খীরু নদী এখন ধানক্ষেত
ময়মনসিংহের ভালুকার ওপর দিয়ে বয়ে চলা একসময়ের প্রমত্তা খীরু নদী পরিণত হয়েছে সরু খালে। প্রয়োজনীয় সংস্কার না করা এবং প্রভাবশালীদের নদীদখল-ভরাট ও দূষণে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে স্থানীয়ভাবে ‘বনসুন্দরী’ নামে পরিচিত এই নদী।
নদীগর্ভে চলছে ফসলের চাষাবাদ। খীরুর যেটুকু অবশিষ্ট সরু খাল রয়েছে, তা দিয়ে কল-কারখানার দূষিত তপ্ত কিচকিচে কালো বর্জ্যমিশ্রিত পানি প্রবাহিত হওয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। দেশি জাতের মাছগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে।
বর্ষায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের পানি খীরু নদী হয়ে শ্রীপুরের শীতলক্ষ্মা নদীতে নেমে যায়। নদীর নাব্যতা হ্রাসের কারণে বর্ষা এলে উজানের পানি নামতে সময় লাগায় ভালুকার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এ সময় ফসল ও মৎস্য খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে চাষীরা লোকসানে পড়েন।
ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাউরাইদ ত্রিমোহনী শীতলক্ষ্মা পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদী। ভালুকার বন খীরু নামে পরিচিত এ নদীপথে এক সময় মুক্তাগাছার জমিদাররা ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে বজরাবহর নিয়ে ভালুকার সিলমা কাচারিতে আসা-যাওয়া করতেন। সিলমা কাচারির জায়গায় এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ নদী থেকে বিএডিসি’র পাওয়ার পাম্প দিয়ে চাষিরা শুকনো মৌসুমে বোরোসহ অন্য ফসলে পানি সেচ দিতেন। শুকনা মৌসুমে নদীপাড়ের মানুষ গোসলসহ গৃহস্থালির কাজকর্ম করতেন।
১৯৮০’র দশক পর্যন্ত সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও থানার ঘাট মানেই ছিল লঞ্চের ভেঁপু আর যাত্রীদের তাড়াহুড়ো। কাঠের এক পেয়ে লম্বা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে আবার সিঁড়ি বেয়ে নিচে লঞ্চের ডেকে কাঠের সিটে বসে ইঞ্জিনের ঠক ঠক শব্দে ঢেউ তুলে এগিয়ে যাওয়া। রেলগাড়ির সঙ্গে সময় মিলিয়ে ইত্তেফাক আর লেমুয়া নামে দুটি লঞ্চ ভালুকা থেকে কাউরাদ রেলস্টেশন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করতো প্রতিদিন দুইবার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন থানা আছে, থানার ঘাট নেই। কিন্তু থানার পাশেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নদীর ওপর রয়েছে খীরু সেতু। সেতুর নিচে পানি নেই। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা বর্ষা এলে শীতলক্ষ্মা থেকে ট্রলারযোগে বালু এনে নদীপাড়ে ফেলায় ব্রিজের নিচ থেকে ভাটির এক কিলোমিটার পযর্ন্ত ভরাট হয়ে গেছে।
ভালুকা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন নদী রক্ষায় সহযোগিতা ও সরকারি সাহায্যের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
পৌর এলাকার বাসিন্দা আমির হামজা বলেন, খীরু ছিল ভালুকা অঞ্চলের প্রধান নদী। কিন্তু কল-কারখানার দূষিত বর্জ্যে খিরু তার নির্মলতা হারাচ্ছে। ভালুকার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অসংখ্য কল-কারখানার দূষিত গরম কালো বর্জ্য পানি দিন রাত খীরুর বুক বেয়ে চলে। এক সময় এ নদীর মিঠা পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ কামাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, উপজেলার সবগুলো নদীরই প্রতিবেদন ওপর মহলে পাঠানো হবে। সরকার নদীগুলো রক্ষায় আন্তরিক। খীরু নদী এখন আগের অবস্থায় নেই। নদীটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে। অবৈধ দখলের খবর পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/০১মার্চ/প্রতিবেদক/এআর)