দলের বিপক্ষে শপথ নিয়ে সংসদে অবস্থান করা যায় না?

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০১৯, ১৫:২৩

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু

রাজনৈতিক দল কিংবা কোনো সংগঠনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করার পর দল থেকে বহিষ্কার হলে সেই প্রার্থীর অবস্থান কেমন হতে পারে? এধরনের প্রশ্ন বর্তমানে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের বেলায় উঠে এসেছে। সাধারণত এধরনের পরিস্থিতিতে কি হতে পারে? সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান দুই জনই মূলত গণফোরামের সাথে সক্রিয়। তাদের রাজনৈতিক দল গণফোরাম ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে এবং এই নির্বাচনে তারা দুইজনই বৃহত্তর সিলেট থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

ঐক্যফ্রন্ট ৩০ জানুয়ারির নির্বাচন ফলাফল বয়কট করাতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের সংসদে যাওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত হবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে গণফোরাম থেকে বারবার বলা হচ্ছে তাদের সংসদে না যাওয়ার জন্য। এমন পরিস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে দলের কি ভূমিকা হতে পারে? দল থেকে বহিষ্কৃত হলে তারা কি সংসদ সদস্য পদ হারাবেন? সংসদের স্পিকারের কি ক্ষমতা আছে তাদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে বাধা দিতে?

নির্বাচনে কোনো প্রার্থী জয়লাভ করার পর তিনি তখন আর কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন না। সংসদে বিভিন্ন প্রস্তাবে তিনি দলের বিরুদ্ধে গিয়েও ভোট দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কোনো কোনো সময় দলের পক্ষে ভোট না দিয়ে ভোটদানে নিরপেক্ষতার প্রশ্নে বিরত থাকতে পারেন। যদিও বসার আসন যে দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সেখানে ব্যবস্থা করা হয় তবুও ভোটের বেলায় তিনি যখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। এজন্য তার রাজনৈতিক দল তাকে কিছুই করতে পারে না। এমতাবস্থায় দল তাকে বহিষ্কার করলেও তিনি কখনোই তার সংসদ পদ হারাবেন না। সংসদের পুরো মেয়াদ পর্যন্ত তার সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকে। এক্ষেত্রে স্পিকারের কিছুই করার নেই।

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান সংসদে গিয়ে শপথ গ্রহণ করলে আইন অনুসারে তাদের কেউ বাধা দিতে পারে না। বাংলাদেশের বেলায় এক্ষেত্রে ভিন্ন কোনো আইন থাকলে সে আইন আন্তর্জাতিক আদালতে টিকবে না। মিডিয়ার মতে ৭০ অনুচ্ছেদে নাকি বলা হয়েছে, নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর যদি উক্ত দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তবে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। বাংলাদেশের আইনে নাকি একথাও আছে যদি সংসদ সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করেন তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। ইউরোপীয় গণতন্ত্রে এধরনের আইন কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং সত্যি সত্যি বাংলাদেশে যদি এ ধরনের কোনো আইন থেকে থাকে তাহলে বিষয়টি নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা করা উচিত।

সুইডিশ জাতীয় সংসদে এধরনের ঘটনা অনেক সময় ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সদস্য পদ পুরো মেয়াদ পর্যন্ত বহাল থাকে। ফেসিস্ট রাজনৈতিক দল সুইডিশ ডেমোক্রেট থেকে সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি তার সংসদ সদস্য পদ হারাননি। তবে সংসদে তার বসার আসন দলীয় আসন থেকে পৃথক স্থানে স্থানান্তর করা হয়। একই অবস্থা স্টকহোম সিটি কাউন্সিল ও গ্রেটার স্টকহলম কাউন্সিলেও হয়েছে। একজন নির্বাচিত ব্যক্তিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে কখনই তার নির্বাচিত আসন বাতিল করা যায় না।

সুতরাং সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের বেলায় সংসদ সদস্য পদ বাতিলের প্রশ্ন আসা যুক্তিসঙ্গত নয়। আগামী ৭ মার্চ সত্যি সত্যি যদি তারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং এধরনের কার্যকলাপের জন্য গণফোরাম যদি তাদের দল থেকে বহিষ্কার না করে তাহলে তারা দলের নাম নিয়ে সংসদে বসবেন। আর যদি দল তাদের বহিষ্কার করে তাহলে তারা দলবিহীন সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদের সকল সুযোগ সুবিধা নেওয়ার অধিকার রাখেন। দেখা যাক বাংলাদেশের আইন এখন কোন পথে চলে?

লেখক সুইডিশ লেফট পার্টি সেন্ট্রাল কমিটির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য