যমুনার বুকে চর, নৌপথ বন্ধের উপক্রম

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:১০

পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় যমুনার বুকে জেগে উঠেছে বিশাল চর। সিরাজগঞ্জ সদর, চৌহালী, এনায়েতপুর ও কাজিপুরে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এতে নৌযোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্নের উপক্রম হয়েছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নৌকার মালিক ও যাত্রীদের। বাধ্য হয়ে অনেক নৌযান বঙ্গবন্ধু সেতু অথবা পাবনার বেড়া উপজেলা ঘুরে গন্তব্যে যাচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হচ্ছে।

জানা গেছে, পানি কমায় চরপড়া কাজিপুরের ১০টি রুটে নৌ-চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। উপজেলার মেঘাই ঘাট থেকে প্রতিদিন নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, খাসরাজবাড়ি, চরগিরিশি, মনসুর নগর, তারাকান্দি, সিরাজগঞ্জ, সহবাড়াবাড়ি, রুপসার চরে শতাধিক ইঞ্জিনচালিত নৌকা যাতায়াত করতো। কিন্তু নদীতে পানি কমায় ও বিশাল চর জেগে ওঠায় বড় নৌযানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু ছোট নৌযান চলাচল করলেও তাতে উঠতে গিয়ে যাত্রীদের হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে দীর্ঘ বালুচর। মালামাল নিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে নৌকায় ওঠায় যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।

মেঘাই-নাটুয়ারপাড়া ঘাট থেকে চলাচলকারী প্রায় সবগুলো রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় শতাধিক নৌকার মাঝি বেকার হয়ে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন। নদীর পানি কমার ফলে নৌকার ঘাট সরতে সরতে মূলস্থান থেকে দেড় থেকে আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে সরে গেছে।

এদিকে চৌহালীর সঙ্গে এনায়েতপুরের নৌপথে যোগাযোগও অনেকটা বিচ্ছিন্নের পথে। চৌহালী উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরে যাতায়াতের মাধ্যম এনায়েতপুর বেড়িবাঁধ ঘাটের নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এখন যাত্রী ও পণ্যবোঝাই নৌযানগুলোকে উত্তরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে যমুনা সেতু অথবা দক্ষিণে প্রায় ২৮ কিলোমিটার ঘুরে পাবনার বেড়া উপজেলা হয়ে ঘুরে এনায়েতপুর যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হচ্ছে।

কথা হয় কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া ঘাট মালিক সমিতির সভাপতি ওমর আলী ম-লের সঙ্গে। তিনি বলেন, যমুনার পানি কমে যাওয়ায় আগে যেখানে নদী পার হতে পৌনে এক ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন প্রায় দুই-আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। এতে দিনে একবারের বেশি কোনো নৌকার সিরিয়াল পড়ে না। যাত্রীরাদেরও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এনায়েতপুরে সদিয়া চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সিরাজ জানান, এনায়েতপুর নৌকাঘাট থেকে চৌহলী উপজেলা সদরে যেতে বর্ষা মৌসুমে সময় লাগতো মাত্র এক ঘণ্টা। আর এখন সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। এতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ খরচ হচ্ছে।

এনায়েতপুর ঘাটের ইজারাদার ইউসুফ আলী বেপারী জানান, স্থানীয় ঘাট ও নৌকা মালিকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলা ড্রেজার দিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার চর খনন করে একটি অগভীর সরু চ্যানেল চালুর চেষ্টা করলেও পরে অর্থাভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে বালুর প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় চ্যানেলটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হতদরিদ্র নৌকার মালিক ও মাঝিমাল্লাদের পক্ষে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নিয়মিত ড্রেজিং করে চ্যানেলটি সচল রাখা সম্ভব না। সরকারি উদ্যোগে চ্যানেলটি দ্রুত ড্রেজিং না করলে বন্ধ হয়ে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের সহজ যোগাযোগের একমাত্র নৌপথটি।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, যমুনায় চর জেগে ওঠায় পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকারিভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌপথটি সচল রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা টাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :