দুই বছরের মধ্যে ব্লাস্ট প্রতিরোধী গম

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:০৬ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৩

বাকৃবি প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

২০১৬ সালে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গমের জমিতে অতি ক্ষতিকর ব্লাস্ট নামক ছত্রাকজনিত একটি রোগ শনাক্ত করা হয়। এ রোগের প্রভাবে দেশের কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, বরিশাল, ভোলা, যশোর, ফরিদপুর এলাকার অধিকাংশ গমের জমি। প্রায় প্রায় ১,০৮,৭১৫ হেক্টর জমির গম নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাষিরা গম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনে গত তিন বছর ধরে গবেষণা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) একদল গবেষক। এ বীজ উদ্ভাবন করা গেলে গম উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যাবে।

গবেষকরা বলছেন, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী নতুন জাতের বীজ উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে এমন বীজ উদ্ভাবনের আশা করছেন তারা।

গমের ব্লাস্ট রোগ দমনের গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রফেসর ড. মো. বাহাদুর মিঞা। এছাড়াও গবেষকদলে রয়েছেন বিনার উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আবুল কাসেম, বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন। এছাড়া এই গবেষণা প্রকল্পে গবেষণারত রয়েছেন দুই জন পিএইচডি ও দশজন এমএস ছাত্র।

সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এইসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. মো বাহাদুর মিঞা বলেন, গমের ব্লাস্ট রোগের সমস্যা সমাধান কল্পে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের এর অর্থায়নে একটি সমন্বিত গবেষণা প্রকল্প ২০১৭-১৮ থেকে শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির অধীনে বাকৃবি এবং বিনা এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। গবেষণার অংশ হিসেবে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত গমের বীজকে রেডিয়েশন দেয়া হয়েছে। এসব রেডিয়েশন দেয়া বীজ মাঠে রোপণ করে এমন কিছু ফলাফল পাওয়া গেছে যা অত্যন্ত আশাজনক। গবেষণায় তৃতীয় বছর চলছে। রেডিয়েশন দেওয়া বীজ থেকে উৎপাদিত বেশ কিছু গাছে ব্লাস্ট হয়েছে আবার একই সাথে অল্প কিছু গাছে রোগ হয়নি। এই গাছগুলোকে বাছাই করে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী দুই বৎসরের মধ্যে ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত কৃষকের হাতে পৌছে দেয়া সম্ভব বলে আশা করা যাচ্ছে।

এছাড়াও গম গাছের বৃদ্ধিও পুষ্টি উপাদানের অভাবের সাথে রোগের একটি সম্পর্ক রয়েছে। সিলিকন, সিলিনিয়াম, বোরন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম এর মত নিউট্রিয়েন্ট উপাদান রোগ সৃষ্টি প্রতিহত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় জানা গেছে সিলিকন ও সিলিনিয়াম ব্লাস্ট রোগের তীব্রতা হ্্রাসে সহায়ক। গম গাছের শীষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার আগ পর্যন্ত উপযুক্ত পরিমাণে সিলিকন ও সিলিনিয়াম থাকলে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হ্রাস করা যায় কিনা এ বিষয়েও গবেষণা চলছে।

গমের ব্লাস্ট রোগ সম্পর্কে অধ্যাপক ড. মো বাহাদুর মিঞা বলেন, ব্লাস্ট একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগের জীবাণু বাতাস ও বৃষ্টির মাধ্যমে সুস্থ্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে। গম উৎপাদনকারী এশিয়ার দেশসমূহ বিশেষ করে ভারত ও চীন বাংলাদেশ থেকে এ রোগটির বিস্তার রোধে ইতোমধ্যে সর্বাধিক সতর্কতা জারি করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এশিয়ার অন্যান্য দেশ সমূহকে এ রোগটির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। একই সাথে তারা ব্রাজিলসহ সংক্রমিত দেশ সমূহ থেকে গম আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বাধিক সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনে আমরা শুরু থেকেই আছি। অতি শিগগির জাতটি উদ্ভাবন এবং মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারব বলে আশা করছি। এতে করে কৃষকেরা আরও লাভবান হবে ও গম চাষে আগ্রহী হবে।

কৃষি অফিস জানায়, গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান দানা জাতীয় ফসল। মানুষের খাদ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও পুষ্টিমানের বিবেচনায় গমের আটা দেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে। দেশে তাই গমের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে দেশে প্রতি বছরে মানুষ প্রায় ৬০ লাখ টন গম খাবার হিসেবে গ্রহণ করে সেখানে গম উৎপাদন হয় মাত্র ১০-১২ লাখ। বাকি গম আমদানি করা হয়। ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী গমের জাত উদ্ভাবন করা গেলে গম উৎপাদন বেড়ে যাবে। ফলে আমদানি নির্ভরতাও কমবে বলে আশা করা যায়।

ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/ইএস