বিস্ফোরক স্থানীয়ভাবেই সংগ্রহ করা: ভারতীয় জেনারেল

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ভারতের সামরিক কমান্ডার লেফট্যানেন্ট জেনারেল ডি এস হুদা বলেছেন, কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলায় যে পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে তা সীমান্তে ওপার থেকে আসা সম্ভব নয়। মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে পুলওয়ামার অবন্তীপুরায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনী কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪৪ জন জওয়ান নিহত হন।

এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে ভারত। তবে পাকিস্তান জোরালোভাবে ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নয়া দিল্লিকে ‘এই ধরনের ভিত্তিহীন ও আবেগপ্রবণ বক্তব্য পরিহার’ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।   

ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলাকারী আদিল আহমাদ দার ৩৫০ কেজির বেশি বিস্ফোরক নিয়ে সিআরপিএফের গাড়িবহরে এই হামলা চালিয়েছেন।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরি সেনাঘাঁটিতে হামলার সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর নর্দান কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল হুদা।  

গত শনিবার নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরক তৈরির উপাদান কোনো গোপন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।’

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, পাকিস্তানের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভারতের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। তাই তারা সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পথে হাঁটছে।

কেন ভারত পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান সবসময় রক্ষা করছে তাদের দীর্ঘ দিনের মিত্র দেশ চীন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো প্রস্তাব উঠলে সেটাতে ভেটো দেয় চীন।    

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্লেষকরা বলছেন ভারত সামরিকভাবেও পাকিস্তানকে কাবু করতে পারবে না। কারণ কাশ্মীরের বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় বরফে ঢাকা থাকে। আর সেখানে পাকিস্তানি সেনারা থাকে সর্বোচ্চ সতর্কতায়।’  

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হোক এটা যুক্তরাষ্ট্র চাইবে না। কারণ তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় প্রধান ভূমিকা রাখছে পাকিস্তান।

মার্কিন গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ অবসানে সোমবার ইসলামাবাদে নতুন করে শান্তি আলোচনায় বসছেন তালেবান ও মার্কিন কর্মকর্তারা।   

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, অভ্যন্তরীণ কোনো কারণ থেকে পুলওয়ামায় এই হামলা চালিয়েছে আত্মঘাতী।

বৃহস্পতিবারে হামলার প্রকৃতি দেখেই বুঝা যাচ্ছে কাশ্মীরের অভ্যন্তরেই বিদ্রোহ এবং হামলার ঘটনা বাড়ছে। তবে পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্র কতটা গভীর- প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে।    

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, হামলাস্থল থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে আদিল আহমাদের গ্রাম।  স্থানীয়ভাবে বিস্ফোরক সংগ্রহ করে গাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

আদিলের কয়েকজন বন্ধু নিউইয়র্ক টাইমসকে জানায়, ২০১৬ সালে বিক্ষোভের সময় সিআরপিএফের জওয়ানদের গুলি তার পায়ে লাগে। তারপরেই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দলে যোগ দেন তিনি।  

কাশ্মীরের বহু মানুষ সিপিআরএফ-কে ঘৃণা করে। তারা মনে করে, দখলদারি এই বাহিনী ভারত জুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে তাদের নির্যাতন করার জন্য।  

কাশ্মীরে শক্ত অবস্থানে থাকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীতি কতটা টেকসই হবে- এই হামলার পর তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।  

কাশ্মীরে আড়াই লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন আছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সেনা মোতায়েন রয়েছে এই অঞ্চলে। যা কাশ্মীরের জনগণের প্রাত্যহিক জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কৃষি জমি, বাড়িঘর, স্কুল সব জায়াগাতেই সেনাদের সর্বদা উপস্থিতি থাকে।

(ঢাকাটাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/এসআই)