সু চি-কে হারাতে একাট্টা বিরোধী দলগুলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৪৮ | প্রকাশিত : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৪৫

মিয়ানমারে আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটিতে নতুন রাজনৈতিক জোটের আবির্ভাব হয়েছে। নতুন জোট ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) পুনরায় সংখ্যাগিষ্ঠতা অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠতে পারে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে।

রাখাইনসহ বিভিন্ন এলাকায় জাতিগত সংঘর্ষ ও অর্থনৈতিক মন্থর গতির জন্য সু চির রাজনৈতিক অবস্থান এখন দুর্বল। এ জন্য সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতাদের দোষারোপ করা হয়। নভেম্বরের উপনির্বাচনে দলটি ১৩টি আসনের মধ্যে মাত্র সাতটি আসনে জয়লাভ করে। বাকি আসনগুলোতে জয় পায় সেনা সমর্থিত দল ও আঞ্চলিক দলের প্রার্থীরা বাকিগুলোতে জয়লাভ করেছিলেন।

জনসমর্থনের এই অবস্থা নিয়ে এনএলডির অনেক শীর্ষ নেতারাও আতঙ্কিত। নতুন দলগুলোর কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক সমীকরণে আগেরবারের মতো সহজেই জয়ী হওয়ার আশা করা যাবে না বলেও মন্তব্য করছেন তারা।

নভেম্বরের নির্বাচনে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের কাচিন প্রদেশে একটি আসন হারায় ক্ষমতাসীন দল। সেখানকার এনএলডির আইনপ্রণেতা দাশি লা সেং বলেন, ‘জাতিগত বিভিন্ন দলগুলো এখন একে অপরের সঙ্গে জোট গঠন করছে এবং তারা প্রস্তুত। আমরা এখন শুধু দলের ক্ষমতার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারছি না। জনগণের বিশ্বাস অর্জনে আমাদের আগের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করা উচিত।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ভবিষ্যৎ সংকটাপন্ন। ২০১৫ সালে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে ক্ষমতায় আসে এনএলডি। পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকার পরেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সু চির দল। এনএলডি আশা করছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে তারা অন্যান্য দলগুলোর চেয়ে ভালো ফল করবে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেতে তাদের বেশ সমস্যা হবে।

২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের পর দেশটির প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বাসিন্দা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সু চির অবস্থান দেশে-বিদেশে তুমুল সমালোচনার জন্ম দেয়।

তাগুং ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের বিশ্লেষক ইয়ে মিয়ো হেইন বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে পর্যাপ্ত আসন পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদি তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তাহলে অন্য দলের সঙ্গে জোট গঠন করে ক্ষমতায় আসতে হবে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রাজনৈতি দাবি বুঝতে ব্যর্থ হওয়া ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য নোবেলজয়ী এই নেত্রীর তীব্র সমালোচনা করছেন তার দলেরই জাতিগত নেতারা। অর্থনৈতিক সংস্কারে ধীরগতির জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ জানাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

মিয়ানমারের এই ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অবশ্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইয়াংগুনের একটি মুসলিম স্কুলে হাজির হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে তার ও সরকারের অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

বিদেশি বিনিয়োগ এনে তরুণদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে একটি সম্মেলনও করেছেন তিনি। সেনাবাহিনীর প্রভাব কমানোর লক্ষ্য তার দল এনএলডি সম্প্রতি পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনায় একটি কমিটিও করেছে। সু চির দলের জন্য যারা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে তাদের মধ্যে ইউনিয়ন বেটারমেন্ট পার্টি অন্যতম।

সেনাঘনিষ্ঠ ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাবেক প্রধান শ মান এ দলটি গড়ে তুলেছেন।

মিয়ানমারের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সাবেক স্পিকার মান ২০১৫ সালে জান্তাঘনিষ্ঠ দলটি থেকে পদচ্যুত হয়েছিলেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে সু চির মিত্রতা দেখা গেলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার ইউনিয়ন বেটারমেন্ট পার্টি ক্ষমতাসীনদের অন্যতম বড় সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

এনএলডির অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হাজির হতে পারে কো কো গির পিপলস পার্টিও। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে হওয়া ছাত্রবিক্ষোভের অন্যতম নেতা কো কো অন্যান্য জাতিগত দলের সঙ্গে জোট গড়ে তোলারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এককভাবে না জিততে পারলেও পার্লামেন্টে জোট হিসেবে থাকতে পারি। সেখানে আমরা একসঙ্গে থাকবো, এবং আমাদের ভোট যেন দ্বিধাবিভক্ত না হয় সেজন্য চেষ্টা চালাব।’

২০১৫ সালের নির্বাচনে রাখাইনে ভালো ফল করা আরাকান ন্যাশনাল পার্টিও ক্ষমতাসীনদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো না দেওয়ায় এ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও তুমুল ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।

রাখাইনে সমানাধিকার ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান থাজিন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও অং থান বলেন, ‘আমরা, বিভিন্ন জাতির মানুষ, আমরা দেখেছি আমাদেরকে তারা কেমন মূল্য দেয়। ২০২০ এর মতো এবার আর নিরঙ্কুশ বিজয় পাচ্ছে না তারা।’

(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/এসআই)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

গাজায় আরও ৭১ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি 

ফেসবুকে রোহিঙ্গাবিদ্বেষ ছড়ানোর নেপথ্যে ছিল মিয়ানমারের জান্তা: জাতিসংঘ

রাফাহতে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী: নেতানিয়াহু

নির্বাচন করার জন্য অর্থ নেই, সরে দাড়ালেন ভারতীয় অর্থমন্ত্রী

সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮

দ. আফ্রিকায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল শিশু

দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার পর বালিচাপা দিলো ইসরায়েলি সেনারা 

গাজায় যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আইসিসির প্রতি আহ্বান

কলকাতা বিমানবন্দরে চলল গুলি, নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে হুমকি পেলেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :