নিউজিল্যান্ডে ব্যর্থ হলেও বিশ্বকাপে ভালো করবে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:০৯

লিয়াকত আলী ভূঁইয়া

নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে সিরিজে বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। কোনো ম্যাচেই বাংলাদেশ লড়াই করতে পারেনি। ব্যাটিং কিংবা বোলিং কোনোটিতেই উজ্জ্বল ছিলেন না বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা।সিরিজে বাংলাদেশের অর্জন বলতে ছিল সাব্বিরের সেঞ্চুরি ও মিথুনের দুইটি হাফ সেঞ্চুরি।

নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন যেকোনো দলের জন্য কঠিন এটা সত্য। সেখানে বাইরের যেকোনো দল গিয়ে সংগ্রাম করে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ অস্ট্রেলিয়াও নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে হিমশিম খায়। যে কারণে টাইগারদের এমন পারফরম্যান্সে আমি পুরাপুরি হতাশ নই। দুই একটা সিরিজ খারাপ হতেই পারে। যেমন দেখুন, নিজেদের মাটিতে শ্রীলঙ্কার মতো দলের কাছে হোয়াইটয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে। আসলে ক্রিকেটে এমনটা হয়।

তবে হ্যাঁ,নিউজিল্যান্ড সফর থেকে শিক্ষা নিতে পারে বাংলাদেশ।সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশ দলের বড় সমস্যা হচ্ছে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই এই সমস্যা লক্ষ্য করা গেছে। প্রথম দশ ওভারের মধ্যে যদি দল তিন-চারটি উইকেট হারায় তাহলে সেখান থেকে ভালো স্কোর সংগ্রহ করা যেকোনো দলের জন্য কঠিন।

দলের এই ব্যর্থতার মধ্যেও সাব্বির-মিথুনের পারফরম্যান্স আশাব্যঞ্জক। সেই সাথে সাইফউদ্দিন-মিরাজের কথাও বলব। শেষ ম্যাচে সাব্বির যে অবস্থা থেকে সেঞ্চুরি করেছেন সেটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। প্রথম দুই ম্যাচে মোহাম্মদ মিথুন কঠিন অবস্থা থেকে হাফ সেঞ্চুরি করেন।

প্রথম ও শেষ ম্যাচে সাইফউদ্দিন যেভাবে ব্যাটিং করেছে তা দলের জন্য প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশ দল একজন পেস অলরাউন্ডার খুঁজছে। সাইফউদ্দিন হয়তো সামনে দলে স্থায়ীভাবে পেস অলরাউন্ডারের জায়গাটি দখল করে নিবে। শেষ ম্যাচে ৯ নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমে ৩৪ বলে ৩৭ রান করেছিলেন মিরাজ। অর্থাৎ, এমন অবস্থা প্রমাণ করে যে, টপ অর্ডার যদি ভালো একটা ভিত গড়ে দিতে পারে তাহলে শেষের দিক ব্যাটসম্যানরা দলের স্কোর বড় করতে পারবেন।    

টপ অর্ডারে বাংলাদেশের বড় ভরসার নাম তামিম ইকবাল। অথচ তিন ম্যাচেই তিনি ছিলেন ব্যর্থ। প্রথম তিন ম্যাচে তার রান যথাক্রমে ৫, ৫ ও ০। ইংল্যান্ডের মাটিতে তামিমের রেকর্ড ভালো। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তামিম ছিলেন তৃতীয় সেরা রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান। চার ম্যাচ খেলে ২৯৩ রান করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে তার একটি সেঞ্চুরি ও দুইটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে। আশা করি, তামিম বিশ্বকাপে জ্বলে উঠবেন।

বিশ্বকাপ শুরু হতে আর দুই মাস বাকি। বলতে গেলে বিশ্বকাপের আগে এটিই ছিল বাংলাদেশের শেষ সিরিজ। কারণ, বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশের যে ত্রিদেশীয় সিরিজ রয়েছে ওই সিরিজে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা খেলোয়াড়রাই অংশ নিবে।

তাই দলের খেলোয়াড়দের পরখ করে নেয়ার জন্য এটিই ছিল শেষ সুযোগ। যদিও কয়েকদিন পর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিএল) শুরু হবে। সেখানেও খেলোয়াড়রা নিজেদের ঝালাই করে নেয়ার সুযোগ পাবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচ আর ঘরোয়া ম্যাচ তো এক না।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বিশ্বকাপ শুরু হবে আগামী ৩০ মে। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভালো করবে। আশা করি, মাশরাফি বিন মর্তুজার দল সেমিফাইনালে খেলবে। কারণ, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের কন্ডিশন এক না। ইংল্যান্ডে এর আগে বাংলাদেশের ভালো করার রেকর্ড রয়েছে।

২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। ওই সফরে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ চারে উঠেছিল টাইগাররা। এর আগেও ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের জয় রয়েছে। সবমিলিয়ে আমার মনে হয়, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করবে।

লিয়াকত আলী ভুঁইয়া: ক্রিকেট বিশ্লেষক