বন্দিদের কাছে ভ্যাট চেয়ে কারাগারে কাস্টমসের চিঠি

যশোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৫২

কারাগারে আটক বন্দিদের ভালো রাখতে সরকারের নানা পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্যে উল্টো নজির স্থাপন করেছে যশোর কাস্টমস। চার দেয়ালে বন্দিদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের জন্য যশোর কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে তারা। এই ঘটনায় হতবাক যশোর কারা কর্তৃপক্ষ। আর যশোর কাস্টমসের ভাষ্য, তারা সরকারের যা রাজস্ব আসে তাই চেয়েছে। এদিকে খবরটি জানাজানি হওয়ার পর তোলপাড় চলছে।

দেশের আইন অনুযায়ী প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান, রেস্তোরাঁ থেকে পণ্য কেনার সময় ভ্যাট দেয়ার বিধান রয়েছে। সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। তবে কারা ক্যান্টিন থেকে বন্দিদের কেনা খাবারের ওপর এই প্রথম ভ্যাট দাবি করল কাস্টমস।

কারা সূত্র মতে, কারাগারে বন্দিরা কারা অভ্যন্তরে অবস্থিত ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খেতে পারেন। কারা সংস্কার আইনে দেশের সব কারাগারে এ রকম ক্যান্টিন রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে এটি চলে আসছে। কিন্তু যশোর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়পূর্বক তা জমা দেয়ার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে চিঠি দিয়েছে। (পত্র নং-৪র্থ/এ(৬)১২/বিবিধ/মূসক/১৭/৫৭০ তারিখ-২৫.০২.২০১৯)।

যশোর কাস্টমের রাজস্ব কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন হাওলাদার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ১৫ ধারা অনুযায়ী যে কোন করযোগ্য পন্যের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেওয়ার বিধান রয়েছে। কারাগারের ক্যান্টিন চালুর মাস থেকে বিক্রির সমুদয় অর্থের উপর ভ্যাট দিতে হবে।

কাস্টমের হঠাৎ এমন চিঠিতে হতবাক কারা কর্তৃপক্ষ। কারা কর্মকর্তারা বলছেন, কারাগারের ক্যান্টিন থেকে বন্দিরা শুকনা খাবার কিনে খান। সরকারের কোনও নির্দেশনা না থাকায় তারা বন্দিদের কাছ থেকে কোনও ভ্যাটের টাকাও আদায় করেন না। আবার দেশের ৬৮টি কারাগারের কোথাও এই নিয়ম চালু নেই। অথচ যশোর কাস্টম ভ্যাট দাবি করছে।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এই কারাগারে বন্দির সংখ্যা এক হাজার ৬৮৫ জন। এর মধ্যে ফাঁসির আসামি রয়েছে ৮১ জন, মহিলা বন্দি ৭১ জন এবং পুরুষ বন্দি রয়েছে এক হাজার ৬১৪ জন।

গত এক বছর আগে যশোর কারাগারে বন্দিদের খাবার সুবিধার জন্য একটি পূণাঙ্গ ক্যান্টিন চালু করা হয়েছে। মানবিক কারণে সরকার উৎপাদন বিভাগ থেকে বন্দিদের টাকাও প্রদান করছেন। ক্যান্টিনে শুধুমাত্র রুটি, ডাল, বিস্কুট, ভাজা, পাউরুটিসহ শুকনা খাবার বিক্রি করা হয়। বাজারদর অনুযায়ী স্বচ্ছল বন্দিরা এই খাবার কিনে খান। অস্বচ্ছলরা সরকার নির্ধারিত খাবার খেয়ে থাকেন।

সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পাওয়া আক্কাস আলী নামে একজন জানান, কারাগারের ক্যান্টিন থেকে বন্দিরা যে খাবার কিনেন তা থেকে কেউ ভ্যাট নেন না। অস্বচ্ছল বন্দিদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা হলে তা হবে অমানবিক।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব কাস্টমসের চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকাটাইমসকে জানান, সারাদেশে ৬৮টি কারাগার রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা না থাকায় কোথাও বন্দিদের খাবার বিক্রির ক্যান্টিন থেকে ভ্যাট আদায় করা হয় না।

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র স্বচ্ছল বন্দিরা ক্যান্টিন থেকে শুকনা খাবার কিনে খেয়ে থাকেন। এখান থেকে ভ্যাট আদায়ে কাস্টমসের চিঠিতে হতবাক হয়েছি।’

কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট যশোর অফিসের সহকারী কমিশনার এইচ এম কবির জানান, তারা সরেজমিন কারাগারের ক্যান্টিন থেকে খাবার বিক্রির চিত্র দেখেছেন।

বলেন, ‘সেখানে শুধুমাত্র শুকনা খাবার বিক্রি হয়। আমরা বলেছি, সেখান থেকে সরকারের যা রাজস্ব আসে তাই আমাদের দেয়া হোক।’

ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :