স্বজনদের খোঁজে পাগলপ্রায় বহুজন

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৩০ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫৪

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

পুনার ঢাকার চকবাজারে আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনের মরদেহগুরোর অধিকাংশই শনাক্ত করা যাচ্ছে না। আর স্বজন হারা মানুষরা খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয় মুখকে।

নিখোঁজদের খুজছে সকাল থেকেই তাদের স্বজনরা পুরনো ঢাকার চুড়িহাট্টা এলাকায় ভিড় করছেন।

চুড়িহাট্টা মোড়ে মুদির দোকানে কাজ করতেন ১৮ বছর বয়সী মো. পারভেজ।  ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার বাবা মো. আলমগীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, আগুনের ১০ মিনিট আগে বাসায় খাওয়ার জন্য  ছেলেকে তিনি বাসায় পাঠান। আগুনের সময় নিজে দোকানের ভেতরের দিকে থাকা পানির টাংকিতে আশ্রয় নেন।  আগুন  নিভে যাওয়ার পর নিজে অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে আসেন। কিন্তু ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ছেলে পারভেজ নিখোঁজ রয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে একাধিকবার খুঁজেও পারভেজকে পাওয়া যায়নি। বলেন, ‘ছেলেকে বাসায় পাঠাইলাম খাওয়ার জন্য। নিজে পানির টাংকির ভিতরে ঢুইকা ছিলাম। কপাল জোরে বাইচা গেছি। কিন্তু আমার পোলায় নাকি  বাসায় যায়  নাই’

চুড়িহাট্টা মোড় দিয়ে রিকশা করে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা এনামুল হোসেন। তাসফিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক এনামুল হক তাদের দোকানের কর্মচারী তুষারকে নিয়ে রিকশায় করে দোকানে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর যে যার মত ছুটে পালায়। ১৮ বছর বয়সী তুষার কোনো ভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই  নিখোঁজ এনামুল হোসেন।

তুষার বলেন, ‘যহন বিস্ফোরণ হয়, তহন যে যার মত দৌড় দিছে। হ্যায় (এনামুল হোসেন) একদিক গেছে, আমি একদিন গেছি। এহন আর হ্যারে খুইজা পাওয়া যাইতাছে না।‘

বাবার ছবি হাতে চুড়িহাট্টা এলাকায় এসেছেন মেয়ে নাসরিন আক্তার। মুখে বাবার জন্য আকুতি, চোখে কষ্টের জল। বাবার বন্ধুর থেকে শুনেছেন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ  তিনি  এই এলাকায় ছিলেন। ঘটনার পর থেকে তিনি বাসায় ফেরেননি। বাবাকে খুঁজতে আশপাশের সকল হাসপাতালেও খোঁজ খবর নিয়ে ব্যর্থ  হয়ে শেষমেষ বাবার ছবি হাতে ঘুরে ফিরছেন চুড়িহাট্টার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে।

নিখোঁজ জয়নাল আবেদিন বাবু  চুড়িহাট্টার পাশে ২৬ আজগর লেনের বাসিন্দা।

আগুনের ঘটনায় ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে খুঁজতে এসেছেন শিরিন আক্তার। তার সব ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে রাসায়নিকের গুদামের ওপর। বলেন, ‘কেমিক্যাল না থাকলে আগুন এত বাড়ত না।  এত ক্ষতিও হইত না।‘

সে সাথে সারা দেশ থেকে সিলিন্ডার বন্ধ অথবা নিরাপদ সিলিন্ডার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি দাবি  জানান এই নারী।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করতে কাজ করছে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। সংগঠনটির ফিল্ড অফিসার মাহবুবুল হক ঢাকাটাইমসকে জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারা নিখোঁজদের তালিকা তৈরি করছেন।

বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে একটি টিম চুড়িহাট্টায়, আর একটি টিম ঢাকা মেডিকেলে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত এখানে আমাদের কাছে পচিশ জন নিখোঁজের তথ্য এসেছে।’

ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/কারই/ডব্লিউবি