কেন্দ্রীয় ব্যাংকেই অনৈতিকতার চর্চা

সরষের ভূত তাড়াতে হবে

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:০৭ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:০৮

আরিফুর রহমান

দেশের বৈদেশিক সম্পদ ও অর্থব্যবস্থার হৃৎপি- বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এর ম্যাধমে। এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটা নেতিবাচক প্রবণতা দাঁড়িয়েছে- শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকে অবসরে গিয়ে বেসরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। এর প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় ওই সব প্রতিষ্ঠানকে নানা অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন।

আবার এই কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেও তারা যেহেতু এখানে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন, ওই প্রভাব কাজে লাগিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিতে চেষ্টা করেন।

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকির দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এই অনৈতিক অনুশীলনের কারণে এর তদারকির কাজটি কার্যকরভাবে না হওয়াই স্বাভাবিক। তাতে অনিয়ম-দুর্নীতি বাড়ে, এবং সেটাই হচ্ছে।

এমনই খবর মঙ্গলবারের দৈনিক ঢাকা টাইমসে প্রকাশিত হয়। এ যেন ‘আগারটা খেয়ে তলারটাও কুড়ানো’র বেসবুর অবস্থা। যথেষ্ট লাভজনক ও সম্মাজনক পদে থাকা ওই কর্মকর্তারা চক্ষু লজ্জাও খেয়ে বসেন তখন। অবসরের পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে তারা আগের কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করে ফায়দা নিতে তৎপর হন।

এমন নৈতিকতার অবক্ষয়দুষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে যেকোনো দুর্নীতি সংঘটনের আশঙ্কা থাকে। একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগও জমা পড়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা টাইমসে আরও একটি খবর ছাপা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের অনিয়ম নিয়ে। কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে পুলিশ ভেরিফিকেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা যাচাই ছাড়া। বোঝা যাচ্ছে, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়েও যথেষ্ট উদাসীন কর্তৃপক্ষ। রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরি যাওয়ার পরও ঔদাসীন্য কাটেনি তাদের।

এসব দেখে-শুনে ব্যাংকব্যবস্থা ও মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা যাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা, তাদের দ্বারা যদি নিজেরাই নিয়ন্ত্রিত হন তাহলে কীভাবে হবে! এ যে সরষের মধ্যে ভূত! 

অর্থনীতিবিদরা আইন করে এটি বন্ধের পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাদের অবসরের পরপর এ ধরনের তুঘলকি কারবার স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি করে। এটি ঠেকাতে অবসরের তিন বছরের মধ্যে কোনো কর্মকর্তার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগদানে বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে তারা।

আমরা মনে করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রক বডির কর্মকর্তাদের চাকরিবিধি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে সরকারকে। প্রয়োজনে বিধিমালা সংশোধন করে নতুন আইন তৈরি করা হোক, যাতে কেউ স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করার মতো কোনো সুযোগ না পান। এবং অবশ্যই যেন সবার জবাবদিহি নিশ্চিত হয় সেটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।