লুটের টাকায় কারাবন্দি জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা!

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০১৯, ১৪:০৫ | আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯, ১৬:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বিভিন্ন ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি করে সেই অর্থ দিয়ে কারাবন্দি জঙ্গি নেতাকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিল একটি চক্র। রাজধানীতে পূবালী ব্যাংকের একটি শাখায় নিরাপত্তাকর্মীদের জিম্মি করে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। এ সময় এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ডাকাত দলের ১২ সদস্য এবং জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু অস্ত্র এবং নাশকতার সরঞ্জাম।  

সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন।

এর আগে রবিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় থেকে ডাকাতির অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ডাকাত সর্দার মোফাজ্জল হোসেন ওরফে বড় ভাই ওরফে দাদা ওরফে দাদু, জহির উদ্দিন ভূইয়া ওরফে চৌধুরী, আতিকুর রহমান, মনিরুজ্জামান ওরফে নয়ন, লাড্ডু মোল্লা, কাইয়ুম শিকদার, আলাউদ্দিন শেখ, মুন্সি খসরুজ্জামান ওরফে মেজর, জাহাঙ্গীর হাওলাদার, সুব্রত দাস, মিন্টু কর্মকার ও অলিউল্লাহ হাওলাদার ওরফে অলি।

এসময়  তাদের কাছ থেকে  দুটি ৯ এমএম পিস্তল, দুইটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, ৩৩ রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি, একটি কাটার, তিনটি হেক্সো ব্লেড, একটি স্লাই রেঞ্জ, দুইটি প্লাস, দুইটি স্ক্রু ড্রাইভার, একটি স্কচ টেপ, পাঁচটি কালো কাপড়ের মুখোশ, একটি ছোড়া ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ উদ্ধার করা হয়।

ডিএমপির গোয়েন্দা অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ব্যাংক ডাকাতি প্রস্তুতিকালে ১২ ডাকাত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) দুই সদস্যকে অস্ত্র, গোলাবারুদ, নগদ টাকা ও ডাকাতির সরঞ্জমাদিসহ গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ধোলাইপাড় মোড়ে পূবালী ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীদের জিম্মি করে ডাকাতি করার জন্য পিকআপ গাড়ি ও অস্ত্রশস্ত্রসহ সেখানে সমবেত হয়েছিল। এর আগেও তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি করেছে। গত ১৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানিতে ডাকাতি চেষ্টাকালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। ওই ঘটনায় পুলিশের এক সদস্য বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আগেও  তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেলও খেটেছে।

হরকাতুল জিহাদের দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ডিএমপির এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত দলের সদস্য আতিকুর রহমান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তার রামপুরার বাসায় আরও আগ্নেয়াস্ত্র আছে। এমন তথ্য পেয়ে আতিককে নিয়ে তার রামপুরার বাসায় ওইদিন রাত পৌনে ১২টার দিকে অভিযান চালায় ডিবির ডেমরা জোনাল টিম। অভিযানকালে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) দুই সক্রিয় সদস্য হাফিজ ওরফে খালিদ ওরফে ইব্রাহিম গাজী ও মামুনুর রশিদ ওরফে বাচ্চু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি একে .২২ বোরের রাইফেল, একটি পাইপ গান, আট রাউন্ড গুলি, জিহাদি বই, ১০ কেজি গান পাউডার ও সাড়ে তিন লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারতকৃতদের বরাত দিয়ে আবদুল বাতেন বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি উজ্জ্বলের নির্দেশে হুজি সংগঠন পরিচালনা করার লক্ষ্যে তারা এই সমস্ত উদ্ধারকৃত মালামাল হেফাজতে রেখেছিল। তারা কাশিমপুর কারাগারে অবস্থানরত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উজ্জ্বলকে যেকোনো উপায়ে মুক্ত করার পরিকল্পনা করে। তাদের সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্যান্য সহযোগীরা মিলে বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে লুট করা টাকার ৩০ শতাংশ টাকা সংগঠনের কাজে ব্যয় করে।

তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় দুইটি ও রামপুরা থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ।

(ঢাকাটাইমস/০৪মার্চ/এএ/জেবি)