‘র্যাগিং’ অভিযোগে লঘু পাপে গুরুদণ্ড!
গত সোমবারের (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঘটনা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৭তম আবর্তনের ২৫ জন শিক্ষার্থী গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে। তারা কথা বলতে একই বিভাগের ৪৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদেরও সেখানে নিয়ে যান। কথা বলার একপর্যায়ে প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থিত হলে ৪৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা মাঠ থেকে চলে আসেন।
কিন্তু সামান্য এ ঘটনাটিই প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে গড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট পর্যন্ত। ৪৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের ওপর ‘শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে’ এমন অভিযোগে প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করে প্রক্টরিয়াল টিম। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুই ছাত্রীসহ সাতজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একটি জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং শিক্ষার্থীরা বলছেন, নির্যাতনের মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
রোববার বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে অধিকতর তদন্তে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত ৪৭তম আবর্তনের ২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৯ জনের বিপরীতে প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করেন প্রক্টরিয়াল টিম। যার মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে ‘সরাসরি জড়িত থাকা’ এবং ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘সহযোগিতা’র অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তারা কি উদ্দেশ্যে সেখানে নিয়ে গেছে, সেটা বড় বিষয় নয়। নবীন শিক্ষার্থীদের নির্জন বা দূরের কোনো স্থানে নেওয়াই হলো অপরাধ। যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগেই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে। এই অপরাধে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।’
সেখানে কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, ‘নির্যাতনের বিষয়টি নয়, বরং দূরে-নির্জন স্থানে নেওয়ায় শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’
ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর অভিযোগ, সেখানে র্যাগিং এর কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ঘটনাস্থলে প্রক্টর তাদের (দুই ছাত্রী) ডাক দেন। কিন্তু তারা প্রক্টরকে চিনতে না পারায় তার ডাকে সাড়া না দিয়ে রিকশা নিয়ে হলে চলে যান। শুধুমাত্র এ কারণেই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
এক ছাত্র জানান, তিনি ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। প্রক্টরিয়াল টিম আসার খবর পেয়ে সেখানে যান। পরে তিনি জানতে পারেন, তাকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত অন্য চারজন শিক্ষার্থীও বলেন, ‘র্যাগ বা কোনো ধরনের নির্যাতন করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা শুধুমাত্র তাদের সঙ্গে কথা বলতে সেখানে গিয়েছিলাম।’
(ঢাকাটাইমস/০৩মার্চ/প্রতিবেদক/এআর)