জামায়াত ছাড়লেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৩২ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

দলের আমীর মকবুল আহমদকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে তিনি জামায়াতকে এই পরামর্শ দেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দলটির ভূমিকাকেই তুলে ধরেছেন তিনি।

পদত্যাগপত্রে আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেছেন যাতে একাত্তরের ভূমিকার কারণে দলটি জাতির কাছ ক্ষমা চায়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পাঁচদিন পর দেশ ছাড়েন আবদুর রাজ্জাক। তার বিদেশ যাত্রার পর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়া মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হলেও আর দেশে ফেরেননি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের রক্ষায় আইনি লড়াই করা দলটির প্রধান এই আইনজীবী।

২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশ ঘুরে এখন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা এই জামায়াত নেতার দেশে ফেরা নিয়ে ছিল শঙ্কা। পরিবারের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হয়েছিল দেশে ফিরলে দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গ্রেপ্তার হতে পারেন তিনিও। এজন্য জামায়াতের অনেক নেতা তাকে বিদেশে থাকার পরামর্শও দিয়েছিলেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি হওয়ার পর আবদুর রাজ্জাককে জামায়াতের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে ধরা হতো। দলের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনিই মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু দেশে না ফিরে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন জামায়াতের এই নেতা।

এসেক্সের বারকিং থেকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন যে তিনি ওই ইস্যুতে জামায়াতকে বিলুপ্ত করে দেয়ারও প্রস্তাব করেছিলেন দলীয় ফোরামে।

পদত্যাগপত্রে জামায়াত নেতা আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক দল গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু সে দাবি অনুযায়ী জামায়াত নিজেকে এখন পর্যন্ত সংস্কার করতে পারেনি।

‘স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আজও দলের নেতৃবৃন্দ ৭১-এর ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে পারেনি। এমনকি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রসঙ্গে দলের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেনি।’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতের ক্ষতিকর ভূমিকা সম্পর্কে ভুল স্বীকার করে জাতির সঙ্গে সে সময়ের নেতাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে পরিষ্কার অবস্থান নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।’

১৯৮৬ সালে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া রাজ্জাক পদত্যাগপত্রে বলেন, গত প্রায় দুই দশক তিনি জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে ৭১-এ দলের ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত এবং ওই সময়ে জামায়াতের ভূমিকা ও পাকিস্তান সমর্থনের কারণ উল্লেখ করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

তাঁর মতে, জামায়াত ৬০-এর দশকে সব সংগ্রামে যেমন অংশ নিয়েছে, তেমনি ৮০-র দশকে আট দল, সাত দল ও পাঁচ দলের সাথে যুগপৎভাবে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে।

পদত্যাগপত্রে রাজ্জাক বলেন, ‘কিন্তু দলটির এসব অসামান্য অবদান ৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভুল রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে স্বীকৃতি পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা পরবর্তীকালে জামায়াতের সব সাফল্য ও অর্জন ম্লান করে দিয়েছে।’

তিনি জানান, ২০০১ সালে জামায়াতের সে সময়ের আমির এবং সেক্রেটারি জেনারেল মন্ত্রী হওয়ার পর বিজয় দিবসের আগেই ১৯৭১ নিয়ে বক্তব্য দেয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন একটি কমিটি এবং বক্তব্যের খসড়াও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি।’

এছাড়া ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকেও তিনি প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন এবং ২০০৭-০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়েও তিনি জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বলে পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন।

ঢাকাটাইমস/১৫ফেব্রুয়ারি/ওআর/এমআর