শিক্ষক সঙ্কটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫৪

ফরিদপুর প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

পাঁচ শতাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ফরিদপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে।

জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষক সঙ্কটে কর্মরতদের ওপর চাপ পড়ছে। চরাঞ্চলের অনেক স্কুলে শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকছেন মাসের বেশিরভাগ দিনে। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, জেলার ৮৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭৩টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সহকারী প্রধান শিক্ষকরা এ দ্বায়িত্ব পালন করছেন। সহকারী শিক্ষকের ৪৩২টি পদও শূন্য।

সরেজমিনে ভাঙ্গা উপজেলার ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে আটজনকে পাওয়া গেছে। সহকারী শিক্ষক নারগিস আক্তার জানান, প্রধান শিক্ষক বদলি হওয়ায় পদটি শূন্য। একজন সহকারী শিক্ষক স্কাউটের প্রশিক্ষণে, আরেকজন নৈমিত্তিক ছুটিতে এবং আরেকজন শিক্ষক দাপ্তরিক কাজে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেছেন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ১৯নং টেপুরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তিনজন। সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষক স্কুলের কাজে শহরে রয়েছেন। অন্য দুইজনের একজনের বদলির আদেশ হয়েছে আর একজন অনুপস্থিত।

তিনি বলেন, শিক্ষক স্বল্পতায় এমনিতেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এর ওপরে যদি কোনো শিক্ষক কোনো কারণে বা ব্যক্তিগত কাজে অনুপস্থিত থাকেন, সেক্ষেত্রে সমস্যা আরও বাড়ে। বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের শিক্ষানীতি ও সার্বজনীন শিক্ষা বাস্তবায়নে শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণের দাবি জানান তিনি।

একই ইউনিয়নের ১৮নং চর টেপুরা সরকারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয়জন শিক্ষকের মধ্যে সহকারী শিক্ষক রমা রাণী সাহা গত আড়াই বছর ধরে ডেপুটেশনে রয়েছেন শহরের একটি স্কুলে। তার স্থলে এখন পর্যন্ত কাউকে পদায়ন করা হয়নি।

জমিদাতা সদস্য হোসেন আলী বলেন, চরাঞ্চলের স্কুলে শিক্ষকরা ঠিকমতো স্কুলে আসেন না। যাতায়াত সমস্যাসহ নানা কারণে তারা অনিয়মিতভাবে উপস্থিত হন। দূরবর্তী স্থানের শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়াই এর কারণ।

বিদ্যালয় দুটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও নর্থচ্যানেল ইউপির চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা খাতে অনেক বেশি বরাদ্দ দিচ্ছেন। এতে শিক্ষার মান বেড়েছে। তবে অঞ্চল ভেদে শিক্ষক সঙ্কট কাটছে না। চরাঞ্চলে শহরকেন্দ্রিক শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের অনেকে সময়মতো স্কুলে আসতে পারেন না। এ সমস্যার নিরসনে স্থানীয় শিক্ষকদের পদায়নে গুরুত্ব দেন তিনি।

আলফাডাঙ্গা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, ‘কেউ শিক্ষকতার পেশায় এলে শিক্ষা-দীক্ষা, অভিজ্ঞতা-জ্ঞান সবই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দেন। শিক্ষকরা শুধু পাঠদানই করেন না, শিক্ষার্থীদের সবদিক দিয়ে গড়েও তোলেন। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের বিকল্প নেই। কিন্তু ফরিদপুরের শিক্ষকরা মনোযোগ সহকারে পাঠ দিতে পারছেন না। শিক্ষার মান উন্নয়নে এসব শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ জরুরি।’

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া চরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে কিছু শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের শহর এলাকায় শিক্ষক বেশি রয়েছেন। এজন্য শহর ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা জরুরি।’

সরকার শিগগিরই আরো নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেবে। তখন এ সমস্যা আর থাকবে না বলেও মনে করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/প্রতিবেদক/এআর)