অভিজিৎ হত্যা: চার বছর পর অভিযোগপত্র

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার চার বছর পর তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গি বিরোধী বিশেষ ইউনিট ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিট’। এতে মোট ছয় জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও হত্যায় ১১ জন ছিল বলে জানানো হয়েছে। বাকি পাঁচ জনের নাম বের করতে পারেনি তারা।

অভিযোগপত্রটি অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তা আদালতে দাখিল করা হবে।

সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার অভিযুগে চাকরিচ্যুত সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক।

আসামিরা হচ্ছেন: মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আকরাম হোসেন ওরফে আবির, মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম ওরফে হাদী,  আরাফাত রহমান, শফিউর রহমান ফারাবী।

পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে আসামিদের মধ্যে তিন জন এখন কারাগারে, একজন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন, মূল পরিকল্পনাকারী সহ দুই জন পলাতক। অপর পাঁচজনের শুধু সাংগঠনিক নাম জানা গেছে। তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ।

এদের মধ্যে কারাগারে আছেন আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব এবং শফিউর রহমান ফারাবী।

মূল পরিকল্পনাকারী মেজর (বরখাস্ত) জিয়াউল হক, আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আবদুল্লাহ পলাতক। মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম ওরফে হাদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।

এই হত্যায় জড়িতরা সবাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (আনসার আল ইসলামের ) সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।

যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারাবী ধার পড়েছেন এই হত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে। ভবিষ্যতে পলাতক আসামি গ্রেপ্তার হলে তাকে সম্পূরক অভিযোগপত্রে যুক্ত করা হবে।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশের গ্রন্থমেলা চলাকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎ রায়কে। ওই সময় তার সঙ্গে থাকা স্ত্রী বন্যা আহমেদ বন্যা ও হামলার শিকার হয়ে একটি আঙুল হারান।

পদার্থবিদ অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি মুক্তমনা ব্লগ সাইট পরিচালনা করতেন। জঙ্গিদের হুমকির মুখেও বইমেলায় অংশ নিতে দেশে এসেছিলেন তিনি।

ওই হত্যা ধরণেই স্পষ্ট ছিল এটি জঙ্গিদের কাজ। এই ঘটনা তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র তার তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে পাঠিয়েছিল। তারা বেশ কিছু সুপারিশ করে গিয়েছিল বাংলাদেশের তদন্ত সংস্থার জন্য।

এই হত্যায় উগ্রবাদীদের নাম এলেও তাদের শনাক্ত করার বিষয়টি বেশ দুরূহ ছিল। কারণ হিসেবে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বলছে, হত্যায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের সবাই পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। ফলে এক জনকে দিয়ে আরেক জনের পরিচয় জানার যায়নি। 

মনিরুল ইসলাম জানান, অভিজিৎকে হত্যার জন্য ২০১৫ সালের ২২ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ (রেকি) করা হয়। পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। এই হত্যায় নেতৃত্বে ছিলেন আসামি মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সাইমন ওরফে শাহরিয়ার।

যে ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে সায়মন, সোহেল ও আরাফাত আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন।  

মনিরুল ইসলাম জানান, অভিজিৎ রায়কে হত্যার ‘অপারেশন টিমের’ নেতৃত্বে ছিলেন মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম ওরফে হাদি। তিনি ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/এএ/ডব্লিউবি