যুদ্ধ নাকি উত্তেজনা

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০১৯, ১৫:৪৩

মোহাম্মদ জমির

সহিংসতায় কখনো শান্তি আসে না। এতে বরং অনিশ্চয়তা আরো বাড়ে। বেড়ে যায় অস্থিরতা। দুর্ভাগ্যজনক যে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান সেই সাংঘর্ষিক পথ বেছে নিয়েছে পরস্পরকে ঘায়েল করতে। আমরা জানি, চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের কারণে পাকিস্তান ও ইরান সংলগ্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে বিপুল অস্থিরতা ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যদি পরস্পরকে আঘাত করতে উদ্বুব্ধ করে তবে পুরো দক্ষিণ এশিয়া সন্ত্রাসবাদের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলবে, যা কারো জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে দেশ দুটির জন্মসাল ১৯৪৭ থেকেই। দুই দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে আসছে। ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলটির দুটি অংশ শাসন করে আসছে তারা। মাঝের কাল্পনিক সীমারেখার নাম তারা দিয়েছে ‘লাইন অব কন্ট্রোল’। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর মোট চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে বৈরী দুই প্রতিবেশী দেশ, তার মধ্যে তিনবারই তাদের লড়াই হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করেই। তবে ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম দুই দেশ আকাশযুদ্ধে জড়াল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আত্মঘাতী হামলায় দেশটির সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হওয়ার পর দুই দেশের উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ভারতের বিমানবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের বালাকোটে সন্দেহভাজন এই জঙ্গিদের আস্তানা লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করলে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর অন্তত ৫০টি স্থানে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দিকে মর্টার শেল ছোড়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা। তারপর পাকিস্তানি জঙ্গিবিমানও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজৌরি জেলায় নওশেরা সেক্টরে বোমাবর্ষণ করলে আকাশে শুরু হয় লড়াই।

এ বিষয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, বালাকোটে ভারতের বিমান হামলার পর কাশ্মীর সীমান্তের ডজনখানেক এলাকায় মর্টার দিয়ে পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ করেছে দুই দেশ। তবে এই উত্তেজনার মধ্যে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে ঠিক কী ঘটেছে, তা নিয়ে দুই দেশই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বলেছেন, ভারতের বিমান হামলার জবাবে তাদের বিমানবাহিনী সকালে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অভিযানে যায়। ছয়টি নির্দিষ্ট স্থাপনা লক্ষ্য করে ওই অভিযান শুরু হলেও সেখানে হামলা না চালিয়ে তারা খোলা জায়গায় বোমা বর্ষণ করে ফিরে এসেছে। আসিফ গফুরের দাবি, প্রাণহানি যাতে না হয় সে জন্যই পাকিস্তানি জঙ্গিবিমান নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালায়নি। তিনি আরো বলেন, ‘উত্তেজনা বাড়–ক, তা আমরা চাই না। তবে বাধ্য করা হলে নিজেদের ভ‚খÐে আত্মরক্ষার সক্ষমতা ও পূর্ণ প্রস্তুতি যে পাকিস্তানের আছে, সেটার প্রমাণ দিতেই এ অভিযান চালানো হয়েছে।’

পাকিস্তানি এই সেনা কর্মকর্তার দাবি, তাদের অভিযানের জবাব দিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর দুটি জঙ্গিবিমান পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে সেগুলো গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ফাইটার পড়েছে কাশ্মীরের ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশে, অন্যটি পাকিস্তানের অংশে বিধ্বস্ত হয়েছে। ওই বিমানের একজন পাইলটও পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েছে।

পাকিস্তানের তথ্য মস্ত্রণালয় সকালে একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে চোখ বাঁধা অবস্থায় রক্তাক্ত এক বৈমানিককে দেখিয়ে বলা হয়- তিনি ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। পরে আরেকটি ভিডিওতে তাকে চায়ের কাপ হাতে কথা বলতেও দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার এক সংবাদ সম্মেলনে আকাশযুদ্ধের ভিন্ন একটি বিবরণ দেন। তার দাবি, ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় পাকিস্তানি বিমান হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত একটি পাকিস্তানি জঙ্গিবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে, তবে সেটা পড়েছে কাশ্মীরের পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অংশে। আর প্রতিরোধে অংশ নেওয়া ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি জঙ্গিবিমান ও পাইলট নিখোঁজ রয়েছে।

পরে দিল্লিতে পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার সৈয়দ হায়দার শাহকে তলব করে একটি প্রতিবাদলিপি ধরিয়ে দেওয়া হয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয় সেখানে। প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ভারতীয় বিমানবাহিনীর একজন আহত ব্যক্তিকে ভিডিওতে ‘অশোভনভাবে’ উপস্থাপন করে পাকিস্তান ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন’ করেছে।

অন্যদিকে কাশ্মীরের আকাশে লড়াইয়ের পর টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে আসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেখানে ভারতীয় প্রতিপক্ষের উদ্দেশে আলোচনার আহ্বান জানান তিনি। ইমরান বলেন, যা চলছে তা এভাবে চলতে দিলে পরিস্থিতি তার বা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

তিনি বলেন, ‘আজকের অভিযানের মধ্য দিয়ে আমরা শুধু এটাই দেখাতে চেয়েছি যে, তারা যেভাবে আমাদের এলাকায় অনুপ্রবেশ করে হামলা চালিয়েছি, আমরাও তাদের এলাকায় ঢুকে তা করে দেখাতে পারি।’

২৭ ফেব্রুয়ারির পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও আসেনি। তবে তিনি একটি অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। আর ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, ভারত ‘দায়িত্বশীল’ আচরণই করে যাবে। উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।

ভারতের জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে এই সংঘাত জটিল এক পরিস্থিতির সামনে ফেলেছে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদিকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার জবাবে পাকিস্তানের ভেতরে জঙ্গি আস্তানায় আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দেওয়ায় রাজনৈতিকভাবে মোদির জনপ্রিয়তা বাড়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ভারতের বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করেছে, মোদি সংঘাতকে পুঁজি করে ভোটে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন।

এদিকে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। দুই পক্ষকেই তিনি ধৈর্য ধারণ করার এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি এড়ানের পরামর্শ দিয়েছেন। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সব পক্ষকেই সংযমের পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড পার্লামেন্টে বলেন, ‘আমি দুই দেশের হাইকমিশনারের সঙ্গেই কথা বলব। তাদের আরও সংযমের পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানাব।’

এদিকে ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশেরই প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীনও কথা বলেছে বিষয়টি নিয়ে। তারা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে পিটিআই বার্তা সংস্থা এ খবর জানিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং বলেছেন, ‘আমরা আশা করি ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই চলমান পরিস্থিতিতে সংযত থাকবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে এমন কিছু করে নিজেদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাবে।’ চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ চীনের এবার এটাই প্রথম প্রতিক্রিয়া। তারা এর আগে পুলওয়ামায় হামলায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিল।

বিশ্বরাজনীতির যে হিসাব, তা সেভাবে বদল দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে জঙ্গিদের দমনে বিমান হামলায় ভারতের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে ওই হামলার পাল্টাহামলা না চালাতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। পাকিস্তান-ভারত সংকটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বর্তমানে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার অন্যতম অংশীদার তালেবান গোষ্ঠী। তারা বলেছে, প্রতিবেশী দেশ দুটির নতুন এ সংঘাত আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানোয় ভারতের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি। সেই সঙ্গে নতুন করে সংঘাতে জড়ানোর ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে এসব খবর দেয়া হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের বিমান হামলার ঘটনায় ইসলামাবাদের প্রতি ‘পূর্ণ সমর্থনে’র আশ্বাস দিয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। এমনটা অবশ্য দাবি করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। ফোনালাপ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে কুরেশী বলেন, ‘আগে থেকেই উদ্বেগ ছিল, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে ভারত। আমাদের সেই উদ্বেগই সত্য হয়েছে। ভারত পাকিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনায় পাকিস্তানের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।’

তবে বসে নেই ভারত। সমানে ক‚টনৈতিক তদবির চালিয়ে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। ভারতীয় সরকারি সূত্রগুলোর ভাষ্যমতে, ফোনালাপে সুষমা স্বরাজ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে জানিয়েছেন, কেন ভারতকে এই হামলা চালাতে হয়েছে। বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরও তিনি জইশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে হামলা চালানোর বিষয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরেন। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নীরব রয়েছে। আমি মনে করি, এটা করা উচিত। আমাদের শান্তির পক্ষে কাজ করা উচিত। আর এটাও মনে রাখতে হবে, ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্রধারী দুটি দেশ। তারা যদি অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তবে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে বাংলাদেশেও। তাই দেশ দুটির যুদ্ধ পরিস্থিতি আমাদের জন্য চিন্তার কারণ।

এখানে একটি বিষয় বলতে চাই, বিশ্বরাজনীতির হিসাব করলে ভারত ও পাকিস্তানের মর্যাদা সমান নয়। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশেষ মর্যাদার দাবিদার। অন্যদিকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সামরিক শাসনে বিপর্যস্ত পাকিস্তান। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো তাদের মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে আছে। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর চোখে পাকিস্তান তাই নেতিবাচক দেশ হিসেবে চিহ্নিত। তারা এটাও জানে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব আরও বেশি জেঁকে বসেছে। তাই বৈশ্বিক হিসাব-নিকাশে ভারত তুলনামূলক এখন এগিয়ে। তাই ভারতকে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা নিতে হবে। আর পাকিস্তানকে নিশ্চিত করতে হবে জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তাদের মাটি থেকে দমনে তারাও কাজ করবে জোরালোভাবে।

আশার কথা হচ্ছে, আকাশে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল দেশ দুটি, তা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। চলমান উত্তেজনা কমাতে আটক ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ২৮ ফেব্রুয়ারি এক ঘোষণায় বলেছেন, শান্তির নিদর্শন হিসেবে এ উদ্যোগ। এর আগে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি পাকিস্তানের জিও টিভিকে বলেছিলেন, আটক ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দিলে যদি সংঘাত এড়ানো যায়, তাহলে পাকিস্তান তাকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছুক।

পাকিস্তান ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করার পর বিমানটির উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে আটক করে। অভিনন্দনের একটি ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর)। এ ভিডিও প্রকাশের পর ভারত সরকার তাদের একজন আহত বৈমানিক পাকিস্তানের হাতে আটক হয়েছে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে তাকে দ্রুত এবং নিরাপদে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পাকিস্তান তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়।

এই বৈমানিকের মুক্তির খবর অবশ্যই ভালো খবর। আর শান্তি প্রতিষ্ঠায় শুধু এটা যথেষ্ট নয়। দুই দেশকেই জরুরি ভিত্তিতে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসতে হবে। এই আলোচনা রাজনৈতিক নেতাদের করতে হবে। আলাপ করতে হবে দুই দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকেও। যৌথ উদ্যোগে সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিদের দমন করতে হবে। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স হতে হবে ভারত ও পাকিস্তান উভয়কে। বুঝতে হবে, এছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠার আর কোনো পথ নেই।

মোহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং প্রধান তথ্য কমিশনার