান্ত অবস্থায় মেলায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। এটি ভাগ্যের ব্যাপার।’

এক হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা মছিটির দাম হেঁকেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কয়েকজন মিলে কিনলে বিক্রি করবেন। না হলে কেটে ভাগে বেচে দেবেন বলেই জানান এই জেলে।

রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালবাউস, পাঙ্গাসসহ মেলায় ওঠানো অন্য বড় মাছ নিয়ে যেতেও দেখা গেছে দর্শনার্থীদের।

মাছের পরেই ভিড় মেলার মিষ্টির দোকানগুলোতে। ছোটবড় সব ধরনের মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে দেদার।

এলাকার জামাই আব্দুল হাই জানান, প্রতি বছর এই মেলার জন্য শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াত দেওয়া হয় তাকে। অনেকটা ঈদের মতো আনন্দ হয়, তাই তিনি দিনটির জন্য অপেক্ষা করেন। তিনি তার ছোট শ্যালিকার জন্য কিছু মিষ্টি আর বউয়ের কিছু প্রসাধনী কিনেছেন। সকাল সকাল তার শ্বশুর বড় আকারের রুই মাছ মেলা থেকে নিয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি।

মেলার ইজারাদার ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, এবারের মেলায় ক্রেতা- দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ও বিক্রি বেশি। মেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক, এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :