সৌদি যুবরাজের সফর: পাকিস্তানের মহা আয়োজন

দেলোয়ার হোসেন
| আপডেট : ১৬ জুলাই ২০১৯, ১৮:০২ | প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:০৭

চরম অর্থসঙ্কটকালীন সময়ে পাকিস্তান সফরে আসছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তার আগমন উপলক্ষে মহা আয়োজন করেছে ইমরান খান সরকার। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তিনি থাকবেন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে।

পাকিস্তানের অর্থসঙ্কট এখন চরমে। বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে মাত্র ৮০০ কোটি ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। বাজেট ঘাটতি বেড়ে চলেছে। বিদেশী সাহায্যের এতটা প্রয়োজন সাম্প্রতিক সময়ে কখনই হয়নি পাকিস্তানের।

এই সঙ্কটের মাঝেই আজ পাকিস্তান সফরে আসছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, যিনি এমবিএস নামেও পরিচিত। তাকে খুশী করতে যতটা মেহমানদারি সম্ভব সব কিছুরই আয়োজন করেছে পাকিস্তান।

ইসলামাবাদে বিবিসির সাংবাদিক আবিদ হুসেইন বলেন, কারণ খুব সহজ। পাকিস্তানের টাকা প্রয়োজন, অনেক টাকা এবং সেটা চাই খুব দ্রুত এবং ইঙ্গিত রয়েছে, এমবিএস পাকিস্তানকে কয়েকশ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দেবেন।

কেমন আড়ম্বর হবে এমবিএসের পাকিস্তান সফর

এমবিএসের সফর উপলক্ষে পাকিস্তানে এবার যে তোড়জোড় তেমনটি শেষবার দেখা গিয়েছিল যখন ২০০৬ সালে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ এসেছিলেন।

ইমরান খান বলেছেন, নিরাপত্তার দিকটি তিনি নিজে দেখছেন। সফরটি এমন সময় হচ্ছে যখন ভারত নিয়ন্ত্রীত কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

রবিবার যখন এমবিএসের বিমান পাকিস্তানের আকাশ সীমায় পৌঁছবে, তখন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান পাহারা দিয়ে তাকে ইসলামাবাদে আনবে। সেসময় অন্য সমস্ত বিমান চলাচল স্থগিত থাকবে।

যুবরাজ সালমানের সফর সঙ্গীর সংখ্যা এক হাজার। তাদের জন্য ইসলামাবাদের পাঁচ তারকার হোটেলে প্রায় সব রুম বুক। ৩০০ টয়োটা ল্যান্ডক্রজার গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশ অআগেই ইসলামাবাদে পৌঁছেছে এমবিএসের ব্যক্তিগত আরাম আয়েশের সরঞ্জাম।

পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকবেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এই সম্মান এর আগে আর কোনো বিদেশি অতিথি কখনই পাননি। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সময় হাজার হাজার পায়রা একসঙ্গে আকাশে ছাড়া হবে।

কেন টাকার জন্য মরিয়া পাকিস্তান?

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন মাত্র ৮০০ কোটি ডলার। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে আমদানির পাওনা শোধ করা যেকোনো সময় কঠিন হয়ে পড়বে। আইএমএফ এর কাছ থেকে জরুরী সাহায্য নেওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই দেশটির।

কঠোর শর্তের কারণে সেই সাহায্য যেন খুব বেশি না নিতে হয়, তার জন্য ইমরান খান বিদেশি বন্ধু দেশগুলোর কাছ থেকে সাহায্য চাইছেন। ১৯৮০ এর দশক থেকে পাকিস্তানকে ১৩ বার আইএমএফ এর মুখোমুখি হতে হয়েছে।

যুবরাজ সালমানের সফরের ঠিক কদিন আগে পাকিস্তানে এসেছিলেন আবুধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। সেসময় সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানকে ৬০০ কোটি ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে পাকিস্তান তিন হাজার কোটি ডলার সাহায্য পাওয়ার আশা করছে।

