তিন নারীর ওপর বর্বরতা: তদন্তে মানবাধিকার কমিশন

নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:০৬ | প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২৩:২০
নির্যাতিত নারী ফতেমারর সঙ্গে কথা বলছেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা: ছবি সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে তিন নারীকে নির্যাতনের পর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সোমবার দিনব্যাপী নারায়ণগঞ্জে এসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা নির্যাতিতদের বক্তব্য শুনেন এবং বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।

সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জে ওই ঘটনার তদন্তে আসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম। পরে তারা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মিলনায়তনে পুলিশের মাধ্যমে ওই নির্যাতিন তিন নারীর একজনকে আনেন। তদন্তে এসেছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বানচিতা চাকমা, অভিযোগ ও তদন্ত পরিচালক আল মাহামুদ ফাইজুুল কবির এবং অভিযোগ ও তদন্ত উপ-পরিচালক গাজী সালাম।

তারা নির্যাতিত নারীর সাথে কথা বলে ঐ দিনের ঘটনার বিস্তারিত শোনেন। পরে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলামকে মামলা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন।

নির্যাতনের ঘটনায় বন্দর থানা পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, সোমবার মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় ৯ জনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল মাহমুদ ফায়জুল কবির জানান, ভুক্তভোগী নারীর সাথে আলাপ হয়েছে। তার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনেছি। পরে বন্দরের ওসির সাথে আলাপ হয়েছে। যে ঘটনা ঘটেছে তা জামিন অযোগ্য অপরাধ।

গত শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের দক্ষিণ কলাবাগ এলাকায় তিন নারীকে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে তাদের আটক করে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। যা বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে ন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

নির্যাতনের শিকার ওই তিন নারী হলেন- বন্দর ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাবাগ খালপার এলাকার মৃত মফিজ উদ্দিনের মেয়ে ফাতেমা বেগম (৫০), বন্দর শাহীমসজিদ এলাকার বাছেদ আলীর মেয়ে আসমা বেগম (৩৫) ও বুরুন্দি এলাকার বকুল মিয়ার স্ত্রী বানু বেগম (৩০)।

নির্যাতিত ফাতেমা বেগম কমিশনকে জানান, তিনি বাড়ির পাশের উম্মেহানী নামে একজনের কাছে এক লাখ ২২ হাজার টাকা পাওয়া রয়েছেন। উম্মেহানীর ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর সময় ফাতেমা বেগমের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ও তার মেয়ের বিয়ের সময় ২২ হাজার টাকা ধার নেন। কোন ধরনের স্ট্যাম্প সই না থাকায় উম্মেহানী টাকা দিতে অস্বীকার করেন। ওই পাওনা টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়া হয়। পরে পতিতা আখ্যায়িত করে তাকে ও আসমা বেগমকে নির্যাতন করা হয়। তবে বানু বেগম রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে নির্যাতন করা হয় বলে দাবি করেন ফাতেমা।

যাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তাদের দাবি- বন্দর দক্ষিণ কলাবাগ খালপার এলাকায় মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে মৃত মফিজ উদ্দিনের মেয়ে ফাতেমা বেগম দীর্ঘদিন যাবৎ বহিরাগত ‘যৌনকর্মী’ দিয়ে অসামাজিক কাজ করে আসছিলেন। এলাকাবাসী একাধিকবার সাবধান করলেও কাউকে তোয়াক্কা না করে গোপনে দেহ ব্যবসা অব্যাহত রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় শনিবার বিকেল ৩টায় গোপনে উল্লেখিত নারীদের দিয়ে অসামাজিক কাজ করার সময় ফাতেমা বেগমসহ উল্লেখিত ৩ নারীকে আটক করে চুল কর্তন করে নির্যাতন চালায় লোকজন।

এ সময় বন্দর দক্ষিণ কলাবাগসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক লোকজন ফাতেমা বেগমকে মারধর করতে থাকলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। খবর পেয়ে বন্দর ইউপি সদস্য ইউসুফ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বন্দর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে বন্দর থানার এসআই সাফিউল দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ৩ নারীকে উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/ ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :