‘ভালোবাসা’ পালিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:২৮ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আজ `সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বজড়ে পালিত হচ্ছে এ দিবসটি। বর্তমানে ভালবাসা বলতে প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমকেই বোঝানো হলেও এ ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির দিনও এটি।

শুধু তরুণ-তরুণী শুধু নয়, আজ সব বয়সের মানুষের ভালোবাসা প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিন।

দিবসটি উপলক্ষে মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল, ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকে। আবার কেউবা চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, উপহার, বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দিয়েছেন।

তবে ‘শুধু একটি দিন ভালোবাসার জন্য কেন? এ নিয়ে অনেকের মধ্যে আছে আলোচনা সমালোচনা।

এ প্রশ্নে কবি নির্মলেন্দ গুণ বলেন, ‘ভালোবাসা একটি বিশেষ ৭ দিনের জন্য নয়। সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার। তবে আজকের এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছে মানুষ।’

দিনটিকে ঘিরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ঢাকাসহ সারাদেশেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, বইমেলা চত্বর থেকে শুরু করে এর আশেপাশের এলাকায় থাকছে দিনভর নানা অনুষ্ঠান। সকালে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য র‌্যালি, সূচনা সঙ্গীত, ভালোবাসার স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, ভালোবাসার চিঠি পাঠ এবং ভালোবাসার দাবিনামা উপস্থাপনসহ আরও নানা কর্মসূচি।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় ভালোবাসার কনসার্ট।

বর্তমানে পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে, এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।

যেভাবে এলো ভালোবাসা দিবস:

ঠিক কবে কখন ভালোবাসার দিন আলাদা করে হয়ে উঠেছিল সেই ইতিহাস নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে বহুল প্রচলিত গল্প রোমান যাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে। তার আত্মত্যাগের নানা কাহিনী ঘিরেই নির্ধারিত হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিন।

বলা হয়ে থাকে, ধর্মযাজক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন খ্রিস্টধর্ম প্রচারক, অন্যদিকে তৎকালীন সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। সম্রাটের পক্ষ থেকে ভ্যালেন্টাইনকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় ২৭০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

তবে অন্য একটি দল দাবি করে, স্নেহময় যাজক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন কারাবন্দি হলে তরুণ-তরুণীরা তাকে ফুল নিয়ে দেখতে আসতো। সে সময় এসেছিল কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েও। সেই মেয়ে সেইন্টের ক্ষমতাবলে দৃষ্টি ফিরে পায়। তখন তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ঠেকাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন সম্রাট ক্লডিয়াস।

আরেক ইতিহাস দাবি করে, সেনাবাহিনীতে লোক সংকট হলে তরুণ-তরুণীর বিয়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সম্রাট ক্লডিয়াস। যাতে অবিবাহিত তরুণেরা সৈনিক হতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সম্রাটের এই নির্দেশ প্রথম অমান্য করেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজক। তিনি ভালোবেসে মার্সিয়া নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন এবং নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অন্যদের বিয়ে দেন। আদেশ অমান্যের জন্য ভালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তার স্মরণেই ভালোবাসা দিবস পালিত হয়ে আসছে। এটিই সবচেয়ে প্রচারিত সংজ্ঞা।

দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থাকে, যদিও অধিকাংশ দেশেই দিনটি ছুটির দিন নয়।

বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস

বাংলাদেশে এ দিবসটি প্রবর্তন করেন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত সাংবাদিক শফিক রেহমান। ১৯৯৩ সালে যায়যায় দিন পত্রিকায় আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম বিষয়টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে সেই লিওপারসালিয়া বা ফেব্রুয়ালিয়া অথ বা ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বাংলাদেশি সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার অফিসের সামনে একটি সড়কের নামকরণও করেন ‘লাভ লেন’।

বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণায় একমাত্র তিনিই সরব ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’। এখন বাংলাদেশে এ দিবস পালিত হয় ব্যাপক পরিসরে, নানা আয়োজনে।

ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/ওআর