গোপন পিন নম্বর মুছে যাওয়ায় পোস্ট ক্যাশকার্ড গ্রাহক কমছে

আরিফিন তুষার, বরিশাল ব্যুরো
 | প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:২২

সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা থাকলেও বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে এগোচ্ছে না ডাক বিভাগের ক্যাশকার্ডের কার্যক্রম। চালুর পরে গত আট বছরে প্রচার-প্রচারণার অভাব ও কার্ডের গোপন নম্বরে ত্রুটি এবং এ সেবার মানোন্নয়ন না হওয়ায় গ্রাহক বাড়ার বদলে কমছে।

বরিশাল প্রধান ডাকঘর সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে শুরুর দিকে এক হাজার ৩২৫ জন পোস্ট ক্যাশকার্ড সুবিধা নিলেও বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৯৬২ জনে। সর্বশেষ গত বছরের ১০ জুন একসঙ্গে দশটি কার্ড নেন বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে চলতি ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত নতুন করে একটি কার্ডও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে ঢাকা থেকে সর্বশেষ গত বছরের ২৫ জানুয়ারি আসা ১০০টি কার্ডের মধ্যে ৮৬টি কার্ডই প্রধান ডাকঘরে জমা রয়েছে।

ডাক বিভাগের গ্রাহকদের সার্বক্ষণিক অর্থনৈতিক লেনদেনের সুবিধার্থে সরকারি-বেসরকারি সকল ব্যাংকের তুলনায় দ্বিগুণ সুবিধা নিয়ে সারা দেশে চালু হয় এই কার্ড। শুরুর প্রথম দিকেই এই অঞ্চলে বেশ সাড়া ফেলায় প্রথম দিকেই ক্যাশকার্ডধারী গ্রাহকের সংখ্যা হাজারে পৌঁছে যায়। এর সুফলও ভোগ করছিলেন গ্রাহকরা।

প্রধান ডাকঘরে ক্যাশকার্ডের দায়িত্বে থাকা অপারেটর মো. আসলাম হাওলাদার বলেন, যেকোনো সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় ক্যাশকার্ড খুবই লাভজনক ও সুবিধা সম্বলিত। একজন গ্রাহক কোনো ঝামেলা ছাড়াই মাত্র ৪৫ টাকা ব্যয়ে ক্যাশকার্ড পেয়ে থাকেন। প্রতিটি কার্ডে এক একজন গ্রাহক প্রতিদিন সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জমা ও সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা উত্তোলন করতে পারছেন। ৫০০ থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত একসঙ্গে লেনদেনে খরচ লাগছে মাত্র পাঁচ টাকা। একটি কার্ডে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা থাকলে তা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারছেন গ্রাহকরা।

আসলাম হাওলাদার আরো বলেন, পোস্ট ক্যাশকার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এ কার্ড দিয়ে সোনালী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী বাংক, ডাচ-বাংলা বাংক, ফারইস্ট ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংকসহ ১৭টি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে রাত-দিন যেকোনো সময় টাকা উত্তোলন করতে পারেন গ্রাহকরা। এক্ষেত্রেও যেকোনো লেনদেনের চার্জ ওই পাঁচ টাকাই নির্ধারিত।

তিনি বলেন, গত প্রায় আট বছরে বরিশালে মোট এক হাজার ৩২৫টি ক্যাশকার্ড বিতরণ হয়েছে। এগুলোর সবগুলো প্রথম দিকেই হয়েছে। চালুর এক থেকে দেড় বছরের মাথায় কার্ডের চাহিদা কমে গেছে।

এতো সুবিধা থাকলেও ক্যাশকার্ডের প্রতি আগ্রহ দিন দিন কমে যাওয়ার পেছনে ক্যাশকার্ডের গোপন নম্বরে ত্রুটির বিষয়টি উল্লেখ করছেন গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ, এ সমস্যায় ক্যাশকার্ডে জমানো টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না অধিকাংশ গ্রাহক। আদৌ সেই টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও সন্দিহান তারা।

ক্যাশকার্ড গ্রাহক আল আমিন বলেন, ‘২০১৬ সালের শেষের দিকে ক্যাশকার্ড করে এ পর্যন্ত মাত্র দুবার লেনদেন করতে পেরেছি। কিন্তু গোপন নম্বরটি অস্পষ্ট হওয়াসহ কার্ডটির মান খারাপ হয়ে গেছে। ফলে এখন লেনদেন সম্ভব না হওয়ায় পাঁচ হাজার টাকার মত আটকে আছে। পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো সমাধান দিতে পারছেন না।’

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশিক আল হাসান বলেন, পোস্ট অফিসের লেনদেন খুব সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত ছিলো। তাই পোস্টমাস্টারের কথায় কার্ড উত্তোলন করেছিলাম। মাত্র তিন-চার বার লেনদেনের পর কার্ডের গোপন নম্বর মুছে গেছে। ফলে আর লেনদেন সম্ভব না হওয়ায় আটকে আছে প্রায় আট হাজার টাকা।’

বরিশাল প্রধান ডাকঘরের প্রথম শ্রেণীর পোস্টমাস্টার মো. গোলাম রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘ক্যাশকার্ড লাভজনক ও নিরাপদ ব্যাংকিং সেবা। এটির গ্রাহক বাড়াতে আমরা অনেক সভা-সেমিনার ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। প্রথম দিকে এর চাহিদা বেশ ভালো থাকলেও বর্তমানে কমে গেছে।’

‘ক্যাশকার্ডের গোপন পিন নম্বরটি কিছুদিন না যেতেই মুছে বা ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভুল নম্বর দিয়ে কেউ টাকা তুলতে না পারায় কার্ডধারীর সংখ্যা কমে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সমস্যায় পড়ে কেউ আমাদের কাছে এলে তার কার্ড পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। ইতিপূর্বে ত্রুটিযুক্ত ৩৭৭টি কার্ড আমাদের কাছে এসেছিলো। যা পরিবর্তন করে দিতে হেড অফিসে পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাদের মাত্র ১০০টি কার্ড পরিবর্তন করে দিয়েছিলো। বাকিগুলো গত এক বছরেও পাওয়া যায়নি। তাই গ্রাহকদেরও দেওয়া যাচ্ছে না।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :