জাবি মাতালো ম্যাড থেটারের ‘নদ্দিউ নতিম’

জাবি প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৩৩

ফাল্গুনের রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্ত মঞ্চে বসেছে সপ্তাহব্যাপী নাটকের আন্তর্জাতিক আসর ‘বঙ্গমিলন নাট্যোৎসব ২০১৯’। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য সংগঠনের উদ্যোগে এ ধরনের আন্তর্জাতিক আয়োজন দেশের মধ্যে এবারই প্রথম। গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের আয়োজনে এই উৎসব শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এই উৎসবে সোমবার ছিল ম্যাড থেটারের নাটক ‘নদ্দিউ নতিম’।

এদিন সন্ধ্যায় মুক্ত মঞ্চের গ্যালারি ছিল দর্শকে পূর্ণ। নাটক শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগরের দর্শকরা নাটকটির গল্প, চরিত্র আর বাঁকবদলে মিশতে শুরু করে। দর্শকরা দেখতে থাকে কাহিনির পরতে পরতে উন্মোচিত হওয়া রহস্য ও বৈচিত্র্য আর উপভোগ করতে থাকে সংলাপের সুস্বাদু উষ্ণতা। যে উষ্ণতা হিমেল রাতের কুয়াশা উপেক্ষা করে নাটক দেখতে আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

দর্শকরা অভিনয়ে আর ঘটনার পরম্পরায় কখনো ‍উচ্ছ্বসিত হয়, কখনো উদ্বেলিত হয়। দর্শকদের ভালো লাগার প্রতিধ্বনিতে নাটক চলাকালীন প্রতিটি মুহূর্তে মুক্তমঞ্চ হয়ে ওঠে একটি আনন্দময় নাট্য রজনীর স্মারক। দর্শকদের এই তীব্র আনন্দদায়ী মুহূর্তগুলো নাটকের শেষ দৃশ্যে এসে তীব্র বিষাদে রূপান্তরিত হয়। দর্শকরা শেষ দৃশ্যের বিষাদে ও বিয়োগাত্ম পরিণতিতে কেঁপে ওঠে, কেউ কাঁদতে থাকে।

নাটক শেষে দর্শকরা তাদের আসন ছাড়তে যেন ভুলে যান। পুরো গ্যালারির দর্শকরা দাঁড়িয়ে নাটকের কুশীলবদের অভিবাদন জানায়, তখন দেখা যায় তাদের কেউ কাঁদছে, কেউ চোখ মুচছে, কেউ শুধু ঘটনার বিহ্বলতায় নিশ্চুপ। ‘নদ্দিউ নতিম’-এর বিষাদ দর্শকদের আক্রান্ত করে। শেষ পর্যন্ত এক উজবেক কবির নির্বিকার আত্মাহুতির দীর্ঘশ্বাস ও ব্যথা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে ফেরত যেতে হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আনিকা তাবাস্সুম মীম প্রদর্শনী শেষে নাটক নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘নদ্দিউ নতিম’ এত সুন্দর ছিল যে, নাটক শেষ হওয়ার পরেও দর্শকের ঘোর কাটেনি! কেউ কেউ তো কাঁদছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ ম্যাড থেটারকে। আশা রাখি তাদেরকে মুক্তমঞ্চে আবারও পাব।

অপর শিক্ষার্থী শেখ জ্যোতি বলেন, ‘মুক্তমঞ্চে সাধারণত কোনো নাটকের ডিউরেশন এক ঘন্টার বেশি হলে অনেকেই চলে যান। কিন্তু এই নাটকে দর্শক তো কমেইনি বরং বেড়েছে। আর মনোযোগ দিয়ে পুরোটা দেখেছে। সবার মুখে এরকম প্রশংসা সত্যিই ভালো লাগছিল। আমন্ত্রণ রইল ম্যাড থেটারকে আবার আসার জন্য।’

জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সভাপতি জাহিন বলেন, ‘নাটক শেষে দর্শকরা যে প্রতিক্রিয়া দেখাল মুক্তমঞ্চে সচরাচর সেটা দেখা যায় না। ম্যাড থেটার তাদের অভিনয় দিয়ে সমস্ত দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে পেরেছে। এ জন্য তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।’

প্রদর্শনী শেষে ম্যাড থেটারের প্রধান পরিচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘নাটক চলাকালীন ও শেষে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছিল যেন নাটকটির জন্মই হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। সন্ধ্যায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে নাটক শুরুর পূর্বে ম্যাড থেটারের সদস্যরা সেলিম আল দীনের কবরে পুষ্পার্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।’

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কালজয়ী উপন্যাস ‘কে কথা কয়’ এর নাট্যরূপ ‘নদ্দিউ নতিম’। নাটকটি ম্যাড থেটারের প্রথম প্রযোজনা। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন আসাদুল ইসলাম, সোনিয়া হাসান ও আর্য মেঘদূত। যারা একই পরিবারের সদস্য। বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে যা অনন্য ও নতুন মেরুকরণ। সোমবার ছিল ‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকটির ৪৮তম প্রদর্শনী। তবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটিই নাটকের প্রথম প্রদর্শনী।

ঢাকাটাইমস/২৭ ফেব্রুয়ারি/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :