বুড়িগঙ্গায় অভিযান

তিন ধাপে দেড় হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:১৪

কাজী রফিক

 

বুড়িগঙ্গা নদী উদ্ধারে পরিচালিত অভিযানে উচ্ছেদ হয়েছে দেড় হাজার স্থাপনা। তিন ধাপে মোট নয় দিনব্যাপী পরিচালিত অভিযানে নদীর উপকূলীয় ভূমি ও আদি চ্যানেল কামরাঙ্গীরচর খাল উদ্ধার হয়েছে। 

তবে এখনো দখলে রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদী ও কামরাঙ্গীচর খালের অনেকটাই। দখলকৃত জায়গা উদ্ধারে চতুর্থ ধাপেও অভিযান পরিচালনা করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন জানিয়েছেন, তিন ধাপে দেড় হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। চতুর্থ ধাপে বুড়িগঙ্গা নদীর বসিলা, ওয়াসপুর অংশে অভিযান চালানো হবে আগামী ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। 

বৃহস্পতিবার অভিযান চলে পশ্চিম হাজারীবাগের ঝাউচর এলাকায়। তৃতীয় পর্যায়ের শেষদিনে ছোটবড় মিলিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৯টি অবৈধ স্থাপনা। এর মধ্যে রয়েছে একটি চারতলা ভবন, দুইটি তিনতলা, আটটি দোতলা, তিনটি একতলা ভবন, ২৫টি আধাপাকা স্থাপনা ও ২০টি টংঘর। 

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কথিত ভবন মালিক রাজউক ও বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন ছাড়াই স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোট জমির বাইরেও নদীর জায়গা দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। 

উচ্ছেদ হওয়া ৩৪৬ নম্বর বাড়িটির কথিত মালিক হাজী শুকুরউল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘২০০৬ সালে বাড়ি বানাইছি। রাজউকের অনুমতি নিইনি। আমরা তো জানি না যে, অনুমতি নেওয়া লাগে।’

একই কথা জানিয়েছেন ৩৩৬ নম্বর বাড়ির মালিক আব্দুস সেলিম। বলেন, ‘অনুমতি নিইনি। এইটা আমার ভুল হইছে।’

জানা গেছে, আব্দুস সেলিম দুই কাঠা জমির মালিক। তবে নদীর জায়গার আরও দুই কাঠা যোগ করে মোট চার কাঠা জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। 
বাড়ি মালিকদের খামখেয়ালিতে বিপাকে পড়তে হয়েছে অনেক ভাড়াটিয়াকে। আউয়াল কাজীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন নবম শ্রেণির ছাত্রী ইমু ও তার পরিবার। ইমু বলেন, ‘আমরা খবরে উচ্ছেদের কথা শুনছি। আজ (গতকাল) আমাদের এদিকে উচ্ছেদ হবে বুঝে আমরা গতকাল (বুধবার) রাতে মালামাল বের করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাড়িওয়ালা বের করতে দেননি।’

একইভাবে সমস্যায় পড়েন এসএসসি পরীক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস। বাংলাদেশ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের এই ছাত্রী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভাঙার কারণে পানির লাইন, বিদ্যুৎ সব বন্ধ। এখন আমি পড়াশোনা করব কীভাবে? আশাপাশে আমার কোনো আত্মীয়ের বাড়িও নেই। বাড়িওয়ালা আগে আমাদের জানালে আমরা অন্য জায়গায় চলে যেতাম। কিন্তু জানাননি।’
৩৩৬ নম্বর বাসার আরও দুই শিক্ষার্থী একই কারণে সমস্যার মুখোমুখি। চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া ইয়াসিন ও দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া আব্দুর রহমানে বই-খাতা ভবন ভাঙার সময় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। শিশু দুটির বাবা-মা অভিযানের সময় বাসায় না থাকায় ঘরের কোনো মালামালও রক্ষা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বাড়ি মালিককেই দোষারোপ করছেন বাড়িটির ভাড়াটিয়া ও প্রতিবেশীরা।

গত ২৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অভিযানের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে উচ্ছেদ করা হয়েছে এক হাজার ১৯৯টি অবৈধ স্থাপনা। এরপর তৃতীয় ধাপে উচ্ছেদ করা হয় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দখলদারদের কব্জায় থাকা কামরাঙ্গীচর খাল। খালের মালিকানা জেলা প্রশাসকের হওয়ায় বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে উচ্ছেদ অভিযানে যোগ দেয় জেলা প্রশাসন। এ পর্যায়ে দুই দিনে উচ্ছেদ করা হয় খালের প্রায় তিন একর জায়গা। 

বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের অভিযান শেষ হলো। তবে চতুর্থ ধাপে আবারও বুড়িগঙ্গা নদী ও বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে।