এরশাদের ফর্মুলায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন সম্ভব

খন্দকার দেলোয়ার জালালী
 | প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:৪১

রোহিঙ্গাদের ঐতিহাসিকভাবে আরাকানি ভারতীয় বলা হয়। যারা শত শত বছর ধরে পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আদি বাসিন্দা। ২০১৬-১৭ সালে মিয়ানমারে রোহঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের পূর্বে আনুমানিক এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বসবাস করত। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ইসলাম ধর্মের অনুসারী, আছে কিছুসংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বি রোহিঙ্গাও। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের আন্দোলনের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা এবং সরকারি চাকরির অধিকার হরণ করা হয়েছে। যদিও নিজ এলাকায় কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করার অধিকার ছিল রোহিঙ্গাদের।

রোহিঙ্গারা ১৯৭৮, ১৯৯১-১৯৯২, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৬-২০১৭ সালে সামরিক নির্যাতন এবং দমনের সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো দমন ও নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। যেখানে গণহত্যার মতো অপরাধের তথ্য প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ এবং উগ্রবৌদ্ধ যুবকদের দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে হাজার হাজার বাড়ি-ঘর।

জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ভেতরে অতি জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের দ্বারা ঘৃণা এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার শিকার হচ্ছে। একই সাথে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী র্কতৃক বিচারবহির্ভূত হত্যা, অবৈধ গ্রেপ্তার, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অপব্যবহারের শিকার হওয়ার পাশাপাশি তাদের জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করছে সেদেশের সরকার। জাতিসংঘের মতানুসারে, রোহিঙ্গাদের ওপর চলা এ নির্যাতনকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের কথিত হামলায় ১২ জন নিরাপত্তা কর্মীসহ ৭০ জন বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার অভিযোগে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারশেন’ শুরু করে। যদিও রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি মিয়ানমার। ‘ক্লিয়ারেন্স অপারশেন’-এ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিহত হন, অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আহত, নির্যাতন ও অগণিত রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাদের প্রায় শতভাগ বাড়ি ঘর।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতে “অপারেশন ক্লিয়ারেন্স” নামে যে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর, তা বিশে^র ইতিহাসে জঘন্য হামলার নিকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে। ২৫ আগস্ট সকাল থেকেই বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবান জেলার বিভিন্ন সিমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে লাখো রোহিঙ্গা নামের মানুষ। এরমধ্যে বান্দরবানের নাইখ্যাংছড়ি উপজেলার তমরু, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার উনচিপ্রাং, থাইংখালী এবং টেকনাফ উপজেলার শাহপরীদ্বীপ দিয়ে লাখো রোহিঙ্গার ঢল নামে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে।

মিয়ানমার সরকারের নির্দেশে সেদেশের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ এবং নাইন সিক্স নাইন সংঘের উগ্র বৌদ্ধ যুবকরা রোহিঙ্গাদের লাখো বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে অসংখ্য নারী, পুরুষ এবং শিশুকে। খুন হবার আগে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে হাজারো রোহিঙ্গা নারী। অনেক হতভাগ্য শিশুই প্রত্যক্ষ করেছে ইতিহাসের জঘন্যতম হামলার ভয়াবহতা। দাউ দাউ আগুনে জ¦লতে দেখেছে নিজ ঘর-বাড়ি। কেউ কেউ বাবাকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে দেখেছে, কেউ মাকে হত্যা হতে দেখেছে। আবার কেউ কেউ মা-বাবা দু’জনের হত্যাকাণ্ডের বিভীষিকাময় লোমহর্ষক স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। কোনো কোনো শিশু মা ও বোনের ওপর পাষবিক নির্যাতনের স্মৃতি এখনো ভুলতে পারছে না। অনেক মায়ের কোল থেকে দুধের শিশুকে কেড়ে নিয়ে চোখের সামনেই আছড়ে হত্যা করেছে শিশুকে মিয়ানমার সেনারা। আবার রোহিঙ্গাদের ঘরে আগুন দিয়ে ছোট ছোট শিশুদের সেই আগুনে ছুড়ে দিয়ে পুড়ে হত্যা করেছে মিয়ানমারের ঘাতকরা। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে সাত হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা শিশু মা ও বাবা দু’জনকেই হারিয়েছে। আর হারিয়ে যাওয়া মা-বাবা’র সংখ্যা ৪৩ হাজার। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে লাখো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে যে যেভাবে পেরেছে। রাত বা দিন ছিলোনা, রোহিঙ্গারা যখন সুযোগ পেয়েছে তখই ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশের ভেতরে। বাংলাদেশ সরকার বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাই ধারণা করতে পারেনি পৈশাচিক হামলার ভয়াবহতা। তাই একই সাথে লাখো মানুষের ঢল ব্যবস্থাপনায় ছিল না কোনো শৃঙ্খলা। স্বজনহারা, শোকাতুর ও আহত রোহিঙ্গাদের ছিল না থাকার ব্যবস্থা, খাবার ও পরিসংখ্যান। কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হৃদয়বানরা দু’হাত খুলে যে সহায়তা দিয়েছে তাতেই ছিল রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচানোর ভরসা। বিশৃংখলা ছিল সর্বত্র।

