‘একুশের চেতনা ধারণ করলে দুর্নীতি থাকত না’

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া মহান একুশের অন্যতম চেতনা। প্রকৃত অর্থে একুশের চেতনা ধারণ করলে দেশে দুর্নীতি থাকত না বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা ইতিহাস জানি কিন্তু তা মানি না, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয় জানি, কিন্তু নিই না। একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন এবং চরম অব্যস্থাপনার বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে সমন্বিত প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ। আমরা এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলে আমাদের এই পবিত্র মাটিতে প্রতিটি সংস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির বাসা বাঁধতে পারতো না।’ 

বৃহস্পতিবার দুদক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মহান একুশে উপলক্ষে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা কেন নির্ধারিত সময়ে অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত সম্পন্ন করতে পারছেন না। সব একই সূত্রে গাথা। এর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তীব্র প্রতিবাদ নেই। তবে অবশ্যই প্রতিবাদ হবে। আমরা ঠিক মতো কাজ না ররে এমন প্রতিবাদ হবে যা কেউ ঠেকাতে পারবেন না। ৫২ এর প্রতিবাদের প্রায় ১৯ বছর পরে ৭১ এর প্রতিবাদ সবকিছুকে ছাপিয়ে একটি সর্বাত্মক জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে।’ 

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দেশ পেয়েছি , স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা জনগণের রোষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আরেকটা প্রতিবাদ না চাইলে অবশ্যই আমাদেরকে আমিত্বের প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সবসময় আমি ভালো থাকবো, আমার সন্তান ভালো থাকবে, আমিই শ্রেষ্ঠ- এই মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। আমরা কীভাবে ভালো থাকতে পারি , আমাদের সন্তানেরা কীভাবে ভালো থাকবে এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।’ 

প্রদর্শনেচ্ছা থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ কিংবা সংস্থার শ্রেষ্ঠত্ব এবং আমিত্বের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব রয়েছে। ফলে বিভিন্ন বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার পরিবর্তে অসহযোগিতার মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। সবাই মিলে একই লক্ষ্য অর্জনে সম্মিলিতভাবে কাজ না করলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব।’

‘সব পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং এটি হলো ২১ এর চেতনার শিক্ষা। আজকের আলোচনা সভা তখনই স্বার্থক হবে, যদি আমরা সবাই সময়মতো সবার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করি এবং জনসেবায় আত্মনিয়োগ করি।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘অনেকের মতো দুর্নীতির সংজ্ঞাটা আমরাও জানি। নীতির বাইরে যা কিছু করা হয়, তাই দুর্নীতি এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের এগুলো দেখার আইনি দায়িত্ব রয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোতে যারা সময়মতো সরকারি সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের বেতন থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টিও সংশ্লিষ্টরা ভাবতে পারেন।’ 

তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কাছে যেসব নাগরিক আসেন তাদের প্রত্যেককে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করতে হবে। আপনারা যদি সময় মতো অনুসন্ধান বা তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন তাহলেই অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত সম্মানিত বোধ করবেন।’ 

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভুল স্বীকার করা লজ্জার কোনো বিষয় নয়। তবে ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এটা করা না হলে বিষয়টি অবশ্যই লজ্জার।’ অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং ইচ্ছাকৃত ভুলের ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা অনুধাবন করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তাই সব ভুলকেই অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।’

আলোচনা সভায় দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান, দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখত, দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) সারোয়ার মাহমুদ, পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, উপপরিচালক তালেবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/এসপি/জেবি)