ভেনেজুয়েলার স্বর্ণ বাণিজ্যের অন্ধকার দিক

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাদের মুদ্রার দাম পড়ে গেছে আর সেই জায়গা দখল করেছে স্বর্ণ৷ বর্তমানে তাই ৩ লাখ মানুষ খনিসমৃদ্ধ এলাকায় নিজেদের ভাগ্য অনুসন্ধান করছেন৷ ভেনেজুয়েলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ‘২০১৬ সাল থেকে খনি শ্রমিকদের কাছ থেকে ১৭ টন সোনা ৬৫ কোটি ডলারে কিনেছে মাদুরো সরকার৷’

মাদুরোর স্বর্ণ কর্মসূচি বেশ পরিচিত৷ কিন্তু কীভাবে এই কর্মসূচি কাজ করে তা জানতে রয়টার্সের সাংবাদিকরা ভেনেজুয়েলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে জঙ্গলের ভেতরের খনি পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়েছেন৷ পাশাপাশি স্বর্ণ পরিশোধনের স্থান এবং খাদ্য রপ্তানি বোর্ডেও গিয়েছেন তারা৷ মোট ৩০ জন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন রয়টার্সের সাংবাদিকরা৷ প্রত্যেকটি সেক্টরের মানুষই নাম গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ ভেনেজুয়েলা এবং মার্কিন সরকারকে ভয় তাদের৷

ভেনেজুয়েলায় খনি খাতকে জাতীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে৷ এ খাতের জন্য রাষ্ট্রীয় কোনো নিয়ম-নীতি নেই৷ ফলে প্রায়ই এসব খনিতে ঘটে দুর্ঘটনা৷ পাশাপাশি ডাকাতি আর খুনোখুনি লেগেই থাকে৷ খনিতে কাজ করা ১৮ বছর বয়সি এক কিশোর জানান, ‘খনিতে কী হচ্ছে সবই সরকারের জানা, কিন্তু যেহেতু তারা লাভবান হচ্ছে, তাই এ নিয়ে কোনো কথা বলে না৷ আমাদের সোনা তাদের হাতে চলে যায়৷’

ভেনেজুয়েলার বেশিরভাগ স্বর্ণ তুরস্কে পরিশোধনাগারে পাঠানো হয়৷ পরে তার বিনিময়ে তুরস্ক থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা হয়৷ তুর্কি পাস্তা এবং গুড়ো দুধ এখন মাদুরোর খাদ্য কর্মসূচির প্রধান অংশ৷ গত বছর থেকে দুই দেশের মধ্যে এই বাণিজ্যিক আদান-প্রদান বেড়েছে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে৷ বিরোধী নেতা গুয়াইদোকে সমর্থন দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব৷

৪৭ বছর বয়সি এক খনি শ্রমিক জানান, ২০১৬ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দুই ছেলেকে নিয়ে কাজ করতে যান তিনি৷ মাসে তারা তিনজন মিলে প্রায় ১০ গ্রাম স্বর্ণ আহরণ করতেন৷ তা থেকে যে আয় হতো, সেই আয়ের পরিমাণ আগের পেশার আয়ের ২০ গুণ বেশি৷

স্বর্ণের ছোট ছোট বার তারা এল সালাও শহরে গিয়ে বিক্রি করেন৷ বেশিরভাগ ক্রেতার কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই৷ বাইরে থেকে দোকানের দরজা বন্ধ থাকে৷ কেবল পরিচিতরাই জানতে পারে ভেতরে কারা আছে৷

লাইসেন্স আছে এমন একজন ক্রেতা জানান, ‘রাষ্ট্র স্বর্ণ কিনছে, প্রত্যেকেই কিনছে৷ কেননা, এতে লাভ অনেক৷’ সেই ক্রেতা আরও জানান তিনি যেসব স্বর্ণ কেনেন, সেগুলো প্রতি তিনদিন পর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে বিক্রি করেন৷ ভেনেজুয়েলার মুদ্রা বলিভারের দাম পড়ে যাওয়ায় এখন স্বর্ণই মুদ্রার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে৷ এসব স্বর্ণ পাচার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ডলারে বিক্রি হচ্ছে৷

অবশ্য গত বছরের পহেলা নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন যাতে তারা ভেনেজুয়েলা থেকে স্বর্ণ না কেনে৷ স্বর্ণ নিয়ে চলা এই বাণিজ্যকে অন্ধকারের বাণিজ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন ভেনেজুয়েলার অর্থনীতিবিদ অ্যাঞ্জেল আলভারাদো।

ঢাকা টাইমস/১৬ফেব্রুয়ারি/একে