পড়ে ছিল চার বন্ধুর মাথার খুলি

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:০৭ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

পুরান ঢাকার চকবাজারে ব্যবসা করতেন চার বন্ধু। ব্যবসায়িক কাজ শেষে রাতে চারজন একসঙ্গে আড্ডা দিতেন কিছুটা সময়। এরপর ফিরে যেতেন নিজ নিজ বাড়িতে। কিন্তু বুধবার কাজ শেষে কিছুটা সময় আড্ডা দেওয়া হলেও ঘরে ফিরতে পারেননি তারা। চকবাজারের ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের সব গল্প আর স্বপ্ন। চিহ্ন হিসেবে রেখে গেছে পোড়া চারটি মাথার খুলি।

আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া চার বন্ধু হলেন মঞ্জু, নাসির, হীরা ও আনোয়ার।

জানা গেছে, চকবাজারে পারিবারিক ওষুধের ব্যবসা ছিল মঞ্জুর। ছুড়িহাট্টা জামে মসজিদের পাশে হাজি ওয়াহেদ ম্যানশনের উল্টো দিকে ছিল তার ওষুধের দোকান ‘হায়দার মেডিকো’। চকবাজারেই ইমিটেশন গহনার ব্যবসা ছিল হীরার। অন্য দুই বন্ধুর মধ্য নাসিরের ছিল প্লাস্টিক সামগ্রী এবং আনোয়ারের ছিল ব্যাগের ব্যবসা।

ব্যবসায়িক কাজ শেষে প্রতিদিন হায়দার মেডিকোতে বসে আড্ডা দিতেন চার বন্ধু। করতেন নানা সুখ, দুঃখের গল্প। প্রতিদিনের মতো গতকালও চার বন্ধু আড্ডায় বসেন। এরপরই আগুন কেড়ে নেয় তাদের চার প্রাণ।

মঞ্জুর ভাই লিটন জানান, বিকালেই ভাইয়ের সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়। প্রতি রাতে চার বন্ধু মিলে ফার্মাসিতে আড্ডা দিত। বুধবারও তারা আড্ডায় মিলিত হয়। আগুন লাগার পর তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে লিটন বলেন, তাদের ফার্মেসির সামনেই একটি গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এ সময় আতঙ্কিত লোকজন যখন ছুটোছুটি শুরু করে তখন বিস্ফোরণ থেকে বাঁচতে মঞ্জু ও তার তিন বন্ধু দোকানের ভেতর ঢুকে শাটার লাগিয়ে দেয়। এরপর যখন আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে যায় তখন আর তারা সেখান থেকে বের হতে পারেনি।

লিটন আরও বলেন, রাত তিনটার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে হায়দার মেডিকোর ভেতরে পাওয়া যায় পোড়া চারটি মাথার খুলি। যেহেতু তারা প্রতি রাতে এখানে আড্ডা দিত, সেহেতু চারটি খুলিই বলে দিচ্ছে, এটা তাদের।

বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। বিকট শব্দে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ভবন ছাড়াও বেশ কয়েকটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া রাস্তায় থাকা বেশ কয়েকটি গাড়িতেও আগুন লাগে। ওয়াহিদ ম্যানসনের নিচতলায় প্লাস্টিকের গোডাউন এবং পারফিউমের গোডাউনে আগুন ধরায় তা দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনলে রাত চারটার দিকে হায়দার মেডিকোতে গিয়ে পুরো দোকান পুড়ে ছাই হওয়া অবস্থায় দেখতে পান চার বন্ধুর স্বজনরা। দোকানের কোনো মালামাল কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। মেঝেতে কেবল পড়ে আছে কিছু পোড়া দেহাবশেষ। যার মধ্যে চারটি মাথার খুলিই কেবল সনাক্ত করা যায়।

ঢাকা টাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/এমআর