‘মাতৃভাষার জন্য দীর্ঘ দিন কারারুদ্ধ ছিলাম’

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:৫৫

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আম বাগানে পুলিশ ছাত্রদের ওপর টিয়ারসেল, গুলি চালালে রফিক, জব্বার, বরকত ও সালাম নিহত হন। কিন্তু তার আগেই পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে লালবাগ থানায় নিয়ে যায়। তারপর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারুদ্ধ করে রাখে। মাতৃভাষার জন্য দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ ছিলাম।’

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভার আয়োজনে বইমেলার দ্বিতীয় দিনে (রবিবার) ভাষাসৈনিক জাকারিয়া চৌধুরীকে দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি কথা বলেন।

সংবর্ধনাকালে দৈনিক মানবকন্ঠের প্রধান সম্পাদক ভাষাসৈনিক জাকারিয়া চৌধুরী নবীগঞ্জ পৌর মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮ সাল থেকে একটু একটু করে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এতে সফলতা আসেনি। ১৯৫২ সালে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন করে সফলতা আসে। শতকরা ৫৬ জনের মুখের ভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। আর সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদল ছাত্রকে নিয়ে তার মুখ বরাবর প্রতিবাদ করেছিলেন। এর মধ্যদিয়েই মূলত ভাষা আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। ভাষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তারা চির অমর। তাদের ঋণ কখনো শোধ করার নয়।

তিনি আরো বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি হলে ভঙ্গ করা হবে কিনা এ নিয়ে কোন স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টার দিকে ছাত্র সমাবেশে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মতামত প্রকাশ করে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট গাজীউল হক। গাজীউল হকের বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাদেশিক পরিষদ ভবনের দিকে এগিয়ে গেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আম বাগানে পুলিশ ছাত্রদের উপর টিয়ারসেল, গুলি চালালে রফিক, জব্বার, বরকত ও সালাম নিহত হন। কিন্তু তার আগেই পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে লালবাগ থানায় নিয়ে যায়। তারপর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারুদ্ধ করে রাখে। মাতৃভাষার জন্য দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ ছিলাম।’

নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্যানেল মেয়র-১ এটিএম সালাম ও বইমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তীর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বাহুবল-সার্কেল) পারভেজ আলম চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য শিরিন আক্তার, প্রাবন্ধিক ও কবি তাহমিনা বেগম গিনি, নবীগঞ্জ থানার ওসি ইকবাল হোসেন প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ভাষাসৈনিক যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন কার্জন হলের আওয়াজ আমার কানে আসছিল। সে সময়ের ঢাকার রাজপথের মিছিলের শব্দ আমার কানে এসে লাগছিল।

তিনি আরও বলেন, পৌর মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীসহ পৌর পরিষদ ‘অমর একুশে বইমেলা-২০১৯ আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল পেশায় নিয়োজিত করেছেন। পরে কয়েকজন লেখকের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/এলএ)