আমি কি ভুলিতে পারি

মাসুদ কামাল
 | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:০৫

বছর কয়েক আগের কথা। একুশে ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত। অত বেশি রাতও নয়, সাড়ে ছয় কি সাতটা বাজে। লন্ডন থেকে মোয়াজ্জেম এসেছেন। শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা দু জন। অপেক্ষা করছিলাম প্রভাসের জন্য। ছয়টার মধ্যে ওরও আসার কথা ছিল। আমরা একসময় একই পত্রিকায় কাজ করতাম। এখন সবাই যার যার জায়গায় ব্যস্ত। মোয়াজ্জেম দেশে এসেছেন এবার দিন কয়েকের জন্য, কিন্তু দেখা হয়নি। সেজন্যই একুশ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যাকে বেছে নিয়েছি আমরা। ইচ্ছা ছিল শাহবাগ থেকে হেঁটে হেঁটে তিনজন মিলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবো। ভোর থেকে সেখানে অনেক ভিড় ছিল, সন্ধ্যার পর নিশ্চয়ই কমে যাবে। এই আশায় সন্ধ্যাকে বেছে নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু প্রভাস আসছিল না। ফোন করে জানতে পারলাম- জ্যামের কারণে রাস্তায় আটকে গেছে, শাহবাগে কখন পৌঁছতে পারবে, কোনো ঠিক নেই। আমরা হতাশ হলাম। তবে বাস্তবতাকে মেনেও নিলাম। শাহবাগেও প্রচুর মানুষ, গায়ে গায়ে লেগে আছে। চারদিকে হইচই। এত শব্দ যে, দু হাত দূরে দাঁড়িয়েও চিৎকার করে কথা বলতে হয়। এর মধ্যেই টুকটাক কথা বলছিলাম। বুঝতে পারছিলাম, আজ আর তিনজনের একত্রিত হওয়া হবে না। ভিড় ঠেলে শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত যাওয়ার আগ্রহও যেন ক্রমেই কমে আসছিল। হঠাৎই কি মনে হলো কে জানে, আমি মোয়াজ্জেমকে জিজ্ঞাসা করলামÑ আচ্ছা, একুশে ফেব্রুয়ারির এই আয়োজন, আপনি এটাকে কীভাবে দেখেন?

মোয়াজ্জেম সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলেন- আমার মনে হয়, এটা একটা রিচুয়াল।

আমি থতমত খেয়ে গেলাম। আশপাশে তাকালাম। মোয়াজ্জেমের কথা কেউ শুনে ফেলেনি তো? রিচুয়াল আর চেতনার মধ্যে তো অনেকটাই পার্থক্য। কার মনে কি আছে সেটা ভিন্ন কথা, কিন্তু মুখে সকলকে ‘চেতনা’ বলতেই শুনি আমরা। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্নও করা যাবে না। যদি কেউ প্রশ্ন করে, জানতে চায়Ñ চেতনাই যদি হবে তা হলে তার বাস্তবায়ন কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কি কেউ আছে কোথাও? তবে এটা ঠিকÑ উত্তর না পেলেও প্রশ্ন করার অপরাধে হেনস্তা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আমি মোয়াজ্জেমের দিকে তাকালাম, তার কোনো ভাবান্তর নেই। যেন নিজের বিশ্বাস থেকেই কথাটা বলেছে। সে বলছিলÑ দেখুন, আমরা কি আসলেই একুশে ফেব্রুয়ারিকে একটা অনুষ্ঠানসর্বস্ব উৎসবে পরিণত করে ফেলিনি?

সে রাতে মোয়াজ্জেমের সঙ্গে আর বেশি সময় থাকা হয়নি। দু দিন পরেই সে চলে গেছে। কিন্তু তার সেই প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে। প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে প্রতিবছরই একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমি শাহবাগ আর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাই। মিলাতে যাই, একুশে ফেব্রুয়ারিকে সবাই কীভাবে পালন করছে।

কেবল একুশে ফেব্রুয়ারি-ই কেন, আমাদের ভাষা আন্দোলনটাই কীভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে? একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিতে দল বেঁধে আমরা সেই বিখ্যাত গানটি গাই, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ গানটি গাই, কিন্তু আসলেই কি গাই? নাকি কেবল উচ্চারণ করি? নাকি অন্যরা উচ্চারণ করে, আমরা কেবল ঠোঁট মেলাই?

