ঘিঞ্জি পুরান ঢাকা পাল্টাতে বাধা এলাকাবাসীই

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৫৫

রাজধানীর পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি পরিবেশের ভোগান্তি সেই এলাকার মানুষদের চেয়ে বেশি কারও নয়। তবে অবাক করা ব্যাপার হলো, সেই ভোগান্তি লাঘবের উদ্যোগে তারাই বাঁধ সেধেছেন। রাজউকের একটি উদ্যোগে পাল্টে যাওয়ার কথা ছিল পুরান ঢাকার চেহারা। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দাদের আপত্তি ও অনীহায় তা সম্ভব হয়নি। যদিও বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে মুক্তির প্রসঙ্গটি সামনে আসে জোরালোভাবে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পকাজে হাত দিতে চেয়েছিল। এর ফলে আধুনিক শহরে পরিণত হতো পুরান ঢাকা। এই প্রকল্পের আওতায় ছোট বাড়িঘরগুলো ভেঙে পরিকল্পিত একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণ হতো। পরে ফ্ল্যাট আকারে তা বাড়ির মালিকদের বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল।

পরিকল্পনা মতে নকশা প্রস্তুত করেছিল রাজউক। সেই নকশায় ছিল, ভেঙে ফেলা বাড়িঘরের জায়গায় নির্মাণ করা হবে চওড়া সড়ক, পানি নিষ্কাশনের নালা, পার্ক, রোপণ করা হবে গাছ। তবে স্থানীয় জমি মালিকদের অনিচ্ছায় সেই প্রকল্প শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি।

পুরান ঢাকার বিল্ডিংগুলো আধা কাঠা থেকে দেড় কাঠার মধ্যে। এখানে অল্পমাত্রার ভূমিকম্পেও বিল্ডিং ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখানে রাস্তাগুলো যে অবস্থা তাতে সামান্য দুর্ঘটনা থেকেই ঘটে যেতে পারে নিমতলী, চকবাজারের মতো ট্রাজেডির। এসব কথা চিন্তা করে রাজউক পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে রাজি হলেও পরে তারা সেখান থেকে সরে আসে।

বিষয়টি নিয়ে রাজউকের নতুন ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের ভবন নির্মাণের ব্যয় রাজউক থেকে দেয়া হবে। সিটি করপোরেশন রাস্তা নির্মাণ করে দেবে, ওয়াসা ড্রেনেজ সিস্টেমগুলো করে দেবে।’

এই প্রকল্প নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা অনেকেই বলেন, এটা তাদের বাপ-দাদার বাড়ি, এটা যেভাবে রয়েছে সেভাবেই ঠিক আছে। এখানে কিছু করতে তাদের অনীহা রয়েছে।

পুরান ঢাকা বদলে দেয়ার এই প্রকল্পের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। এই প্রকল্প নিয়ে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রাজউক পুরান সিটি বদলে দেয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ছোট ছোট ল্যান্ড একসঙ্গে করে বড় ল্যান্ড নিয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাদের মধ্যে ডিস্টিবিউট করে দিতে চেয়েছিল। সেখানে মধ্যস্থতাকারী জনপ্রতিনিধি হিসেবে আলোচনার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু সেখানকার জমির মালিকের আপত্তিতে এই প্রকল্পটি বেশিদূর আগাতে পারেনি।’

সাঈদ খোকন বলেন, ‘এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ভালো আউটপুট পাওয়া যেত। এই রকম প্রকল্প সিঙ্গাপুর, টোকিও বদলে দিতে সক্ষম হয়েছিল। আমার কাছে এটি ভালোই মনে হয়েছিল। তবে তৃণমূলের আপত্তিতে সেটি আর চালু করতে পারিনি।’

এই উদ্যোগটা কি পুনরায় চালু করার চিন্তা আছে? জানতে চাইলে মেয়র খোকন বলেন, ‘এই উদ্যোগটা থমকে যাওয়ার পরে আরেকটা এলাকার নাগরিকদের কল করেছিলাম। তারা রাজি আছে। রাজউক যদি মনে করে নাগরিকদের নিয়ে আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করব। রাজউকের এই উদ্যোগটা অনেক ভালো ছিল।’

এই প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজা খাতুন। তার কাছে এই প্রকল্প নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি নিজেও এক সময় ওই এলাকার বাসিন্দা ছিলাম। রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্লানিংটা দূরদর্শী হতে হবে। এটা বাস্তবায়ন হলে পুরান ঢাকার চেহারা পাল্টে যেত।’

(ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/জিএম/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :