খালেদা ‘ঘুমিয়ে’, পেছাল অভিযোগ গঠনের শুনানি

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫৬ | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:৫৭

আদালত প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে থাকার কারণে তাকে আদালতে হাজির করতে না পারায় নাইকো দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। আগামী ৩ মার্চ আবার শুনানির দিন ঠিক হয়েছে।

পুরান ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত বিশেষ আদালতের অভিযোগ গঠনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি নেত্রী আসেননি। আর কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শুনে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান এই আদেশ দেন।

বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় মামলার কার্যক্রম শুরু হলে খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত অসুস্থ। গত ১২ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসার তাঁর জন্য আবেদন করেছিলাম। আদালত এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিল করতে বলেছিলেন। আমরা দুইদিন পরে উচ্চ আদালতের আদেশ দাখিল করেছি। আজ (বুধবার) ম্যাডাম অসুস্থতার জন্যই আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি।’

ওই সময় বিচারক আদালতে উপস্থিত ডেপুটি জেলার শাহরিয়ারকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত করা হয়নি। জবাবে বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) ঘুম থেকে এখনো ওঠেননি। তাই তাকে আনা সম্ভব হয় নাই।’

এরপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘সুস্থ কোন মানুষ ১২টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকতে পারে না। অসুস্থতাজনিত ঘুমের কারণেই তিনি আদালতে আসতে পারেননি। তাই দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে আদেশ দেয়া প্রয়োজন।’

এ সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থ থাকলে আমাদের চিকিসার বিষয়ে কোন আপত্তি নেই। তবে আদালত জেলকোড আইনের বাহিরে যেতে পারেন না। জেল কোড অনুযায়ী আদালত আদেশ দিতে পারেন।’

এরপর বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ, সেটা সবাই জানেন। কোন সুস্থ মানুষ তো হুইল চেয়ারে করে আদালতে আসবেন না এবং দুপুর ১২ পর্যন্ত ঘুমিয়েও থাকবেন না। আদালত তাকে দেখেছেন। তিনি দিন দিন মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তার জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।’

জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, উনার (খালেদা জিয়া) ঘুম ভাঙেনি, তাই আদালতে হাজির করা যায়নি। অসুস্থতার কথা একবারও বলা হয়নি।’

দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক বলেন, ‘যেহেতু আসামির অনুপস্থিতে চার্জ শুনানি করা যায় না, তাই পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩ মার্চ ধার্য করা হলো।’

চিকিৎসার বিষয়ে আদেশ পরে দেবেন বলে জানিয়ে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক।

এর আগে মামলাটিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে ৭ টি ধার্য তারিখ চার্জ গঠনের শুনানি হয়। তবে মামলাটিতে এখনো খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি হয়নি।

মামলার অপর আসামিরা হলেন, তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একে এম মোশাররফ হোসেন ও সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া (সিলভার সেলিম),  জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম,  নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক।

২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটির তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

 

এর বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট নি¤œ আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে। ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল খারিজ করে স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করে।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডিয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ অভিযোগে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে মামলাটি করা হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরো তিনটি মামলা চলছে। আর দুটি মামলায় তিনি এরই মধ্যে ১৭ বছরের কারাদ- এবং জরিমানার আদেশ শুনেছেন।

ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/আরজেড/ডব্লিউবি