কেনাকাটার ধুম লেগেছে বইমেলায়

আসাদুজ্জামান, বইমেলা থেকে
 | প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৩৩

বাংলা একাডেমির একুশে গ্রন্থমেলা যত শেষের দিকে যাচ্ছে, ততই বাড়ছে দর্শক-ক্রেতার সমাগম। বইমেলার শেষ সপ্তাহে ধুম লেগেছে কেনাকাটা। আজ কর্মব্যস্ত দিনেও মেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়।

বেলা তিনটার আগে থেকেই সোহরাওয়ার্দী ও বাংলা একাডেমি চত্বরে প্রবেশের প্রধান ফটকের বাইরে পড়ে যায় লম্বা লাইন। দুই চত্বরেই হাজার হাজার বইপ্রেমীর আনাগোনা ছিল মেলা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত। এই স্টল থেকে সেই স্টল ঘুরে সংগ্রহ করেছেন পছন্দের বই। এতে প্রকাশরাও বেশ খুশি।

বিকালে বাংলা একাডেমি চত্বরের বইমেলায় কথা হয় সুমন শাহরিয়ারের সঙ্গে। তার পর্যবেক্ষণ- সুপাঠ্য বইগুলো মেলার শেষের দিকে আসে। তাই অনেকে মেলের শেষের দিকে পছন্দের বই কিনে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমি মেলায় বেশ কয়েকবার এসেছিলাম। কিন্তু কেনাকাটা তেমন করিনি। আজ বেশ কিছু বইয়ের ফর্দ নিয়ে এসেছি। সারা বছর পড়ার জন্য বইমেলা থেকে বই সংগ্রহ করব।’

রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরিন মেলায় এসেছিলেন বন্ধুদের নিয়ে। গবেষণার জন্য বেশি কিছু বই কিনেছেন বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের স্টল থেকে। তিনি বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারির পর মেলা জমে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই আসা হয় মেলায়। অন্য সব দিন ঘুরতে এলেও আজ বই কিনতে এসেছি।’

প্রকাশক ও লেখক দিলদার হোসেন বলেন, ‘মেলায় বেশির ভাগ মানুষ ঘুরতে আসেন। তবে এদের ভিড়ে প্রাকৃত বইয়ের পাঠক-ক্রেতাও অনেক। তারা আসেন শেষের দিকে। প্রতি বছরই এমনটা হয়। এবারও দেখছি শেষের দিকে বইয়ের ক্রেতা বেশি। আশা করি শেষ কটা দিন বিক্রি আর বাড়বে।’

বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র জানায়, গ্রন্থমেলার ২৪তম দিনে আজ মেলায় নতুন বই এসেছে ৯১টি।

বলধা গার্ডেন: আমাদের উদ্যান-ঐতিহ্য

আজ বিকালে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বলধা গার্ডেন: আমাদের উদ্যান-ঐতিহ্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। বিপ্রদাশ বড়–য়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মোকারম হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন হাশেম সূফী, মোহাম্মদ আলী খান ও নূরুন্নাহার মুক্তা।

বলধা গার্ডেনের বর্তমান বিপন্নতার চিত্র তুলে ধরে প্রাবন্ধিক আমাদের অন্যতম এই উদ্যান-ঐতিহ্যের উদ্ভিদ সংরক্ষণের ব্যবস্থার নেওয়ার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, চারপাশের সুউচ্চ দালানকোঠা বাগানের বিরল সংগ্রহকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিভিন্ন দুঃসময় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে হারিয়ে গেছে বাগানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ। সঠিকভাবে পরিচালনার অভাবেও এসব হারিয়ে যেতে পারে বলে কেউ কেউ ধারণা করেন।

প্রবন্ধে বলা হয়, বলধা বাগানের সমপরিমাণ জায়গা নিয়ে অথবা বিকল্প কোনো নকশায় মূল বাগানের প্রতিটি উদ্ভিদের চারা একটি করে রোপণ করে সৃষ্টি করা যায় নতুন বলধা গার্ডেন। এর জন্য আগে থেকেই বানাতে হবে বিশেষ বীজতলা, বীজ আসবে বাগান থেকে, ইতোমধ্যে যেসব গাছ হারিয়ে গেছে তা আবার সংগ্রহ করতে হবে, যেসব গাছ বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে সেসবও। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন উদ্যানের পুরনো নকশার বিকৃতি না ঘটে, আদি উদ্যানও অবহেলার শিকার না হয়। বাগানের নাম ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তন বাঞ্ছনীয় নয় বলেও মত দেন প্রাবন্ধিক।

বলধা গার্ডেন নেহায়েত একটি উদ্যান নয়, এটি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্তর্গত অঞ্চল। এমনটাই মত আলোচকদের। তারা বলেন, এই উদ্যান নগর ঢাকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে ধারণ করে আছে বহুকাল। এই উদ্যান রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত, বহু স্মরণীয় কবিতা ও সাহিত্যকর্মের জন্ম হয়েছে এই উদ্যানে। আজ কালের প্রহারে ঢাকার উদ্যান-ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। মানুষের প্রকৃতি-বিধ্বংসী প্রবণতা বলধা গার্ডেনকেও গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে ধ্বংসের হাত বলধা গার্ডেনসহ উদ্যান-ঐতিহ্যের আশু সুরক্ষা প্রয়োজন।

লেখক বলছি

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে আজ নিজেদের নতুন প্রকাশিত বই নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিশ্বজিৎ ঘোষ, এম আবদুল আলীম, বিমল গুহ, জেসমিন মুন্নী, ড. চৌধুরী শহীদ কাদের।

ছড়া পাঠ করেন ছড়াকার মাহমুদউল্লাহ, রফিকুল হক, আলী ইমাম, ফারুক নওয়াজ, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, আলম তালুকদার, খালেক বিন জয়েনউদ্দিন, রহীম শাহ, ফারুক হোসেন, আনজীর লিটন, সুজন বড়–য়া।

আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ফয়জুল্লাহ সাঈদ এবং সৈয়দ শহীদুল ইসলাম।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল এ কে আজাদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আনন্দন’ এবং প্রসাদকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের রচনায় এবং ভিক্টর দানিয়েলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’র পরিবেশনা।

(ঢাকাটাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :