‘জামায়াতের সংস্কার চান এমন নেতা আরও আছেন’

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:২৪ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৪১

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

দলের সংস্কার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়ায় বহিষ্কার হয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মজিবুর রহমান মনজু। তিনি জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৮ সালে শিবিরে আর ২০০৪ সালে জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেন মজিবুর। দলের অভ্যন্তরীন কিছু বিষয়ে মতভিন্নতার কথা তুলে ধরেন তিনি। এতে দল বিব্রত হয় এবং একপর্যায়ে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।

দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি শনিবার নিজেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান মনজু। সার্বিক বিষয়ে মুঠোফোনে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন সদ্য বহিষ্কৃত এই নেতা।

ঢাকাটাইমস: দলের সংস্কার চাওয়ার পরই বহিষ্কার হলেন নিয়ে কী বলবেন?

মনজু: সাংগঠনিক কারণে জামায়াতের ভেতরে অনেকে কথা বলতে চান না। আমি চেয়েছিলাম কিছুটা সাংগঠনিক কৌশল করে হলেও দলের সংস্কার বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসতে। যাতে সংস্কারের বিষয়ে আরও অনেকে সক্রিয় হয়, আস্তে আস্তে কথা বলে। আমি জানতাম এসব নিয়ে কথা বলায় হয়তো বহিষ্কার বা এই ধরনের সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু তারপরও কথা বলেছি আমি। বহিষ্কার হয়েছি তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এই যে আমার মতো আরও অনেকের মনের আকাঙ্ক্ষা, এটা যারা দায়িত্বে আছেন তারা বাস্তবায়ন করলে মনে হয় আমার এতদিনের ভালোবাসার দল রাজনীতিতে থাকতে পারবে।

ঢাকাটাইমস: বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করবেন কি না?

মনজু: চাইলে সেই সুযোগ আছে। আমি হয়তো আবেদন করলাম বহিষ্কারাদেশের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য। কিন্তু আমি সেটা করব না। কারণ আমার কাজ তো শেষ। আমি সংস্কারের কথা বলেছি। সেই দাবি যেহেতু সবাইকে জানিয়ে ফেলতে পেরেছি, এখন তারা দাবিটা যৌক্তিক মনে করলে বাস্তবায়ন করবে। আমার মনে হয় তারা এই উদ্যোগ নিলে দলের সমর্থন বাড়বে।

ঢাকাটাইমস: আপনার মতো জামায়াতের তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীরাও কি সংস্কার চায়?

মনজু: অনেকেই আছেন, যারা ফিল করেন। তবে তারা আশা নিয়ে আছেন যে দল সংস্কারের উদ্যোগ নেবে। আজ হোক কাল হোক করবে। কিন্তু আমার কথা হলো যদি এটা এখনই করা না হয় তাহলে সময় নষ্ট হবে, সমস্যাও বাড়বে।

ঢাকাটাইমস: সামনের দিনগুলোতে আপনার পরিকল্পনা কী?

মনজু: মাঠের রাজনীতি থেকে আমি অনেক দিন ধরেই দূরে। তবে আমি মনে করি বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির উদ্ভব হবে। আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র বলে এটা বলতে পারছি।  বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি যেহেতু একটা হুমকির মধ্যে পড়ে গেছে, তাই নতুন একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতির উদ্ভব হবে।

ঢাকাটাইমস: জামায়াত থেকে বের হওয়া বা বহিষ্কার হওয়া নেতাদের নিয়েই কি সেই রাজনৈতিক শক্তির উদ্ভব হবে?

মনজু: আমি মনে করি সব রাজনৈতিক দলের তরুণ যাদের মধ্যে দূরদৃষ্টি ও চিন্তাশক্তি আছে তারাই এদিকে ঝুঁকবেন এবং তাদের সাধুবাদ জানানো উচিত।

ঢাকাটাইমস: দলের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছেন?

মনজু: আসলে জামায়াতে বহিষ্কারের বিষয়গুলো গোপন রাখা হয়। সাধারণত প্রকাশ্যে আসে কম। কিছুদিন আগে একজন নায়েবে আমিরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু জানানো হয়নি পাবলিকলি। আমার বিষয়টি জানিয়েছি কারণ যেহেতু পত্রিকায় এসেছে। আমি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকব এবং আমি যেটা বলেছি সেটা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করব।

ঢাকাটাইমস: জামায়াতের নতুন নামে আসার বিষয়টি আসলে কত দূর?

মনজু: তারা এই সিদ্ধান্তে যাবে বাধ্য হয়ে, শেষ পর্যায়ে হলেও। আসলে কেউই কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবে যায়নি। এই দাবিটা তো আজকে না, কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে চলে আসছে। দেখলাম জামায়াতের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে তারা নতুন করে দল করবে। এই কাজটি আরও আগে করা দরকার ছিল। একটা কমিটিও নাকি করেছে। আমি আশা করি, আমরা চলে আসছি তারপরও দাবিটা পূরণ হলে তো এক ধরনের যৌক্তিকতা তৈরি হবে।

ঢাকাটাইমস: তাহলে সংস্কারের দাবিকারীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ভুল বা জুলুম করা হলো?

মনজু: আমি এভাবে বলব না। তবে আমাদের দাবি যে সঠিক ও যৌক্তিক ছিল সেটা প্রমাণ হচ্ছে।

জামায়াতের অনেক বিষয় গণমাধ্যম থেকে দূরে রাখা কেন?

মনজু: আমরা শুরু থেকে জামায়াত নেতাদের বলেছি আপনারা গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। উদাহরণও দিয়েছি। বিএনপির মহাসচিব কতবার এরেস্ট হয়েছেন, আবার গণমাধ্যমের সামনে আসছেন। রিজভী ভাই বহুবার এরেস্ট হয়েছেন কিন্তু গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। জামায়াতের সমস্যা কোথায়? সিলেটের জুবায়ের (এহসানুল মাহবুব জুবায়ের) ভাইকে সব সময় পাওয়া যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাকে কেন  পাওয়া যাবে না। আমরা জামায়াত নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি, যেহেতু আপনারা রাজনীতি করছেন সেহেতু আপনাদের জেল-জুলুম মোকাবেলা করতে হবে।

ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।

মনজু: আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/বিইউ/জেবি)