একুশ আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছে। কিন্তু আমরা তা থেকে নিতে পেরেছি কতটুকু? অথবা অন্যভাবে বলতে গেছে, তা থেকে নিয়ে ধারণ করতে পেরেছি কতটুকু? আমাদের জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছি কতটুকু?

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির দিকে তাকালে আমরা কি দেখি? আন্দোলনটা ছিল আমাদের মাতৃভাষার। মাতৃভাষাকে আমরা অপমানের হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছি। আসলে আমরা নই, আমাদের পূর্বসূরিরা। কেবল অপমানের হাত থেকে বাঁচানোই নয়, মাতৃভাষাকে সম্মানিত করতে চেয়েছেন তারা। ওরা, শাসকরা (কেবল পাকিস্তানিরা নয়, এদেশের শাসকরাও) চেয়েছিল উর্দুকে একক রাষ্ট্রভাষা করতে। আমরা কিন্তু ওদের মতো উদ্ধত ছিলাম না, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করিনি। বলেছিÑ বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তখন পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল, পূর্ব পাকিস্তান (আজকের বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমানের পাকিস্তান)। বাংলাকে সম্মান দিতে গিয়ে আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষাকে অবজ্ঞা করিনি। তার প্রমাণও আমরা দিয়েছি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের দুই বছরের মাথাতেই ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় এলো। আওয়ামী লীগের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে যুক্তফ্রন্ট। তখন পার্লামেন্টে বা গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই যে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আমরা জয়ী হতে শুরু করলাম, সেটাই চলতে থাকলো ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হলাম, একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রÑ বাংলাদেশের জন্ম হলো। স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা হলো রাষ্ট্রভাষা। এখন আর বাংলাকে অবমূল্যায়িত করার জন্য ভিন্ন আর কোনো ভাষার অযাচিত দাপট নেই। সরকারেও এলো জনগণের মধ্যে থেকে ওঠে আসা মানুষজনই। কিন্তু তারপরও কি সর্বস্তরে বাংলা চালু হতে পারলো? স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা পরিকল্পনা নিয়ে হয়তো অগ্রসর হচ্ছিলেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সেটাও হতে দিলো না। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হলো। পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা গিয়ে বসলো ক্ষমতার মসনদে। ধীরে ধীরে আবার হারিয়ে যেতে বসলো বাংলার সেই সম্মান, যা আমাদের পূর্বসূরিরা রক্ত দিয়ে অর্জন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর ‘বাংলাদেশ বেতার’ আবার পরিণত হলো ‘রেডিও বাংলাদেশ’-এ। এটা হলো আগের সেই ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর আদলে। এভাবেই ধীরে ধীরে, কোনো কোনোটি আবার অতি দ্রুত ফিরে গেল আগের আদলে। অভ্যুত্থানের নায়ক ও সুবিধাভোগীরা বুঝিয়ে দিলোÑ কাদের আদর্শে পরিচালিত হচ্ছে তারা।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এর পরের চড়াই উৎরাই খেয়াল করেছে সবাই। দেখেছে ক্ষমতার পালাবদল। সামরিক-বেসামরিক স্বৈরাচাররা কীভাবে মুক্তিযুদ্ধ আর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে পুরোই পাল্টে দিচ্ছে- সেটাও জনগণ দেখেছে। দেখেছে, বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়েছে, দুর্বল প্রতিবাদও হয়তো করেছে, কিন্তু প্রতিকার পায়নি। মাঝে ১৯৯৬ থেকে ২০০১, এই পাঁচ বছর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এলেও এত বছরের জঞ্জাল সরানোর জন্য হয়তো পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ তারা পায়নি। তারপর আবার সেই সরকার এসেছে, যার সরাসরি অংশীদার ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামী। ফলে আবার তারা সবকিছু উল্টে দিয়েছে। ২০০৮-এ যখন আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো, টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকলো এবং আরও থাকার ম্যান্ডেট পেল, তখনই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে শুরু করলোÑ একুশের চেতনা কেন এখনো বাস্তবায়িত হচ্ছে না?

