চিকিৎসার জন্য প্রসিকিউটরের সহযোগিতা চাইলেন খালেদা
অসুস্থতা সত্ত্বেও ২০ ফেব্রুয়ারি আদালতে আসার জন্য তিনি তৈরি হয়ে ছিলেন দাবি করে খালেদা জিয়া প্রসিকিউটরকে বলেছেন, তাকে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে আনেনি। তার যথাযথ চিকিৎসায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজলের সহযোগিতা চেয়েছেন খালেদা জিয়া।
নাইকো দুর্নীতি মামলার চার্জগঠনের শুনানি উপলক্ষে আজ রবিবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে হাজির করা হয়। দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করার পর দুদকের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজলকে ডেকে তার চিকিৎসা এবং গত ২০ ফেব্রুয়ারি তার আদালতে অনুপস্থিতির বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে আদালতে উপস্থিত না করে কাস্টডি পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। এতে কারা কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে, খালেদা জিয়া ঘুম থেকে না ওঠায় আদালতে উপস্থিত করা যায়নি। এরপর আদালত পরবর্তী অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ৩ মার্চ দিন ধার্য করে।
তার অনুপস্থিতির জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, গত ধার্য তারিখে (২০ ফেব্রুয়ারি) তিনি তৈরি হয়ে বসে ছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে আনেনি। উল্টো অপপ্রচার করেছে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি।
খালেদা বলেন, দিন দিন শরীর খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে। শরীর কাঁপে, পা নাড়াতে পারেন না। আদালতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে সমস্যা হয়। চিকিৎসার জন্য রক্ত নিতে যারা তার কাছে গিয়েছিলেন তারা তার শিরা খুঁজে পান না। তার ব্যক্তিগত লোক আছেন যারা এ বিষয়টি ভালো পারেন। তাদের আসার সুযোগ দিলে ভালো হয়। এ বিষয়ে প্রসিকিউটররের সহযোগিতা চান খালেদা জিয়া।
তবে প্রসিকিউটর কাজল এ ব্যাপারে তখন কোনো কথা বলেননি।
এরপর বেলা ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিচারক ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান এজলাসে উঠলে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়।
খালেদা জিয়ার আগে আসামি খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পক্ষে ল পয়েন্টে শুনানি হয়।
এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার শুনানি করেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘জব্দকৃত আলামতের অধিকাংশই আমাদের দেয়া হয়েছে।েএখনো কিছু বাকি আছে, যা পেলে আমরা অব্যাহতির আবেদন প্রস্তুত করতে পারব।’ তাই সময়ের আবেদন করেন তিনি।
চিকিৎসার বিষয়ে খালেদার আইজীবী বলেন, ‘ম্যাডম, অনেক অসুস্থ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্যাটকো দুর্নীতির মামলায় তাকে বকশিবাজারের আদালতে গাড়ি থেকে নামানোর সময় পড়েই গিয়েছিলেন। ভাগ্য ভালো দায়িত্বরতরা ধরে রক্ষা করেছেন। তা না হলে ওই দিন বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারত।’ তাই ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে খালেদার চিকিৎসার আদেশ চান তিনি।
এ সময় বিচারক বলেন, ‘চিকিৎসার বিষয়ে আপনাদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। এর বাইরে কি আমার যাওয়ার এখতিয়ার আছে।’ চিকিৎসার বিষয়ে আদেশ ও পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৯ মার্চ দিন ধার্য করেন বিচারক।
এদিন খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশের পরপরই সেখানে উপস্থিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার পাশে বসেন এবং আদালতের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছিলেন। ওই সময় তিনি চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ওই সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও জিয়াউদ্দিন জিয়ার সঙ্গেও কথা বলতে দেখা যায়।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া তার আইনজীবী প্যানেলে মজিবুর রহমান নামে সাবেক একজন বিচারকসহ অভিজ্ঞ আরও কিছু আইনজীবী নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন তাদের।
মামলার অপর আসামিরা হলেন তারেক রহমানের বন্ধু বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া (সিলভার সেলিম), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটি তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
চার্জশিটের বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট নি¤œ আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে। ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল ডিচার্জ করে স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ অভিযোগে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে মামলাটি করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/৩মার্চ/মোআ)