চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্রোকলির বাণিজ্যিক চাষে সাফল্য

জহুরুল ইসলাম জহির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:২২

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে উচ্চ মূল্যের পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সবজি ব্রোকলির চাষ। আর তাতে বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন এখানকার চাষিরা। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় ব্রোকলি চাষে ঝুঁকছেন এই জেলার অনেক চাষি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যানসার প্রতিরোধী অন্যতম এই সবজি চাষে ফিরবে কৃষকের ভাগ্য। আর বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাওয়ায় আগামী দিনে উৎপাদন পর্যায়ে ব্রোকলি চাষ সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলছেন কৃষি বিভাগ।

ফুলকপির মতো দেখতে সবুজ সবজি ব্রোকলি উন্নত বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এটি অপ্রচলিত সবজির তালিকায়। তবে লাভজনক এই সবজির আবাদ ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে এখানে। ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ভোক্তাপর্যায়ে এর চাহিদা বাড়ছে দিন দিন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগের উদ্যোগে গত দুই বছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষে কাক্সিক্ষত সাফল্য পাওয়ায় এবার বাণিজ্যিকভাবে তিন হেক্টর জমিতে ব্রোকলি চাষ করা হয়।

শ্যামপুরের ব্রোকলি চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রোকলির বাজার নিয়ে প্রথম দিকে সংশয় ছিল। আমি এবার এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। তাতে চার হাজার ব্রোকলির চারা লাগিয়েছিলাম। চাহিদা বাড়ায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষের পরিমাণ বাড়াব।’

রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় বলে ব্রোকলি অনেকটাই কীটনাশকমুক্ত বলে জানান চাষি কামরুজ্জামান। বলেন, ‘অন্যান্য কপি গোত্রের মতোই এর চাষাবাদ পদ্ধতি। চারা তৈরি থেকে মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে উত্তোলনযোগ্য। বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদিত ব্রোকলি বিক্রি করে আয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

বর্তমানে বাজারে প্রতিটি ব্রোকলি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়।

স্ট্রবেরি, বিভিন্ন জাতের কুল ও পেয়ারা চাষ করে সফলতা পাওয়ার পর এবার তিন বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ব্রোকলির চাষ করেন কৃষক নজিবুর রহমান। প্রথমে ব্রোকলি চাষে কাক্সিক্ষত সফলতা পাননি তিনি। এ সময় পাশে এসে দাঁড়ায় উপজেলা কৃষি বিভাগ। এরপরেই আসে সফলতা। তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয় স্থানীয় কৃষকরা। লাভজনক এই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। এরপর থেকে এখানে ব্রোকলির বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

আব্দুল সামাদ নামের একজন চাষি বলেন, নজিবুর রহমানের চাষ দেখে কৃষকের মাঝে সম্ভাবনাময় এবং নতুন সবজি হিসেবে সাড়া পড়েছে ব্রোকলি চাষের। তারা আশা করছেন, ব্রোকলির চাহিদা বাড়ায় এবং দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে এ সবজি চাষে বিপ্লব ঘটবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম আমিনুজ্জামান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া ব্রোকলি চাষের জন্য উপযোগী। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় ‘ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম-২’(এনএটিপি-২) এর আওতায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ, কৃষক পর্যায়ে উচ্চমূল্যের এই ফসল উৎপাদন ও প্রদশর্নীর উদ্যোগ নেয়। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও ক্যানসার প্রতিরোধী ব্রোকলি একটি নিরাপদ সবজি। আর নতুন সবজি হিসেবে এর বাজারজাতকরণে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ।

শিবগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম আজম কনক বলেন, কৃষকদের উদবুদ্ধ করে এই ব্রোকলি চাষ শুরু হয়। এখন তা সফল চাষ বলে গণ্য হতে যাচ্ছে।

বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাওয়ায় আগামীতে উৎপাদন পর্যায়ে ব্রোকলি চাষ জনপ্রিয় ও এর সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হুদা। তিনি বলেন, ব্রোকলি চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে কৃষি বিভাগ।

(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :