ভোটে আগ্রহ নেই ঢাকায়!

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
| আপডেট : ০১ মার্চ ২০১৯, ২২:১১ | প্রকাশিত : ০১ মার্চ ২০১৯, ২২:০৯
বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম

বুধবার সারাদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। দুপুরে খানিক রোদের দেখা মিললেও তা মিইয়ে গেছে বিকেলের বর্ষায়। বড় ক্ষতিটা হলো বইমেলার। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পানি জমলো। মাটির পথে কাদা। অস্থায়ী বইয়ের দোকানগুলোর ছাদ ভিজে, বৃষ্টির ছাঁটে ভিজলো বইয়ের পাতা।

এই বুঝি আকাশের মেঘ কেটে যাচ্ছে, এবার বৃষ্টি থামবে—করে করে সময় কাটলো; বৃষ্টি থামলো না। বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে গেল। রাতভর চললো নিবিরতি ইলশে গুঁড়ির ধারা।

বসন্তের শেষদিকে বর্ষা আসি আসি করলেও এবার আগেভাগেই এসে গেছে। আগাম বৃষ্টিতে অনেক কিছুই ভেস্তে গেছে। গত একটা সপ্তাহ বৃষ্টি মানুষের বিড়ম্বনার কারণ হয়েছে। বুধবারের বৃষ্টিমুখর দিনে কাজ শেষে অনেক আগেই ঘরে ফিরেছে মানুষ। তাই সন্ধ্যার পর থেকে পথে মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। তার ওপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় যানচলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। কারণ একদিন বাদেই মেয়র কে হবেন- ঠিক করতে উপনির্বাচনে ভোট ছিল উত্তরে।

উত্তর এলাকার সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো ছুটি ছিল। তার পরদিনই ছিল শুক্রবার। সরকারি চাকুরেদের জন্য শনিবারও অফিস নেই। সব মিলে তিন দিনের ছুটি পেয়ে যারা ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন, তারা ঢাকা ছেড়েছেন বুধবার রাতেই। বাকিদের অনেকে আরাম-আয়েশে ঘরেই ছিলেন। না পারলে বাসা থেকে বের হননি। তাই বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র ভোট হলেও, তেমন কোনো উত্তাপ ছিল না। অনেকে আবার ঠাট্টার ছলে বলেছেন, ‘ঢাকায় আজ নাকি ভোট?’

এমন প্রশ্ন ছিল অনেকের মনে। তফসিল ঘোষণার পর কয়েক দিন প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা থাকলেও সেটি লম্বা হয়নি। এই উপনির্বাচনে মেয়র পদে লড়েছেন পাঁচজন। অথচ ভোট নিয়ে কারোরই কোনো আগ্রহ ছিল না। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও কোনো কোনো কেন্দ্রে ১০টার পর হাতেগোনা দু-তিনজন ভোট দিয়েছেন।

সদ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপি এই নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। উপজেলা নির্বাচনেও দলটির কোনো প্রার্থী নেই। তাই ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো উদ্দীপনাই ছিল না।

এতটা সন্তর্পণে, নিরুত্তাপ, নির্ঝঞ্ঝাট, অনাগ্রহের, নজিরবিহীন ভোটার অনুপস্থিতির ভোট অতীতে ঢাকায় হয়েছে কি না বলতে পারবে না কেউ। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, ঢাকার নগরপিতা কে হচ্ছেন বা হবেন- তা নিয়ে নাগরিকের কোনো ভাবনা নেই। তার চেয়ে বৃষ্টির দিন গরম গরম খিচুড়ি উদযাপনে আগ্রহ ছিল বেশি। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম নিজেও বিষয়টি বোধ করেছেন।

২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে উত্তরার নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ভোটারদের উপস্থিতির হতাশাজনক অবস্থা দেখে তিনি পরে ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) বৃষ্টির দিন, ছুটির দিন, আমেজের দিন। আপনারা (ভোটার) গরম চা খেয়ে, গরম খিচুড়ি খেয়ে ভোট দিতে আসেন। পরে জানা গেছে, সকাল ১০টা পর্যন্ত আতিকুলের ওই কেন্দ্রে মোট ৫০টি ভোট পড়েছিল। জানিয়েছিলেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার বিশ্বাস।

সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর এক বছরের বেশি সময় পরে হলো এই উপনির্বাচন। এখানে মেয়র পদেই লড়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে নৌকার আতিকুল ইসলাম এবং লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ব্যান্ড সংগীত তারকা শাফিন আহমেদ কিছুটা আলোচনায় ছিলেন। বাকি তিন প্রার্থীর নাম শোনা তো দূরে থাক, একটা পোস্টারও চোখে পড়েনি কারো। তারা হলেন- ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনিসুর রহমান দেওয়ান। প্রতীক ছিল আম। বাঘ প্রতীক নিয়ে মেয়র হওয়ার দৌড়ে ছিলেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির শাহিন খান। আবদুর রহিম অবশ্য দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। টেবিল ঘড়ি ছিল তার প্রতীক।

ভোটের আগে নৌকা ছাড়া অন্য প্রার্থীদের কোনো প্রচার-প্রচারণাই চোখে পড়েনি। শাফিন আহমেদের হ্যাটপরা ছবির কয়েকটি পোস্টার ঝুলেছে ঢাকার রাস্তায়। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো প্রচারণাতে দেখা যায়নি তাকে।

কার্যত ভোটারদের অনাগ্রহের এই ভোট বিভিন্ন ধরনের বার্তা দিচ্ছে। একটি হচ্ছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে যে আগ্রহ অতীতে ছিল, এখন তা ম্রিয়মাণ। অনেকে আবার ভোটের ফলাফল কী হতে পারে আগে থেকেই আঁচ করতে পারেন। তাই ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে খুব একটা আগ্রহ পান না। এ ছাড়া সবচেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে, তা হলো শক্তিশালী বিরোধী দল বা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা।

ঢাকা উত্তরের এই ভোটে নৌকার বিপরীতে আসলে কোনো শক্ত প্রার্থী ছিলেন না। বিএনপি ভোট বর্জন করায় সাধারণ মানুষ ধরেই নিয়েছিল, নৌকার বিকল্প নেই। কারণ ক্ষমতাসীন দলের বিপরীতে যারা লড়ছেন, তারা ধারে বা ভারে কোনোভাবেই যোগ্য নন। তাই শেষ বিকেলে আতিকুল ইসলামই হাসবেন, এটাই স্বাভাবিক ছিল। তাই এ নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

ভোট যেমনই হোক, দীর্ঘদিন নির্বাচিত অভিভাবকহীন ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এবার নতুন মেয়র হয়ে এলেন আতিকুল ইসলাম। জনগণ ভোটকেন্দ্রে গিয়েছে কি যায়নি, এটিকে গুরুত্ব না দিয়ে নাগরিক সমস্যা দূর করতে তিনি কাজ করবেন, এটাই প্রত্যাশা।

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :