এখন আর তদবিরে কাজ হয় না: কাদের

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:২১ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

প্রথম মন্ত্রী হবার পর তদবিরের জ্বালা থাকলেও এখন আর নেই বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘এখন আর তদবিরে কাজ হয় না।’

মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

কাদের বলেন, ‘আগে তো অনেক তদবির হতো। প্রথম মন্ত্রী হবার পর প্রথম ৩-৪ বছর রুলিং পার্টির তদবিরের জ্বালায় থাকা ছিল দায়। এখন সেটাও নেই। এখন সাহসও পায় না। কারণ এখন তদবিরে কাজ হয় না।’

‘আমার মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে মিডিয়ায় রিপোর্ট আসে। এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজের অনিয়ম-দুর্নীতি হলে মন্ত্রী হিসেবে কি আমি দায় এড়াতে পারব? ফর নাথিং আমি এ দায়টা কেন নেব?

বলেন, ‘আমি তো নিজে আপনাদের কাছ থেকে কাজের জন্য পার্সেন্টেজ নিই না, কমিশন খাই না। প্রমোশন দিয়ে টাকা নিচ্ছি না। কাউকে বদলি করে টাকা খাওয়া, সেটাও এখন তো বন্ধ। এক সময় তো চিফ ইঞ্জিনিয়ার হতেও টাকা লাগত। প্রমোটেড হতেও টাকা লাগত। সেটাও তো নেই না। তাহলে অসুবিধাটা কোথায়। কেন দায় বহন করতে হবে? এসব ছবির পরিবর্তন হলে অন্য যেসব সমালোচনা আছে তা একটু চেষ্টাতেই আমরা অতিক্রম করতে পারব।’

‘ছাল-বাকল উঠে গেলে রাস্তা করার কি দরকার’

মতবিনিময় সভায় দেশের সড়কের হাল অবস্থা নিয়ে খেদোক্তিও ঝরে মন্ত্রীর কণ্ঠে। নির্মাণের পর এক পশলা বৃষ্টিতেই যদি ছাল-বাকল উঠে গিয়ে রাস্তা না থাকে তাহলে সেই রাস্তা করার দরকার আছে কিনা সে প্রশ্নও রেখেছেন।

বলেন, ‘রাস্তার জন্য বড় বড় বরাদ্দ। তারপরও কেন রাস্তা ছেঁড়া কাঁথার মতো হবে? রাস্তা নির্মাণ হলো, এক পশলা বৃষ্টি হলো, রাস্তা থাকে না। ছাল-বাকল সব উঠে যায়। তাহলে এই রাস্তা করার দরকার কি?’

‘কিন্তু কিছু দিন গেলেই নানান সংকট দেখা দেয়। কোথাও গর্ত, কোথাও দেবে যায়, ছেঁড়া কাঁথার মতো রাস্তায় ফাটল দেখা যায়। এসব কেন হবে?’

সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে ওভারওয়েট একটা প্রবলেম, সেটা সবাই জানি। তাই বলে এত দ্রুত কেন রাস্তার বেহাল দশা হবে? নির্মাণ কাজের যে ত্রুটি আছে, যথাযথ মানের রাস্তা তৈরি করার জন্য সরকারের যে নির্দেশনা, তা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে হবে।’

‘আমার নিজের জেলার বেগমগঞ্জেও একটা সড়কের কাজে ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছিল। অভিযোগ পাবার পর তদন্তেও সেটা প্রমাণিত হয়। মন্ত্রীর নিজের এলাকাতেও যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অন্য এলাকায় কী অবস্থা হতে পারে?’

‘সতর্ক থাকুন, এখন কোনো কিছু হাইড করা যায় না’

সওজের প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক ও কর্মকর্তাদেরে উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘কাজের কোয়ালিটি খারাপ হলে দায় নিতেই হবে। আজকাল কিন্তু ফেসবুকে লোকজন রাস্তার ছবি তোলেন। ভোগান্তির ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেন। কোনো কিছু আর হাইড করা যায় না। মুহূর্তেই ভোগান্তির তথ্য প্রচার পায়। সুতরাং অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। কাজের ব্যাপারে মনোযোগী থাকা দরকার।’

ঈদের আগে সব ভাঙা রাস্তা মেরামতের নির্দেশ

রমজানের ঈদের আগেই সব ধরনের ভাঙা রাস্তা মেরামত করার তাগিদ ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তা মেরামত ও কাজের কোয়ালিটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। রমজানের ঈদের আগেই সব ধরনের ভাঙা রাস্তা মেরামত করতে হবে। চলতি কাজ শেষ করতে হবে। মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন, রাস্তা ইউজেবল (চলাচলে উপযোগী) করতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন সড়কের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করেন মন্ত্রী। সভায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, সওজের ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস উইং, টেকনিক্যাল সার্ভিসেস উইং, ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং, পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইং ও যান্ত্রিক উইংসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/ডিএম