স্থানান্তরিত অধিকাংশ রোগী ফিরেছে সোহরাওয়ার্দীতে

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৬ | আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:১৪

সিরাজুম সালেকিন, ঢাকাটাইমস

অগ্নিকাণ্ডের  ঘটনার ধাক্কা সামলে আবার স্বাভাবিক হচ্ছে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। বাড়ছে রোগীর ভিড়। আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে সাড়ে আট শর মতো রোগী। তাদের বেশির ভাগ এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন আগুন লাগার আগে।  

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা অপারেশন ও সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে আপাতত বন্ধ রয়েছে শিশু ওয়ার্ড ও সার্জারি বিভাগের কাজ। আগুনের ঘটনার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

আইসিইউসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের কার্যক্রম শুরু করতে কয়েক দিন লেগে যাবে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর যেসব ওয়ার্ড পুড়ে গেছে সেখানে কার্যক্রম শুরু হতে বেশ কিছু দিন সময় লাগবে।

আগুনের ঘটনার পর হাসপাতালের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছে। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে শুক্রবার নিজ বাসভবনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক সাংবাদিকদের জানান, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে হাসপাতালে।

যেসব রোগী ঢাকা মেডিকেল, পঙ্গু হাসপাতাল, মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল তারা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ফিরে আসছেন।  ইতিমধ্যে বেশির ভাগ রোগী এখানে এসে উঠেছেন। তাদের সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. পি কে সাহা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা এখন সেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত। গতরাত (বৃহস্পতিবার) আগুন নেভার পর থেকে ছোট পরিসরে রোগীদের সেবা দিচ্ছি। তবে শুক্রবার সকাল থেকে সব ধরনের সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা হাসপাতালে আসছেন। রোগীর চাপও বাড়তে শুরু করেছে।’

জরুরি অপারেশনের জন্য তারা প্রস্তুত আছেন জানিয়ে ডা. পি কে সাহা বলেন, ‘যেসব রোগীর আগে অপারেশনের সিরিয়াল ছিল তাদের অপারেশন দ্রুতই শুরু করা হবে।’

পুড়ে যাওয়া ওয়ার্ডের সংস্কারকাজ কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে চাইলে পি কে সাহা বলেন, ‘এগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। এই কাজের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। যেসব রোগী হাসপাতালে আসছে তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হচ্ছে। এক-দুইটা ওয়ার্ডের রোগীদের কিছুদিন একটু কষ্ট করতে হবে।’

হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার পেয়িং পুরুষ ওয়ার্ডে বারান্দায় শুয়ে আছেন নুর মোহাম্মদ। তিনি ব্রেন স্ট্রোকের রোগী। সাত দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আবার ফিরে এসেছেন সোহরাওয়ার্দীতে। নুর মোহাম্মদের মতো অনেক রোগী বিভিন্ন জায়গায় সন্তোষজনক সেবা না পেয়ে এই হাসপাতালে ফিরছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতাল জুড়ে এখনো পোড়া গন্ধ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার পুড়ে যাওয়া ওয়ার্ড ও কেবিনগুলো বন্ধ রয়েছে। চারদিকে আগুনে পোড়ার কালো দাগ। ফ্লোরে পানি জমে আছে। ওয়ার্ডগুলো তালাবদ্ধ। এখানে রোগীর উপস্থিতি কম বলে পরিবেশ অনেকটা সুনসান নীরবতা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ড থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভায়।

আগুন নিভে যাওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের পরিচালক উত্তম কুমার জানান, আগুন লাগার আধা ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব ও স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় ১১৫০ রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। আর আইসিইউতে থাকা ১০ জনকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল ও অন্য হাসপাতালে।

সিনিয়র নার্স বিউটি রানী হালদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট শ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের প্রায় সবাই আগের ভর্তি রোগী। আগুনের ঘটনার পর যারা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়াও আত্মীয়স্বজনের বাসায় উঠেছিলেন, তারা আবার হাসপাতালে ফিরছেন। তবে আইসিউ পুরোপুরি সচল না থাকায় সেখানে কোনো রোগী আসেনি।’

আগুনের ঘটনার পর ওষুধ ও অক্সিজেন সেবা স্বাভাবিক আছে কি না জানতে চাইলে বিউটি রানী বলেন, ‘সবকিছু তো আর আগুনে পোড়েনি। অন্য ওয়ার্ডের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ দিয়ে এখন কাজ চলছে।’

(ঢাকাটাইমস/১৫ফেব্রুয়ারি/মোআ)