জনমুখী বননীতি এখন বনবিনাশি

জাতীয় বন সম্মেলন হয় না ৪২ বছর

এনায়েতুর রহিম, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিবেদক
| আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫০ | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫৫

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৭ সালে প্রথম জাতীয় বন সম্মেলনের পর গত প্রায় ৪২ বছরে আর হয়নি। ১৯৭৯ সালে ঘোষিত দেশের প্রথম জনমুখী বননীতিও পরিণত হয়েছে বনবিনাশি রুপে। ফলে সামগ্রিক ও সমন্বিত উন্নয়ন কৌশলকে উপেক্ষা করে গতানুগতিক চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটায় বন সম্প্রসারণের বদলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ ও প্রকৃতিবাদীরা।

বন ও প্রকৃতির লেখক-সাহিত্যিক বিপ্রদাশ বড়–য়া বলেন, শতাব্দীর ঐতিহ্যম-িত সরকারি প্রতিষ্ঠান বন বিভাগ। প্রাকৃতিক সম্পদ এদেশের বন নবায়নযোগ্য বা পুনরুৎপাদনশীল সম্পদের অফুরন্ত উৎস। বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীরা মানুষকে সুস্থ পরিবেশে বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী উপহার দেয়।

অন্যদিকে বন সম্মেলন মানে বন ব্যবস্থাপনার আধুনিক যুগের সূচনা। বন উন্নয়নে সমাজের বৃহৎ অংশের প্রতিনিধিত্বকে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা ও বন সংরক্ষণ এবং বনভূমির অবৈধ দখল, কাঠ চুরি-পাচার ও বন্যপ্রাণী নিধন প্রতিরোধে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণসহ সামাজিক বনায়নে অবদানের স্বীকৃতি দেয় বন সম্মেলন।

তিনি আরও বলেন, বননীতির কার্যকর প্রয়োগ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাতীয় বন সম্মেলন অপরিহার্য এবং এ সম্মেলনের মাধ্যমে বননীতির সফল প্রতিফলন সম্ভব। বন উন্নয়নে ব্যর্থতা থেকে বন অধিদপ্তরে বন সম্মেলন নিয়ে ভীতি কাজ করছে বলেও মনে করেন তিনি।

১৯৭৭ সাল থেকে কর্মরত দৈনিক ইত্তেফাকের উত্তর চট্টগ্রামের প্রতিনিধি সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে আমার বসতবাড়ি। ব্রিটিশ প্রবর্তিত বননীতিতে ঔপনিবেশিক মানসিকতার পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলনের মাধ্যমে বনের রাজস্ব আদায় করা হয়। তার বিপরীতে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রবর্তিত বননীতি ছিল টেকসই উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উপযোগী। কিন্তু তার কার্যকর প্রয়োগ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন এখনো সম্ভব হয়নি।

বন উজাড়ের জন্য বর্তমান বননীতিকে দায়ী করে তিনি বলেন, এই বননীতি এখন বনবিনাশি। বননীতি নতুনভাবে সাজানো উচিত।

সরকারি বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর মতে, বন বিনাশের কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক দারিদ্র্য, ভূমিহীন মানুষের বনের দিকে অভিগমন, জুমচাষ এবং বন সম্পদের অনুপযুক্ত ব্যবহার। বনবিনাশ, বনের বাণিজ্যিকীকরণ, নগরায়ন, সরকারি বনভূমির মালিকানা ও ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন, বিদেশি প্রজাতির আগ্রাসন, কলা ও আনারসের আগ্রাসন, রাবার চাষ ইত্যাদির ফলেও পরিবেশের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। বন বিনাশ বননির্ভর স্থানীয় মানুষের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তাদের কৃষি ও মনোজগতের পরিবর্তন আনছে।

বন বিনাশের পেছনে বন প্রশাসনের নানাবিধ দুর্বলতা, যেমন দক্ষ জনবল, প্রয়োজনীয় বাজেট ও লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব, বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি ইত্যাদিকে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে।

বন বিভাগের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরতে প্রতি বছর বন সম্মেলনের যৌক্তিকতা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরাও। তারা বলছেন, বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার নেতিবাচক প্রভাব কমানো ও টেকসই পরিবেশের উন্নয়নে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের সংরক্ষণ ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার বন বিভাগে বিদ্যমান দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জাতীয় বন সম্মেলন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও বন্যপ্রাণী বিভাগের প্রফেসর ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, মূলত দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতা ও সদিচ্ছার অভাবই বন বিভাগের বিদ্যমান অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির জন্য দায়ী। যুগোপযোগী বননীতির অভাব, স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকা এবং বিভিন্ন বন বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতাও এক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। বন সম্মেলনের মাধ্যমে বিভাগটি গতিশীল, কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। নীতি নির্ধারণে ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐকমত্য প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :