গাইবান্ধায় অর্ধশতাধিক শহীদ মিনারের জীর্ণ দশা

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৬

জাভেদ হোসেন, গাইবান্ধা

গাইবান্ধায় মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত অর্ধশতাধিক শহীদ মিনারের অবস্থা এখন বেহাল। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে অনেকগুলো ভেঙে পড়ছে। অযত্ন-অবহেলায় রক্ষা হচ্ছে না ভাষা শহীদদের স্মৃতি। বরাদ্দ না পেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও শহীদ মিনারগুলো সংস্কার করতে পারছে না। এতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস পালনে ঘটছে ব্যাঘাত।    

জেলার সদর উপজেলা কুপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বারান্দায় শহীদ মিনারের অবস্থা করুণ। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে।

একই ইউনিয়নের পশ্চিম কুপতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েও দেখা মিলে একই চিত্র। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ঢাকাটাইমসকে জানান, ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা গিনি শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন। এরপর কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় শহীদ মিনারটি এভাবেই পড়ে রয়েছে।

বিদ্যালয়ের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবার বরাদ্দ পেলেই শহীদ মিনারটির কাজ শুরু হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কারণেই শহীদ মিনারটির এমন অবস্থা। এবারের ২১ ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস যথাযথভাবে পালন করতে না পারার আক্ষেপ তার কণ্ঠে।

এদিকে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের লেংগা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটিরও একই অবস্থা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হক জানান, সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় শহীদ মিনারের এমন অবস্থা।

সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে হাটের ভেতরে রয়েছে একটি শহীদ মিনার। এ শহীদ মিনারটির অবস্থা বেহাল। পড়ে আছে অযত্নে। লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদল বলেন, এলজিইডিতে বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ পেলে এক মাসের মধ্যেই শহীদ মিনারের কাজ শুরু করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি এই শহীদ মিনারটি কোনো সংস্কার করা হয় না। মাতৃভাষা দিবস কিংবা ২৬ মার্চ উপলক্ষে এই শহীদ মিনারে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৮নং ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে অবস্থিত শহীদ মিনারটির জীর্ণ দশা। শহীদ মিনারটির কিছু অংশ পুকুরে ভেঙে পড়ছে। এর পাশেই রয়েছে গণশৌচাগার ও ধোপাডাঙ্গা বাজার। এ শহীদ মিনারটিও দীর্ঘদিন হলো কোনো সংস্কার করা হচ্ছে না।

এব্যাপারে ধোপাডাঙ্গা চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান রাজু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে কোনো বরাদ্দ নাই। ফলে শহীদ মিনারটি সংস্কার করতে পারছি না। বরাদ্দ পেলেই শহীদ মিনারটির কাজ শুরু করা হবে।

অপরদিকে জেলা পুলিশ লাইন সংলগ্ন গা ঘেঁষে বোর্ডবাজারে মেইন সড়কে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করায় শহীদ মিনারটির গুরুত্ব হারিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। মাঠ না থাকায় অনেকেই এই শহীদ মিনারে আসেন না। ফলে মাতৃভাষা দিবস এখানে পালন হয় না।

দীর্ঘদিন আগে নির্মিত শহীদ মিনারগুলো ঘিরে বিভিন্ন উপজেলার সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও এখন সেখানে কেউ আর যায় না। ফলে স্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে শহীদ মিনারসহ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস।

এব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিসার এনায়েত আলী ঢাকাটাইমসকে জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শতভাগ শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। যেগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে তা সংস্কার করা হবে। আর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/জেবি)