সৌদি যুবরাজ কোথায় কোথায় বিনিয়োগ বা সাহায্যের প্রস্তাব দেবেন, তা নিশ্চিত নয়। তবে বন্দর নগরী গাদারে ৮০০ কোটি ডলারের নতুন একটি তেল শোধনাগারে সৌদি বিনিয়োগ আশা করছে পাকিস্তান।

চীন এবং পাকিস্তানের মধ্যে এখন যে ছয় হাজার কোটি ডলারের ব্যবসা হচ্ছে, তার জন্য গাদার বন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনা সাহায্যের সঙ্গে এত বেশি শর্ত জোড়া থাকে যে তা নিয়ে পাকিস্তানের সরকার সবসময় দোটানায় থাকে।

সৌদির স্বার্থ কী?

পাকিস্তানের যেমন সৌদি টাকা প্রয়োজন, সৌদিরও পাকিস্তানকে দরকার। ইয়েমেনের যুদ্ধ এবং সাংবাদিক খাসোগজির হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি যুবরাজ যে ইমেজ সঙ্কটে পড়েছেন, তারই প্রেক্ষাপটে তার পাকিস্তানে এই সফর। পাকিস্তানের মত নির্ভরশীল বন্ধু দেশগুলোর কাছ থেকে আরো ভরসা চাইছেন তিনি। তার জন্য দাম দিতেও তিনি প্রস্তুত।

এছাড়াও পাকিস্তানের অন্যান্য অনেক গুরুত্ব রয়েছে সৌদির কাছে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বহুদিনের। চার দশক আগে যখন মক্কার পবিত্র স্থাপনাগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, তা মোকাবেলায় পাকিস্তানী সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

লন্ডনের দি ইকোনমিস্ট সাময়িকীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শশাংক বলেন, ‘এটা সবসময় ধরেই নেয়া হয় যে সৌদি আরব যদি কখনো কোনো বড় নিরাপত্তা সঙ্কটে পড়ে, পাকিস্তান সৈন্য সরবরাহ করবে। সৌদি আরবের অনেক পয়সা থাকতে পারে, কিন্তু সামরিক শক্তি তাদের সীমিত। তেমনি পাকিস্তানের টাকা পয়সা কম, কিন্তু খুবই শক্তিশালী একটি সেনাবাহিনী তাদের রয়েছে।’

যোশী বলেন, প্রকাশ্যে এ কথা কখনো বলা না হলেও একটি ধারণা রয়েছে যে যদি সৌদি আরবের কখনো পরমাণু বোমা বানানোর প্রয়োজন হয়, পাকিস্তানই সেই প্রযুক্তি তাদের দেবে।

এছাড়া, পাকিস্তান যেহেতু ইরানের প্রতিবেশী একটি দেশ, সে কারণেও পাকিস্তানের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের ব্যাপারে সৌদি আরব উদগ্রীব।

ইরান নিয়ে সৌদি স্পর্শকাতরতার কথা ভেবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ইসলামাবাদে নামার আগে নগরীর সমস্ত জায়গা থেকে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বার্ষিকী উপলক্ষে টাঙানো সমস্ত পোস্টার সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ইয়েমেনের যুদ্ধে সরাসরি জড়িত না হওয়ার পাকিস্তানের সিদ্ধান্তে সম্পর্ক সম্প্রতি কিছুটা চটলেও এই দুই মুসলিম দেশের পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীলতার কোনো বিকল্প এখনও নেই। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা টাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/ডিএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

গাজায় যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আইসিসির প্রতি আহ্বান

কলকাতা বিমানবন্দরে চলল গুলি, নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে হুমকি পেলেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ

মস্কোতে কনসার্টে হামলা: এখনো প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ 

বাবা কোটিপতি, ২০ বছর ধরে জানতই না ছেলে!

গাজা যুদ্ধের ১৭৩তম দিন, প্রাণহানি বেড়ে সাড়ে ৩২ হাজার

মস্কোতে সন্ত্রাসী হামলা: ফের মৃত্যুদণ্ড চালুর আহ্বান রুশ আইনপ্রণেতাদের

দশ বছরে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু, বেশিরভাগই সাগরে ডুবে: জাতিসংঘ

৩০ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেবে ভারত

বিমান হামলায় হামাসের ২ সামরিক নেতাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :