আবর্জনার নিচে চাপা পড়ছে যে শহর

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:১০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

পৃথিবীর বহু দেশ প্লাস্টিক বর্জ্য অন্যকে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছে। কিন্তু ব্যতিক্রম মালয়েশিয়া। এটিই এখন পৃথিবীর অন্যতম বড় প্লাস্টিক-বর্জ্য-আমদানীকারক দেশ।

কিন্তু এসব বর্জ্যের খেসারত দিচ্ছে মালয়েশিয়ার ছোট্ট শহর জেনজারোম। ১৭ হাজার টন প্লাস্টিকের জঞ্জালের নিচে চাপা পড়ে শহরটি এখন ধুঁকে-ধুঁকে মরছে। গত গ্রীষ্ম থেকে জীবনটা নরক হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জেনজারোমের বাসিন্দা ড্যানিয়েল টেয়।

ড্যানিয়েল জানান, দরজা, জানালা সব কিছু বন্ধ করে রাখলেও প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারেন না শহরের বাসিন্দারা। মধ্যরাতের পর কটু ঝাঁঝালো গন্ধ আসে। রাবার পোড়ার গন্ধে চারিদিকে মানুষ কাশতে থাকে। অবৈধ প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানাগুলোতে গোপনে চলে অব্যবহৃত প্লাস্টিক পোড়ানোর কাজ। এ কারণেই মানুষ আরও বেশি বিড়ম্বনায় পড়ে।

২০১৭ সালে চীন প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে। কিন্তু এই সুযোগে বর্জ্য-বাণিজ্যের পুরোটা নিজেরা নিয়ন্ত্রণে নিতে এগিয়ে আসে মালয়েশিয়া। মাত্র এক বছরেই সাত মিলিয়ন অর্থাৎ ৭০ লাখ টন বর্জ্য নিজের দেশে আমদানি করে মালয়েশিয়া।

২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যেই ছাড়িয়ে যায় এর আগের বছরের হিসেব। সাত মাসেই দেশটিতে প্রবেশ করে ৭৫ লাখ ৪শ টন প্লাস্টিক। বিপুল পরিমাণ এই বর্জ্য শিল্পের অর্থনৈতিক মূল্য ৭৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বর্জ্যের অর্থমূল্য যেমন ব্যাপক, তেমনি জেনজারোমের বাসিন্দারা যে খেসারত দিচ্ছেন সেটিও বেশ ব্যাপক।

সবধরনের প্লাস্টিক পুনরায় প্রক্রিয়াজত করা যায় না। যেসব প্লাস্টিক পুনরায় প্রক্রিয়াজত করা যায় না তা সঠিকভাবে ধ্বংস করতে গেলে অনেক অর্থ খরচ হয়। একারণে কারাখানা মালিকেরা মধ্যরাতে এগুলো পুড়িয়ে ফেলে। এর ফলে জেনজারোমের বাসিন্দাদের টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়ে।

জেনজারোমের আরেক বাসিন্দা নগো কিউই হং জানান, প্লাস্টিক পোড়ার গন্ধে কাশতে কাশতে তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। এছাড়া দুর্গন্ধের কারণে রাতের পর রাত ঘুমাতে পারেন না তারা।

বেরে টান নামের এক নারী জানান, এমন পরিবেশে থাকার কারণে তার ১১ বছর বয়সি ছেলের জীবন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তার হাত-পা, গলা, পেটসহ শরীরে বিভিন্ন অংশে প্রথমে র‍্যাশ বা লাল-লাল ফুসকুড়ি উঠেছে। তারপর সেগুলো থেকে চামড়া খুলে পড়েছে। হাত দিয়ে স্পর্শ করলে সে ব্যাথা পায়।

মূলত বায়ু দূষণের কারণেই শিশুটির এই দশা বলে জানা যাচ্ছে। দুষিত বায়ু গ্রহণ করতে-করতে শিশুটির পুরো রেসপিরেটরি সিস্টেম বা শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ার উপরেই প্রভাব পড়েছে।

পোড়া প্লাস্টিকের ধোঁয়ায় এমন উপাদান আছে যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কেমিকেল ও বায়ো-মলিকিউলার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক টং ইয়িনে ওয়াহ।

জেনজারোমে ইতোমধ্যেই ৩৩টি অবৈধ কারখানাকে নিষিদ্ধ করেছে মালয়েশিয়ার সরকার। ফলে, এখন প্লাস্টিক পোড়ানোর ধোঁয়া থেকে কিছুটা রেহাই পেয়েছে এই শহর। কিন্তু গজিয়ে উঠা অস্থায়ী এসব বন্ধ কারখানার ১৭ হাজার টন প্লাস্টিক এখনো উন্মুক্ত পড়ে আছে যত্রতত্র।

এর চেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে, এক জায়গা থেকে প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত করলে আবার অন্যখানে গিয়ে আস্তানা গাঁড়ে। বেশি করে অর্থ দেয় বলে কারখানা খোলার জন্য এই বর্জ্য-ব্যবসায়ীদের জায়গা পেতেও ঝামেলা হয় না।

জিনজোরামের ভয়াল চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে যে, প্লাস্টিক বর্জ্য পুন:প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষেত্রে একটা বড় রকমের গলদ রয়ে গেছে। তার ওপরে যেসব প্লাস্টিক আমদানি করা হচ্ছে সেগুলোর কতখানি ভালো প্লাস্টিক আর কতটুকু দূষিত সেই হিসেব নেই। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, প্লাস্টিক বর্জ্যের মান নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরী। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা টাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/একে