কতগুলো দৃশ্য, কিছু বাস্তবতা খুবই পীড়া দেয়। এই রাজধানী ঢাকা শহরে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, আজ যদি হিসাব করা হয়, শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে কোনটি বেশি প্রভাবশালী? ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা কি দিনকে দিন বাড়ছেই না? পাকিস্তান আমলে, যখন আমরা শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই করেছিলাম, তখনও বাংলা ভিন্ন অন্য ভাষার এতটা দাপট কি ছিল? ইংরেজি মিডিয়ামের দাপট বাড়তে বাড়তে এখন জাতীয় কারিকুলামেও ইংরেজি ভার্সন ঢুকে পড়েছে। এমন একটা ধারণা একেবারে পাকাপোক্ত হয়ে বসেছে যে, বিশ্ব জগতের সঙ্গে তাল মিলাতে হলে ইংরেজি ভিন্ন কোনো উপায় নেই এবং সেই সঙ্গে সেই ইংরেজি কেবল জানলেই হবে না, শিখতে হবে সেটা একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকেই। এমনভাবে শিখতে হবে যেন বাংলাটা ভুলে যাওয়ার উপক্রম হয়। ইংরেজি ভার্সন এখন প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে। এই স্তরগুলোতে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য ছাড়া আর সকল বই-ই ইংরেজি ভাষায়। এমনকি আমাদের ইতিহাস ও সমাজের যে বইটিতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের বর্ণনা আছে, সেটিও আছে ইংরেজি ভাষায়। আমাদের সন্তানরা ইংরেজিতে শিখছে বাংলাভাষার জন্য আত্মত্যাগের কথা।

আজকে যারা পুরো দুনিয়ার সঙ্গে তাল মিলাচ্ছে, কেবল তালই মিলাচ্ছে না পৃথিবীকে বলতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে, দিক নির্দেশনা দিচ্ছেÑ সেই চীন, জাপান, কোরিয়া, জার্মানি, ফ্রান্সÑ তারাও কি শিক্ষার একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াচ্ছে? তাদের জাতীয় কারিকুলামের বিষয়গুলো পড়াতে গিয়ে কি নিজেদের ভাষার পরিবর্তে ইংরেজির আশ্রয় নিচ্ছে? তাহলে আমাদেরকে কেন তেমনটাই করতে হচ্ছে?

বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনার জন্য যে অল্পদিন সময় পেয়েছিলেন, তিনি কিন্তু প্রশাসনিক ভাষা হিসাবে বাংলার প্রচলনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার বাস্তবনা সরকারি অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই। কিন্তু বেসরকারি খাতে কি পাই? এমনকি উচ্চ আদালতেও দেখা যায় না বাংলার ব্যবহার। উচ্চ আদালতের সিংহভাগ রায়ই হয় ইংরেজিতে। কেন ইংরেজিতে রায় দিতে হবে? অনেক বিচারক বলে থাকেন, আইনের বইগুলো ইংরেজিতে, রেফারেন্সগুলো যেহেতু ইংরেজিতে, তাই রায় ইংরেজিতে লিখতে হয়। এমনও শুনেছি, কেউ কেউ বলেছেন- সব জায়গায় চেতনা খাটানো যাবে না! কি বিস্ময়কর অজুহাত! উচ্চ আদালতের রায় যে বাংলায় দেওয়া যায়, তার উদাহরণও কিন্তু আমরা এর আগে দেখেছি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তো অনেকদিন বাংলায় রায় লিখেছেন। তিনি নিজে বাংলায় রায় লেখার জন্য অন্য বিচারকদের উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। উচ্চ আদালতের রায় এখনও মহানন্দে ইংরেজিতে লিখে চলেছেন মহামান্য বিচারকগণ। এখানে একটা কথা বলাই যেতে পারে। এই বিচারকগণ ইংরেজিতে রায় লিখছেন, ইংরেজিতে লিখছেন বলে এক ধরনের আত্মপ্রসাদ অনুভব করছেন, তাদের সকলের ইংরেজি কি খুবই উন্নত মানের? আমার তো বাংলায় লিখলে তারা লেখার মান অন্ততপক্ষে তুলনামূলকভাবে অনেক উন্নত হতো।

আসলে বিষয়টি কেবল সরকারের আদেশ-নিষেধের ওপর নির্ভর করে না। বর্তমানে আমরা সকল দিক থেকেই বাংলার প্রতিকূল একটা পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছি। সমাজের সর্বত্র এমন একটা আবহাওয়া তৈরি করা হয়েছে, বাংলা ভাষার জন্য প্রতিকূল কর্মকা-গুলোকেই আমরা প্রয়োজনীয় এবং কিছু ক্ষেত্রে অপরিহার্য বলে বিবেচনা করছি। বাংলা যেন এখন পরিণত হয়েছে অচ্ছুতের ভাষা। আগে পাকিস্তান আমলে বিজাতীয়রা এই ভাষাকে অবজ্ঞা করতো, আর এখন স্বজাতিরাই প্রতিনিয়ত নিজের মায়ের ভাষাকে অবজ্ঞা করছে। যেকোনো চাকরির জন্য জীবন-বৃত্তান্ত লেখার ক্ষেত্রে বাংলার চেয়ে ইংরেজিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় হাজার গুণ বেশি। কেন? এটা কোন চেতনা? একুশের চেতনার সঙ্গে এর সংগতি কতটুকু?

ভাষা আন্দোলনের শুরুর দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাকে ঠেকাতে শাসক শ্রেণির কাছ থেকে একটা উদ্ভট প্রস্তাব এসেছিল। উর্দুকে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত করার লক্ষ্যে তারা প্রস্তাব করেছিলÑ আরবি কিংবা উর্দু হরফে বাংলা লেখার জন্য। এদেশে জন্মগ্রহণকারী কিছু লোক সে প্রস্তাব সমর্থনও করেছিল। এমন প্রস্তাবের কথা যখন আমরা এখন বই পত্রে পড়ি, প্রস্তাবটির অসারতা কিংবা অযৌক্তিকতার কথা ভেবে বিস্মিত হই। আবার সেই আমিই যখন মোবাইলে মেসেজ লিখতে গিয়ে রোমান হরফে (ইংরেজি অক্ষরে) বাংলা কথা লিখি, তখন বিস্ময় অনুভব করি না। একুশের চেতনার ছিটেফোঁটাও থাকলে হয়তো এমন গড্ডলিক প্রবাহে আমরা গা ভাসাতে পারতাম না।

এর মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারির বড় একটা অর্জন আমাদের হয়েছে। ইউনেসকোর স্বীকৃতির মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত করতে পেরেছি। সারা দুনিয়ার মানুষ ২০০০ সাল থেকে একুশ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করে। ১৯৫২ সালে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন এবং সে বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের যে আত্মত্যাগ তাকে স্মরণ এবং মহিমান্বিত করতেই আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের এই দিবসটির স্বীকৃতি। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বিশাল একটা প্রাপ্তি। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাটাও একবার চিন্তা করা দরকার যে, একুশের সেই ভাষা শহীদগণ কি দিবসের এই স্বীকৃতির জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন? নাকি দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের আকাক্সক্ষাতেই বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। তাদের সেই প্রত্যাশা কি পূরণ হয়েছে?

যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে এর জন্য কাকে দায়ী করবো আমরা। সরকারকে, নাকি আমাদের নিজেদেরকেই? আর এভাবে চেতনার নামে অনুষ্ঠান করতে করতে আমরা কি একুশের সেই মহান উদ্দেশ্য আর আত্মত্যাগকেই ভুলে যাচ্ছি না? এখন কি আর ‘আমি কি ভুলিতে পারি’- এমন উচ্চারণের নৈতিক জোর আছে আমাদের?

মাসুদ কামাল: লেখক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :