ওয়াহেদ ম্যানসনের বেজমেন্টে রাসায়নিকের বিপুল মজুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:২২ | প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৩৪

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুনের ঘটনায় আলোচিত ওয়াহেদ ম্যানসনের বেজমেন্টে (মাটির নিচের কক্ষ) বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের বিপুল মজুদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এখানে আগুন ছড়ালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতো বলে জানিয়েছে তারা।

বুধবার চুড়িহাট্টায় গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আশেপাশের কয়েকটি গাড়ি এবং খাবার হোটেলে গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পরে আগুন ছড়ায় ওয়াহেদ ম্যানসনে। আর সেখানে বিপুল দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসে দাবি করেছেন, ওয়াহেদ ম্যানসনে রাসায়নিকের গুদাম ছিল না। আগুন লেগেছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে।

সরকারি হিসেবে ৬৭ জনের প্রাণহানির একটি বড় অংশই রাস্তা এবং খাবার হোটেলে হয়েছে। বাকিটা হয়েছে ওয়াহেদ ম্যানসনে। সেখানকার তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আবাসিক ব্যবস্থা ছিল। আর নিচতলা ও দোতলায় বিভিন্ন পণ্য মজুদ ছিল।

শুক্রবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের রতন নামে এক কর্মী বেজমেন্টটি খুঁজে পান। সেখানে কেউ মৃত আছেন কি না, তা জানতে তালা খুলে ভেতরে ঢুকতে গিয়েই পাওয়া যায় রাসায়নিকের বিপুল মজুদ।

সেখানে শত শত ড্রাম, বিভিন্ন কন্টেইনার ও প্যাকেটে নানা ধরনের রাসায়নিক পাওয়া যায়।

ওয়াহিদ ম্যানশনের বেসমেন্টের শত শত বস্তা প্যাকেট ও কন্টেইনারে রয়েছে রঙের পাউডার। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এসব পাউডার উচ্চ দাহ্যক্ষমতা সম্পন্ন রাসায়নিক দ্রব্য।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, এই বেজমেন্টে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই ডাইয়িং এবং প্রিন্টিং-এর কাজে ব্যবহৃত হতো।

স্বাভাবিক নিয়মে বেজমেন্টে গাড়ির পার্কিং থাকার কথা। সেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল থাকাও স্বাভাবিক বিষয় হলেও সেটিও মানা হয়নি। বাতাস চলাচলের কোনো ব্যবস্থা সেখানে ছিল না। আর সেখানে ঢোকার একটিই রাস্তা আছে। সেখানে কাজ করে না মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক। ভেতর থেকে চিৎকার করলেও বাইরে থেকে শোনা যাওয়ার সুযোগও নেই।

দমকল কর্মী রতন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে আগুন ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আকার ধারণ করত। আমাদের কষ্ট আরো ব্যাপক হতো। এখানে আগুন লাগলে থামানোর কোনো পথ ছিল না। এগুলো পুড়ে পুড়ে নিজে নিজে আগুন থামত।’

কিছু বস্তার রায়ে লেখা আছে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং কার্বন’। কিছু ড্রামের গায়ে নারায়ণগঞ্জের মেমার্স সফি টেক্সটাইলের নাম লেখা। এগুলো চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে।

বেশ কিছু প্লাস্টিকের ড্রাম এবং বেশ কিছু টিনের ড্রাম রয়েছে। আর কিছু ড্রাম ও বস্তায় আয়রক অক্সাইড, এসিড গ্রিন, আয়রন অক্সাইড রেড প্রভৃতি নাম লেখা আছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রতন জানিয়েছেন, এই গুদামের বিষয়ে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তারা এসেই এসবের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।

২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলিতে আগুনের পর পুরান ঢাকা থেকে সব ধরনের রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। চকবাজার আগুনের পরও আবার সরকারের পক্ষ থেকে একই ধরনের প্রতিশ্রুতি এসেছে। জানানো হয়েছে, কেরানিগঞ্জে রাসায়নিক পল্লী গড়ে তোলার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সালেহ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ‘গোডাউনের ভেতরে পুরো ক্যামিকেলে ভর্তি ছিল। প্রিন্ট এবং ডাইং এর ম্যাটিরিয়ালস ছিল, এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল এখানে মজুদ ছিল। যা প্রচুর পরিমাণ কন্টেইনারে মজুদ করা ছিল। আগুন যদি গোডাউনে লাগত, বেজমেন্টে লাগত বিস্ফোরণে ভয়াবহ অবস্থা হতো।’

শাহিন আলম নামে এক ভবন মালিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'আমরা ব্যবয়ায়ায়ীদের কাচ্ছে জিম্মি। তারা তাদের ইচ্ছা মত মালামাল গোডাউনে রাখে। আমাদের কথা শোনে না। তাদের ক্ষমতার কাছে আমরা কিছু বলতে পারি না।'

আবার পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিন জন স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চকবাজার এলাকায় সেনাবাহিনী দ্বারা অভিযান পরিচালনা করানো হোক। অভিযান পরিচালনা করলে স্থানীয় প্রায় সকল ভবনেই অবৈধ ক্যামিকেল পাওয়া যাবে৷ ’

ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/কারই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :