চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা ব্যহত

উপজেলা-গ্রামে থাকছেন না চিকিৎসকরা

হাশেম তালুকদার, চট্টগ্রাম ব্যুরো
 | প্রকাশিত : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২৩:১৬
চট্টগ্রামের একটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চট্টগ্রামের সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক স্বল্পতায় ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবের পেছনে তাদের গ্রামে না থাকার মানসিকতাকে দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ লাভের কিছুদিন পরই চিকিৎসকরা নানা অজুহাত দেখিয়ে গণহারে বদলি হয়ে যাচ্ছেন। ফলে গ্রাম ও উপজেলা সদরের হাসপাতালগুলো চরম চিকিৎসক সংকটে পড়েছে। মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জেলার ১৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসকের ৫০২টি পদের মধ্যে ১৬১টি, ৭২টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল কর্মকর্তার ৪৯টি এবং ১২৬টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেডিকেল কর্মকর্তার ৬৭টি পদই শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ উপজেলা হাসপাতালে অবেদনবিদ (অ্যানেসথেসিস্ট) না থাকায় অস্ত্রোপচার হয় না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে জটিল রোগে আক্রান্তদের বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে বেশি টাকা খরচ করে সেবা নিতে হচ্ছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, গাইনি চিকিৎসক ছাড়াই চলছে চট্টগ্রাম শহরের সন্নিকটে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল। ২১টি চিকিৎসক পদের ১০টিই শূন্য। কর্মরতদের মধ্যেও দুজন চিকিৎসক প্রেষণে ও দুজন চলে গেছেন দেশের বাইরে। চক্ষু ও সার্জারি বিভাগে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

আরেক নিকটবর্তী উপজেলা হাটহাজারী হাসপাতালেও অবেদনবিদ না থাকায় সেখানে অস্ত্রোপচার হয় না। চক্ষু ও চর্মরোগের চিকিৎসক নেই দীর্ঘদিন। শিশু ও সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক গেছেন প্রেষণে। মেডিসিন ও ডেন্টাল সার্জন পাঁচদিন জেনারেল হাসপাতালে ও একদিন উপজেলা কমপ্লেক্স হাসপাতালে রোগী দেখেন।

দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের চিত্র আরও ভয়াবহ। সেখানে নেই কোনো সরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। উপজেলার তিনটি সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রের মধ্যে ৩১ শয্যার গাছুয়া হাসপাতালে দুজন এবং হারামিয়া ও হরিশপুর হাসপাতালে একজন করে চিকিৎসক কর্মরত। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র একটিতে চিকিৎসক আছেন।

গ্রামে স্থাপিত ইউনিয়ন ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। চিকিৎসক না থাকায় দরিদ্র মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব চিকিৎসাকেন্দ্র প্রত্যন্ত গ্রামে নির্মিত হয়েছে, যেন গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী সহজে চিকিৎসাসেবা পান। ৩৩তম বিসিএস থেকে উপজেলার পাশাপাশি এসব হাসপাতালেও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। গ্রামেও এমবিবিএস চিকিৎসক পেয়ে মানুষ চিকিৎসার সুফল পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকদের রাখা যাচ্ছে না। তদবির করে বদলি হয়ে যাচ্ছেন তারা।

হাটহাজারী পৌর এলাকার ডেইজি আখতার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে সাধারণ অসুখ নিয়ে গেলেও সেবা পাওয়া যায় না।’

সন্দ্বীপের মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থ হলে এ দ্বীপ উপজেলায় চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। জরুরি চিকিৎসার জন্যও মানুষকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।’

হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘অবেদনবিদ না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে অস্ত্রোপচার সেবা বন্ধ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলেও সাধারণ রোগীদের এখানে সেবা দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এজন্য আমি নিজেও রোগী দেখি।’

সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলুল করিম বলেন, ‘দ্বীপ উপজেলা বলে এখানে চিকিৎসকরা থাকছেন না। এলেও অল্পদিন থেকে বদলি হয়ে যান। যে কয়েকজন চিকিৎসক আছেন, তারা এ উপজেলার সন্তান। অন্যথায় তাদেরকেও ধরে রাখা কষ্টকর হতো।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘অন্য জেলার তুলনায় চট্টগ্রামে চিকিৎসক সংকট কম। তবে পদ শূন্য থাকায় সেবা ব্যহত হচ্ছে। সরকার বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেবে বলছে। আশা করি, সে নিয়োগে চিকিৎসক সংকট কেটে যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৬ফেব্রুয়ারি/ব্যুরো/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :