কবির অপেক্ষায় তিতাসপারের মানুষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:০৯ | প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৫৫
কবি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলে বেশির ভাগ সময় কাটাতেন বাড়ির সামনের এই পুকুরঘাটে

মনে কষ্ট থেকে নিজের শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাতায়াত প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। অবশেষে তিতাসপারের পৈতৃক ভিটায় আসছেন বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালী কাবিন’-এর কবি। তবে কফিনে শুয়ে। তিনি যে ‘রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারে’ বিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে।

কবি তার কবিতায় ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তার মৃত্যুটা যেন হয় কোনো শুক্রবার। আল্লাহ তার সেই ইচ্ছা পূরণ করেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

কবির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাকে শেষবারের মতো দেখার অপেক্ষায় তিতাসপারের মানুষ। শনিবার সকাল থেকে তার স্বজন, শুভাকাক্সক্ষী ও ভক্ত-অনুসারীরা কবির মৌড়াইলের বাড়িতে ভিড় করছেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল গোরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে রবিবার চিরশয্যা নেবেন ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা কবি। এর আগে বাদ জোহর নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হবে তার শেষ জানাজা।

ইতিমধ্যে শনিবার রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে দুটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, সাংবাদিক আল মাহমুদের।

১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে জন্ম নেয়া মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। মাঝে-মধ্যে পৈতৃক নিবাসে আসতেন তিনি। তবে কয়েক বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন।

কবি আল মাহমুদের ভাতিজা মীর রব্বান হোসেন বলেন, ‘কাকা মাঝেমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এলেও পৈতৃক ভিটায় থাকেননি এক যুগের বেশি সময়। আর অসুস্থতাজনিত কারণে গত কয়েক বছর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেননি। নিজ বাড়িতে যখন আসতেন তখন তার ভক্ত ও শুভাকাক্সক্ষীদের ভিড় লেগে থাকত। গল্প করে অনেক সময় দিতেন তাদের। দিনের বেশির ভাগ সময় বসে থাকতেন বাড়ির সামনের পুকুরঘাটে। বড়শি দিয়ে মাছও ধরতেন। তাকে স্থানীয়রা পিয়ারু মিয়া বলে ডাকত।’

 ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌড়াইলে কবি আল মাহমুদের শূন্য ভিটা

কবির ছোট ভাই মীর ফরহাদ হোসেন মারা গেছেন অনেক আগে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবি আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটা আছে, কিন্তু সেখানে নিজের ঘর নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যখন আসতেন, উঠতেন ছোট ভাইয়ের বাসায়।

ভাতিজা রব্বান আরও বলেন, ‘কাকার পৈতৃক ভিটায় আগের দিনের একটি চৌচালা ঘর বা রাউডি ঘর ছিল। যখন উনি আসতেন ওই ঘরে অবস্থান করতেন। ঘরটি ভেঙে সেখানে ভবন করা হয়েছে। এতে মনে কষ্ট পান তিনি। এরপর থেকে উনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসা কমিয়ে দেন।’

আল-মাহমুদের স্মৃতিচারণা করে তার ছোটবেলার সঙ্গী ভাষাসৈনিক মুহাম্মদ মুসা বলেন, ‘একসাথে আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি ৫২ সালে। ছোটবেলায় খেলার প্রতি আগ্রহ কম ছিল আল মাহমুদের। বই পড়ার প্রতি তার যত আগ্রহ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা পররাষ্ট্র দপ্তরে চাকরি করতেন। ‘কাবিলের বোন’ বইয়ে একটি লেখার পর তাকে জেলে যেতে হয়। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে জেল থেকে মুক্ত করে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রকাশনা পরিচালকের দায়িত্ব দেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলে আমাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন।’

সাহিত্যে আল মাহমুদের উত্থানের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মুহাম্মদ মুসা আরও বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে যত কালচারাল অনুষ্ঠান হতো একসঙ্গে করেছি। বাংলা সাহিত্যে এমন কবি আর জন্ম নেবে না। অনেকেই আল মাহমুদের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি করেছেন।’

আল মাহমুদের অসংখ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘লোক লোকান্তর’, ‘কালের কলস’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে উঠো’, ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’, ‘পানকৌড়ির রক্ত’, ‘গন্ধ বণিক’ ‘পাখির কাছে ফুলের কাছে’ প্রভৃতি।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয়া কবি আল মাহমুদ ১৯৭৪ সালে ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালে সরকারবিরোধী লেখার কারণে কারাবরণ করেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদ থেকে অবসর নেন তিনি। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি একুশে পদক ও বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

কবি আল মাহমুদের আত্মীয় পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি জানান, রবিবার দুপুরে বাদ জোহর নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা হবে কবির। এরপর তাকে দক্ষিণ মৌড়াইল কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে চিরশায়িত করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬ফেব্রুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :