দিনে অন্য পেশা, রাতে ডাকাতি

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০১৯, ১৬:১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় সন্ধ্যায় চলাচল করা গাড়ির গ্লাসে ডিম ছুড়ে সেই গাড়িতে ডাকাতি করত একটি চক্র। সেখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের টার্গেট করে চলত এই ডাকাতি। চক্রের সদস্যরা দিনে বিভিন্ন পেশায় জড়িত থাকলেও রাতে ডাকাতি করত।

রবিবার রাতে এই চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা হলো- আসলাম আলম স্বাধীন, আশরাফুল ইসলাম সনি, রবিন, শামীম ইসলাম, নাজমুল হাসান, নিজাম উদ্দিন অপু, মিজানুর রহমান, তাইমুল ইসলাম ও মামুন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি দেশীয় তৈরি বন্দুক, দুই রাউন্ড কার্তুজ, দুটি  চাপাতি।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল  সারওয়ার-বিন-কাশেম।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক জানান, দিয়াবাড়ী এলাকায় বেড়াতে আসা সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেওয়া হতো। তাদের অন্যতম টার্গেট থাকত উত্তরা থেকে মিরপুরগামী প্রাইভেটকার। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা এই সড়কে ওঁৎ পেতে থাকত। রাস্তায় গাড়ি দেখা মাত্রই গতিরোধ করে রাস্তার কাজ চলছে; বিকল্প নির্জন পথ দেখিয়ে দিত। তাদের অন্য সদস্যরা সেখানে প্রস্তুত থাকত। চলন্ত গাড়ি থামানোর জন্য রশি ও সড়কে গাছের গুঁড়ি রেখে সেখানে বেড়িকেড দিয়ে ডাকাতি করা হতো।

‘তারা চলন্ত গাড়িতে পেছন থেকে পাথর ছুড়তো। যাতে চালক গাড়ি থামায়। কখনো রাস্তার উপর দামি মোবাইল ফোন ফেলে রেখে চালককে গাড়ি থামাতে প্রলুব্ধ করতো। তাতেও গাড়ি থামাতে ব্যর্থ হলে চলন্ত গাড়ির সামনের কাচে ডিম ছুড়ে মারত। কাচে ডিমের আবরণ পড়ে গেলে চালক গাড়ি থামাতে বাধ্য হতো। এই সুযোগে তারা আরোহীদের ওপর হামলা করে মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিত। অনেক সময় শারীরিক নির্যাতনও করা হতো।’

পড়াশোনা বাদ দিয়ে ডাকাতি

এই চক্রের প্রধান আসলাম আলম স্বাধীন। ২০১০ সালে মুন্নু টেক্সটাইল মিল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। রাজধানীর উত্তরখানের বালুরমাঠ এলাকায় তার একটি চায়ের দোকান রয়েছে। পাশাপাশি তিনি মাদক ব্যবসা, ডাকাতি করেন। তার দলে ১৫ জনের মতো সদস্য রয়েছে। যারা দিয়াবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় ডাকাতি করে থাকে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর আবার জামিনে বেরিয়ে ডাকাতি শুরু করেন স্বাধীন।

গ্রেপ্তার হওয়া আরেক আসামি আশরাফুল ইসলাম। তিনি উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পরে ২০১০ সালে উত্তরার একটি বায়িং হাউজে চাকরি নেন। সাত মাস চাকরির পর ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন। সঙ্গে উত্তরা ও দিয়াবাড়ি এলাকায় ডাকাতি করতেন।

শামীম ইসলাম রাজউক উত্তরা আইডিয়াল স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিন এই চক্রে এসে ইয়াবা ব্যবসা ও ডাকাতি পেশায় জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে।

নিজাম উদ্দিন অপু ২০১৩ সালে উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন এবং ফার্মগেট এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ছয় মাস আগে চাকরি ছেড়ে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন। ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি দিয়াবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় নিয়মিত ডাকাতি করে আসছিলেন তিনি।

রবিন দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনিও বায়িং হাউজে চাকরি ছেড়ে মাদক ব্যবসায়ী ও ডাকাত দলের মূল হোতা স্বাধীনের সঙ্গে নিয়মিত ডাকাতি করতেন। ২০১৭ সালে তুরাগ থানা আটকের পর বেশ কিছু দিন কারাগারে ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০৪মার্চ/এসএস/জেবি)