বাবার সন্ধান ও বাড়ি ফিরতে চান হুমায়রা

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:৪৬

বাড়ি থেকে জোর করে উচ্ছেদ এবং তার বাবাকে গুম করে রাখার অভিযোগ করেছেন হুমায়রা খালিদ নামে রাজশাহীর একজন নারী। তিনি এর প্রতিকার চেয়ে বলেছেন, তার বাবা হুমায়ন খালিদকে ‘গুম’ করে রেখেছেন ফুফাতো ভাই সাব্বির খান।

বুধবার দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন নগরীর পুরাতন নাটোর রোডের বাসিন্দা হুমায়রা খালিদ রিজু। তার দাবি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রকৌশলী নিঃসন্তান হুমায়ন খালিদ ১৯৭২ সালের মেতে দেড় মাস বয়সী হুমায়রাকে পালিত কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেন।

হুমায়রা খালিদ বলেন, ‘আমার বাবা ৩০-৩২ বছর আগে পুরাতন নাটোর রোডের তার চারতলা বাড়ি হিলালী ভিলা মৌখিকভাবে দানের প্রস্তাব দেন। এরপর তিনি বাড়িটি আমাকে মৌখিকভাবে দান করেন ও দখল হস্তান্তর করেন। হস্তান্তরের পর থেকে আমি বাবার আমলের ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে নিচ ও দ্বিতীয় তলার দোকানঘরের ভাড়া আদায় করতে থাকি।’

‘২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাবা অছিয়ত দলিলের মাধ্যমে বাড়িটি আমার ও আমার দুই সন্তানের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমি বাড়িটিতে বসবাস করি। কিন্তু এখন বাড়িটি দখল করেছেন বাবার ভাগ্নে সাব্বির।’

প্রায় ৯০ বছরের হুমায়ন খালিদ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ২০১৭ সালের প্রথম দিকে তার বোনের ছেলে সাব্বির খান সিরাজগঞ্জ থেকে এসে ঢাকায় চিকিৎসার কথা বলে তাকে রাজশাহী থেকে নিয়ে যান। এরপর থেকে তার আর খোঁজ নেই বলে জানান হুমায়রা। বলেন, ‘এমনকি বয়স হওয়ায় আমার বাবার সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। এ সুযোগে সাব্বির বাবাকে ভুল বুঝিয়ে আমার নামের অছিয়তনামা দলিল বাতিলে রাজশাহী সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করান।’

২০১৭ সালের জুলাইয়ের পর থেকে বাবার সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে হুমায়রা বলেন, ‘বাবা এখন কোথায় আছেন, সেটিও আমি জানি না। এমনকি তিনি বেঁচে আছেন কি না, সে সম্পর্কেও আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। মূলত কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বাড়িটি ও মোটা অঙ্কের দোকানের ভাড়া আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এমনটি করা হয়েছে। আমার ধারণা, তাকে কৌশলে ‘গুম’ করা হয়েছে। এর প্রতিকার পেতে আমি রাজশাহীর যুগ্ম জেলা জজ ১ নম্বর আদালতে মামলা করেছি।’

হুমায়রা বলেন, ‘বাবাকে রাজশাহী থেকে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পর আমাকে বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে উচ্ছেদ করেন সাব্বির খান। এতে সহযোগিতা করেন ভবনটির ভাড়াটিয়া শরিফুল ইসলাম ও তার ভাই কেয়ারুল ইসলাম। আমার ব্যবহৃত পারিবারিক সামগ্রীও তারা ফেরত দেননি। পরনের একমাত্র পোশাক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। প্রায় ৩৫-৪০ বছর ধরে গড়ে তোলা সংসারের কয়েক লাখ টাকা মূল্যের সামগ্রী দখলকারীরা নিয়ে নেয়। এখন আমাকে বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। এতে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে।’

লিখিত বক্তব্যে হুমায়রা আরও বলেন, ‘১৭ বছর আগে আমার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। দ্বিতীয় তলার ভাড়ার টাকা দিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে আমার সংসার চলত। কিন্তু শরিফুল ও কেয়ারুল ভাড়া বন্ধ করে দেওয়ায় চরম অসহায় হয়ে পড়েছি। টাকার অভাবে ছেলেটির লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। মেয়েটি অসুস্থ, তার চিকিৎসা হচ্ছে না।’

সংবাদ সম্মেলনে হুমায়রা খালিদের ছেলে তানভীর ইসলাম হিম ও মেয়ে সাদিয়া ইসলাম মিম উপস্থিত ছিলেন। হুমায়রা তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও শিক্ষা সনদ দেখান। সবখানেই তার বাবা হিসেবে হুমায়ুন খালিদের নাম রয়েছে।

কান্নায় ভেঙে পড়ে হুমায়রা বলেন, ‘আগে জানতাম না যে, আমি পালিত মেয়ে। বাবাও কোনোদিন বলেননি। বাড়িটি দখল নিতে এসে সাব্বিরই প্রথম এ কথা জানান। এখন তিনি বাবাকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিচ্ছেন না।’

হুমায়রা বলেন, ‘সাব্বির আর এখন রাজশাহী আসেন না। ভাড়াটিয়া শরিফুল ও কেয়ারুল বাড়িটি দখল করে রেখেছেন। তারা সাব্বিরকে ভাড়া দেন। এখন আমি বাড়িতে উঠতে গেলে শরিফুল ও কেয়ারুল বাধা দেন।’ তারাও এই বাড়ি দখলে যুক্ত বলে অভিযোগ করেন হুমায়রা।

বাবার সন্ধান পেতে ও বাড়িতে উঠতে তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ ও সহায়তা কামনা করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার দুপুরে সাব্বিরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

হিলালী ভবনের নিচতলায় শরিফুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে সেখানকার কর্মীরা জানান, তিনি দেশের বাইরে আছেন। তবে শরিফুলের ভাই কেয়ারুল দাবি করেন, ভবনটি তারা কিনে নিয়েছেন। এখন তারা কাউকেই ভাড়া দেন না। অছিয়তনামা দলিল করে দিলেও জমি বিক্রি করা যায়। সেভাবেই মালিক তাদের কাছে ভবনটি বিক্রি করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/ব্যুরো/এআর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :