জামায়াত ঘৃণার পাত্র: আবদুর রাজ্জাক

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:০৫ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরার কারণে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী ঘৃণার পাত্র হয়ে গিয়েছিল বলে মনে করেন দলটির পদত্যাগী নেতা আবদুর রাজ্জাক। তিনি মনে করেন, জামায়াত রাজনীতিতে সফল হতে পারেনি কেবল ওই ভূমিকার কারণে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এই সদস্য সম্প্রতি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি দল বিলুপ্ত করার পরামর্শও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। জানান, মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার জন্য নেতাদেরকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়ে এসেছেন তিনি বারবার। কিন্তু দল সেই পরামর্শ গ্রহণ করেনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধী বেশ কয়েকজন আইনজীবী হিসেবে আপিল বিভাগে লড়েছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তবে কয়েকজনের বিচার চলাকালেই তিনি যুক্তরাজ্য চলে যান। আর সেখান থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠান দলে।

যুক্তরাজ্যে থেকেই ব্যারিস্টার রাজ্জাক বিবিসি ও বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এখানেও তিনি জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়েই কথা বলেছেন।

রাজ্জাক বলেনম ‘আমি খুব খোলামেলাভাবেই বলব যে, ’৭১-এর জামায়াত দেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। জামায়াত দেশে ঘৃণার পাত্র হয়ে গিয়েছিল। এটা আমাকে বেশি পীড়া দিয়েছে।’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন এ দেশের মুক্তিকামী মানুষদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে গণহত্যা শুরু করে, তখন আক্রান্ত দেশবাসীর শত্রু হিসেবে আবির্ভুত হয় জামায়াত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে সে সময় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযম রেডিওতে ভাষণ দেন। পরে গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ধর্মভিত্তিক আরো বেশ কিছু দলকে সঙ্গে নিয়ে।

জামায়াত নেতা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে মে মাসে খুলনায় গঠন করা হয় রাজাকার বাহিনী। আর বুদ্ধিজীবী হত্যায় কুখ্যাত আলবদর বাহিনী গঠন করা হয় জামায়াতের সে সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা-কর্মীদের দিয়ে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ মারা গেছেন বিচার চলাকালে। আর আলবদর বাহিনীর শীর্ষ নেতা ও পরে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে। আরেক আলবদর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামেরও ফাঁসির রায় হয়েছে। এখন আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষা।

ফাঁসিতে ঝুলেছেন রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে মিরপুরে গণহত্যার দায়ে। শান্তি কমিটির আরেক নেতা আবদুস সুবহানের ফাঁসির দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের নিষ্পত্তি হয়নি এখনো।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার জন্য জামায়াত নিষিদ্ধ ছিল। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় তারা রাজনীতিতে ফেরে। সে সময় বিএনপি, পরে জাতীয় পার্টি এবং পরে আবার বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে তারা রাজনীতি করেছে। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর বিপাকে পড়ে তারা। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর এক পর্যায়ে আত্মগোপনে যায় নেতা-কর্মীরা। কোথাও দলীয় কার্যক্রমও চালাতে পারছে না তারা।

আরবুদ রাজ্জাক মনে করেন, ‘একটি দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে কেউ সে দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন-এ রকম ইতিহাস আমি খুঁজে পাই না। সেটা জর্জ ওয়াশিংটনের কথাই বলেন, আর আমাদের উপমহাদেশের কথাই বলেন, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার ইতিহাস দেখুন।’

‘স্বাধীনতার বিরোধিতা করে কোনো দল টিকতে পারে না বা সে দেশের নেতৃত্ব দিতে পারে না।’

আশির দশকে জামায়াতে যোগ দেওয়ার সময় মুক্তিযুদ্ধের ওই দায় বাধা ছিল না বলেও মনে করেন রাজ্জাক। বলেন, এই বিষয়টি ৯০ সালের পরই বড় হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/ডব্লিউবি