রোহিঙ্গাদের এমন দুর্দশায় সেপ্টেম্বরের শুরুতে নিজ হাতে রোহিঙ্গাদের হাতে ত্রাণ তুলে কক্সবাজারে ছুটে যান সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেপ্টেম্বরের ১৪ ও ২১ তারিখ উখিয়া ও টেকনাফে নিজ হাতে ত্রাণ বিতরণ করেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আহত ও অসুস্থ রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যক্যাম্প।

এসময় বিশাল সমাবেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ দাবি করেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিরাপত্তায় জাতিসংঘের তত্বাবধানে শান্তিরক্ষী পাঠাতে হবে। নাগরিকত্বের পূর্ণ মর্যাদায় রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। আর নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার। দাবি করেছিলেন রোহিঙ্গা শিশুদের সব অধিকার সুরক্ষিত করতে। এরপরেও একমাত্র পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ-ই রাখাইনে শান্তিরক্ষী প্রেরণের দাবি তুলেছেন। এখনো বিভিন্ন সভা-সমাবেশে, এই দাবিতে সোচ্চার রয়েছেন পল্লীবন্ধু। রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি এবং ত্রাণ বিতরণের সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত করতে বাংলাদেশ সরকারকে তিনিই পরামর্শ দিয়েছিলেন।

তখন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দাবি ও পরামর্শ সব মহলেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। বাস্তবধর্মী এই দাবির সাথে ওই সময়ে একাত্মতা ঘোষণা করেছে দেশি-বিদেশি অনেক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠন। ত্বরিত গতিতে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি এবং ত্রাণ বিতরণের সার্বিক দায়িত্ব দেয়। এছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট এলাকায় ৩২টি ক্যাম্পে ব্লক অনুযায়ী ঘর তুলতে এবং অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করে। এতে হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের জীবনের নিরাপত্তা, খাদ্য ও আবাসনের নিশ্চয়তা মেলে।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসনের বিষয়ে দৃশ্যমান এবং ইতিবাচক কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি দেড় বছরেও। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বরের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির আলোকে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। এই ওয়ার্কিং গ্রুপের তিনটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেসময় ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের একটি সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নে রোহিঙ্গারা ১৫ নভেম্বর মিয়ানমারে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আবারো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

গেল সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন “আমরা আশাহত হয়েছি কারণ, আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি।” "মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। প্রথম থেকেই আমরা তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। "রোহিঙ্গাদের উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার এবং অবিচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, বিশেষ করে জাতিসংঘ, গুরুত্বসহকারে দেখবে বলে আশা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

এসময়, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে পাঁচটি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ০১. অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা। ০২. অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা। ০৩. জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা। ০৪. রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। ০৫. কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

এবছর ১৮ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তেনিও গুতেরেস বলেন, “রোহিঙ্গাদের দুর্দশার পাশাপাশি তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উদ্যোগহীনতা আমাকে ভীষণভাবে হতাশ করেছে। যদিও রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরির জন্য আমাদের চাপ অব্যাহত রয়েছে। তারপরও পরিস্থিতির অগ্রগতি অতি ধীর বলেই মনে হচ্ছে।”

এদিকে, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)-এর প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি’র পূর্বপরিকল্পিত রাখাইন সফর বাতিল করে করে দিয়েছে মিয়ানমারের সরকার। এ বছর জানুয়ারি মাসেই রাখাইন পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিলো তার।

২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করে চীন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রী কিউ টিন্ট সোয়ে। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বৈঠকে যোগ দেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাখাইনের ইতিহাস যেহেতু জটিল, তাই এর সমাধান দুই দেশের স্বার্থ এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার নিরিখে হতে হবে। সমস্যাটি অনিবার্যভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ওয়াং ই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইতিবাচক ভূমিকার প্রত্যাশা করেন।

জাতিসংঘ সহ বিশ^ সম্প্রদায় শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে শান্তিপূর্ন বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কিন্তু একটিও সফলতার মুখ দেখেনি। বাংলাদেশ ও বিশ^ সম্প্রদায়ের মানবিক সহায়তায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা মিলেছে কিন্তু নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন এখনো নিশ্চিত হয়নি। এছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক কোনো ফর্মুলাও দৃশ্যমান নেই। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ^ সম্প্রদায়ের সকল উদ্যোগই সফলতার মুখ দেখেনি।

আবার মিয়ানমার সরকারের আহবানে রাখাইনে ফিরে যেতে চায়না রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা মনে করে, মিয়ানমার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির কোন পরিবর্তন হয়নি। তাছাড়া, রাখাইনে এখনো রোহিঙ্গাদের নির্ভরতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সেখানে নিরাপদ ও বাসযোগ্য পরিবেশ নেই বলেই রোহিঙ্গারা গেলো বছর ১৫ নভেম্বর মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। শতভাগ রোহিঙ্গাই মনে করেন নাগরিকত্বের অধিকার ফিরে পেলেই রাখাইনে ফিরে যাওয়া সম্ভব।

এমতাবস্থায়, শুধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেয়া ফর্মুলাই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে পারে। সেজন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইনে শান্তিরক্ষী পাঠাতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। কর্ম, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ মৌলিক অধিকার দিতে হবে রোহিঙ্গাদের। বিচার করতে হবে মিয়ানমারে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতা বিরোধী অপরাধের। দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হবে গণহত্যা, গণধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগ এর বিচারে। আর এ জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীনসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে আন্তরিক ভাবে উদ্যোগী হতে হবে।

লেখক: সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :